যুক্তরাষ্ট্র কি সরাসরি যুক্ত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে?
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা বেড়েছে বহুগুণ। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন করে উত্তেজনা। যদিও হোয়াইট হাউস এখনো স্পষ্টভাবে জানায়নি যে তারা সরাসরি এই যুদ্ধে জড়াচ্ছে, তবে নানা পদক্ষেপ ও বক্তব্যে ইঙ্গিত মিলছে যে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণমাত্রায় প্রস্তুত।গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে উদ্দেশে করে কড়া ভাষায় বলেন, আমরা জানি তথাকথিত সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন। তিনি একটি সহজ লক্ষ্য। আমরা তাকে বের করে (হত্যা!) করব না, আপাতত নয়। খামেনিকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’-এর বার্তা দিয়ে ট্রাম্প যেহুমকির সুরে কথা বলেছেন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।অনেক বিশ্লেষকের মতে, ট্রাম্প যখন ‘আমরা’ শব্দ ব্যবহার করছেন, তখন তিনি কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইসরায়েলকেও এর অন্তর্ভুক্ত করছেন। অর্থাৎ, দুই দেশের একত্রিত অবস্থান ও সম্ভাব্য সামরিক জোটের ইঙ্গিত দিচ্ছেন।ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে আগে থেকেই ইসরায়েলের পাশেই অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান সরাসরি অভিযোগ করেছে, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে সব ধরনের সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিচ্ছে। যদিও মুখে ট্রাম্প বলছেন তিনি “শান্তি চান”, কিন্তু বারবারই ইরানকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন হামলার পথ থেকে সরে আসার জন্য।সেই সঙ্গে এ-ও জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। যদিও আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই আলাপের মূল বিষয় ছিল ইরানকে কৌশলগতভাবে মোকাবিলা।নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে চান, যুক্তরাষ্ট্র যেন সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়, যাতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা যায়। বিশেষ করে ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণুকেন্দ্র ফোরডোতে যুক্তরাষ্ট্র যেন বোমা বর্ষণ করে- এমন আহ্বান জানিয়েছেন নেতানিয়াহু, কারণ ইসরায়েলের নিজস্ব যুদ্ধবিমানের সীমাবদ্ধতার কারণে এমন হামলা চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লিখেছেন, ইরান ‘অতিরিক্ত মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ’ করেছে, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির লক্ষণ এবং এটি বন্ধ করতে হলে ‘আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন’। তার মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, সামরিক হস্তক্ষেপকে আর উড়িয়ে দিচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন।গুরুত্বপূর্ণভাবে, মঙ্গলবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয়, তাহলে ইরান পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর পাল্টা হামলা চালাতে প্রস্তুত। এর মধ্যে রয়েছে ইরাকে, সিরিয়ায় এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের মার্কিন সামরিক স্থাপনাগুলো।তেহরান ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে যদি যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে সরাসরি জড়ায়, তবে ইরান তার সমর্থিত বাহিনী যেমন- হুথি, হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দেবে মার্কিন ঘাঁটি ও যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে। এমনকি হরমুজ প্রণালীতে খনন (মাইনিং) শুরু করার প্রস্তুতির কথাও উঠে এসেছে।প্রসঙ্গত, খামেনেই তার একাধিক এক্স পোস্টে যুদ্ধ ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী সরকার বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, আমাদের অবশ্যই কঠোর জবাব দিতে হবে। কোনো ইহুদিবাদীর প্রতি দয়া দেখানো হবে না। সবমিলিয়ে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আগুনে পেট্রোল ঢালার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কবে, কীভাবে সরাসরি অংশ নেয় সেই প্রশ্ন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তবে যে ভাষায় ও গতিতে ঘটনাগুলো এগোচ্ছে, তা বিশ্ব রাজনীতির জন্য এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিতও হতে পারে।ভোরের আকাশ/এসএইচ