এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫ ০৪:০৫ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
কক্সবাজার সমুদ্র তীরে ভাঙনরোধে নেই উদ্যোগ
ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলছে। পাউবোর দেওয়া বালুর বাঁধের কারণে সৈকতের ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। সৈকতের একদিকে বালুর বাঁধ দিলে, অন্যদিকে দ্রুতই ভাঙন দেখা দিচ্ছে। তা ছাড়া জিওব্যাগ ভর্তি ওই সব বালুর বাঁধও টেকসই হচ্ছে না
স্থানীয়রা জানান, সমুদ্র সৈকতে ভাঙন একটি গুরুতর সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। যা পর্যটন এবং পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে দিনদিন ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সৈকতে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গেল একদশক ধরে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জিও ব্যাগ স্থাপন করলেও তা কাজেই আসছে না। নতুন করে শুরু হওয়া ভাঙনে উজাড় হচ্ছে ঝাউগাছ।
সৈকতের লাবণি বিচ, নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন বিভিন্ন অংশে নতুন করে দেখা দিয়েছে এই ভাঙন। উত্তাল সমুদ্রে ঢেউ ও জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক সপ্তাহে ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার ঝাউগাছ।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, গত ৫০-৬০ বছরে বালিয়াড়িতে এমন ভাঙনের নজির নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত বালুভর্তি জিওব্যাগের বাঁধের কারণে সৈকতের আরও অংশ ভেঙে যাচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ ও স্রোতধারা স্বাভাবিক নিয়মে চলে, বাধার সৃষ্টি হলে চালায় তাণ্ডব।
সরেজমিনে সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় বেড়ে তীরে আছড়ে পড়ছে। প্রচণ্ড ঢেউয়ে জিও ব্যাগগুলোর অধিকাংশই ছিঁড়ে গেছে। জিও ব্যাগ ছাড়িয়ে একে একে উপড়ে পড়ছে ঝাউগাছ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে লাবণি পয়েন্ট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরি করা হবে। এ প্রকল্প হলে ভাঙন রোধের পাশাপাশি ঝাউবন ও বালিয়াড়ি রক্ষা পাবে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, গেলো এক মাসে বড় আকারে প্রায় আড়াই'শ এবং কয়েক হাজার ছোট ঝাউ চারা উপড়ে গেছে। যা সমুদ্রের পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্যে বিপদজনক।
সৈকতের ভাঙন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তিকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, বালুর বাঁধ দিয়ে সমুদ্র শাসন কিংবা ভাঙন রোধ করা মোটেও সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। ভাঙন রোধে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে ভবিষ্যতে এ ভাঙন আরও তীব্র হতে পারে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ভাঙন বেশি হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬১-৬২ সালে সৈকতের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে প্রথম ঝাউগাছের চারা রোপণ করে বনবিভাগ। এরপর ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ঝাউ বাগানের আয়তন বাড়ানো হয়। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল, লাবণী, কলাতলী, উখিয়ার ইনানী, সোনারপাড়া, টেকনাফের বাহারছড়া, মহেশখালীয়াপাড়া, সাবরাং উপকূলের প্রায় ৫০০ হেক্টর বালিয়াড়িতে সাড়ে ১২ লাখ ঝাউগাছের চারা রোপণ করা হয়। গত ১০ বছরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ৭ লাখের বেশি ঝাউগাছ।
ভোরের আকাশ/জাআ