সংগৃহীত ছবি
গ্রামবাংলার পরিচিত ফল দেশি খেজুর। গ্রামের ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠা যেসব গ্রামীণ ফল খেয়ে; তার মধ্যে খেজুর অন্যতম। সাধারণত খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করার পর গাছে ফুল ধরে। সবুজ রঙের ফল হয়। পরে হালকা হলুদাভ রং থেকে পরিপক্ব হওয়ার সময়ে গাঢ় কমলা রং ধারণ করে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এ ফল পাকা শুরু করে। তখন গাছের তলায় ঝরে পড়ে। লোকজন গাছের তলা থেকে প্রথমদিকে খেজুর সংগ্রহ করে। এছাড়া পাখির আনাগোনা শুরু হয়। পাখিতে প্রচুর পরিমাণে খেজুর খেয়ে থাকে।
একটি খেজুর গাছে ৫-৭টি ছড়া বা তার বেশিও ছড়া হয়ে থাকে। কখনো কখনো এর কমও হতে পারে। কিছু খেজুর আষাঢ় মাসের দিকে পাকা শুরু করে। শ্রাবণ মাস পর্যন্তও এ খেজুর পাওয়া যায়। গাছের তলা থেকে সংগ্রহ করা ছাড়াও মানুষজন ছড়া কেটে কলা পাতায় পেঁচিয়ে পানিতে বা পুকুরে একদিন ডুবিয়ে রাখে। যাকে আঞ্চলিক ভাষায় ‘জাগ দেওয়া’ বলে।
গাছ থেকে ছড়া কেটে ঘরে রেখে দিলেও ২-৩ দিনের মধ্যে পেকে যায়। পাকলে এ ফল অত্যন্ত মিষ্টি হয়। মেরুণ রং ধারণ করে। ফলের ওপরে পলিথিনের মতো পাতলা আবরণ এবং ভেতরে নরম বেলে বেলে শ্বাস হয়। ফলের বীজ বেশ লম্বা হয়। বরিশাল অঞ্চলে খেজুরের সাথে মুড়ি দিয়ে মোয়াও তৈরি করা হয় ঘরোয়াভাবে। যখন এ ফল কাঁচা সবুজ রঙের থাকে; তখন গ্রামের ছেলেমেয়েরা ফলের বীজ দিয়ে গুটি নামক খেলা খেলে মাটিতে ঘর কেটে। এছাড়া কাঁচা ফলও কেউ কেউ মুখে রেখে চিবায়। যার স্বাদ কষযুক্ত। বীজগুলো তখন নরম হয়। চিবালে কটকট করে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, খেজুরে ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন, বিটা-ক্যারোটিন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে। হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং মানবদেহে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। এছাড়া খেজুর হজমবর্ধক। পাকস্থলি ও যকৃতের শক্তি বাড়াতে সহায়ক। শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য খেজুর বেশ কার্যকর।
এ গাছের মাতি বা মাথি অত্যন্ত সুস্বাদু। শহরাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায় না। উপকূলীয় অঞ্চলে মাটি ক্ষয়রোধের জন্য এ গাছরোপণ করা হয়। তবে অধিকাংশ গাছরোপণ ছাড়াই হয় পাখির মাধ্যমে। দুঃখের বিষয়, এখন এ গাছ খুব একটা দেখা যায় না। গাছের রোপণ কমে গেছে। প্রকৃতিতে পাখি কমে যাওয়ার কারণেও বিলুপ্ত প্রায় খেজুর গাছ।
দেশীয় খেজুর গাছ থেকে প্রচুর রস আহরণ করা হয়। পরে তা দিয়ে গুঁড় তৈরি হয়। মৌসুমে খেজুর তো আছেই। খেজুর, রস ও গুঁড়ের ঘাটতি হচ্ছে এ গাছ কমার কারণে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ ফল সম্পর্কে এখন ধারণা রাখে না বললেই চলে। জাতীয় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে খেজুর গাছরোপণ বাড়ানো উচিত। তাতে আমরা ফিরে পাবো আমাদের দেশীয় ফল এবং গ্রামীণ স্মৃতি। সেইসাথে দেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
গ্রামবাংলার পরিচিত ফল দেশি খেজুর। গ্রামের ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠা যেসব গ্রামীণ ফল খেয়ে; তার মধ্যে খেজুর অন্যতম। সাধারণত খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করার পর গাছে ফুল ধরে। সবুজ রঙের ফল হয়। পরে হালকা হলুদাভ রং থেকে পরিপক্ব হওয়ার সময়ে গাঢ় কমলা রং ধারণ করে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এ ফল পাকা শুরু করে। তখন গাছের তলায় ঝরে পড়ে। লোকজন গাছের তলা থেকে প্রথমদিকে খেজুর সংগ্রহ করে। এছাড়া পাখির আনাগোনা শুরু হয়। পাখিতে প্রচুর পরিমাণে খেজুর খেয়ে থাকে।একটি খেজুর গাছে ৫-৭টি ছড়া বা তার বেশিও ছড়া হয়ে থাকে। কখনো কখনো এর কমও হতে পারে। কিছু খেজুর আষাঢ় মাসের দিকে পাকা শুরু করে। শ্রাবণ মাস পর্যন্তও এ খেজুর পাওয়া যায়। গাছের তলা থেকে সংগ্রহ করা ছাড়াও মানুষজন ছড়া কেটে কলা পাতায় পেঁচিয়ে পানিতে বা পুকুরে একদিন ডুবিয়ে রাখে। যাকে আঞ্চলিক ভাষায় ‘জাগ দেওয়া’ বলে।গাছ থেকে ছড়া কেটে ঘরে রেখে দিলেও ২-৩ দিনের মধ্যে পেকে যায়। পাকলে এ ফল অত্যন্ত মিষ্টি হয়। মেরুণ রং ধারণ করে। ফলের ওপরে পলিথিনের মতো পাতলা আবরণ এবং ভেতরে নরম বেলে বেলে শ্বাস হয়। ফলের বীজ বেশ লম্বা হয়। বরিশাল অঞ্চলে খেজুরের সাথে মুড়ি দিয়ে মোয়াও তৈরি করা হয় ঘরোয়াভাবে। যখন এ ফল কাঁচা সবুজ রঙের থাকে; তখন গ্রামের ছেলেমেয়েরা ফলের বীজ দিয়ে গুটি নামক খেলা খেলে মাটিতে ঘর কেটে। এছাড়া কাঁচা ফলও কেউ কেউ মুখে রেখে চিবায়। যার স্বাদ কষযুক্ত। বীজগুলো তখন নরম হয়। চিবালে কটকট করে।বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, খেজুরে ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন, বিটা-ক্যারোটিন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে। হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং মানবদেহে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। এছাড়া খেজুর হজমবর্ধক। পাকস্থলি ও যকৃতের শক্তি বাড়াতে সহায়ক। শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য খেজুর বেশ কার্যকর।এ গাছের মাতি বা মাথি অত্যন্ত সুস্বাদু। শহরাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায় না। উপকূলীয় অঞ্চলে মাটি ক্ষয়রোধের জন্য এ গাছরোপণ করা হয়। তবে অধিকাংশ গাছরোপণ ছাড়াই হয় পাখির মাধ্যমে। দুঃখের বিষয়, এখন এ গাছ খুব একটা দেখা যায় না। গাছের রোপণ কমে গেছে। প্রকৃতিতে পাখি কমে যাওয়ার কারণেও বিলুপ্ত প্রায় খেজুর গাছ।দেশীয় খেজুর গাছ থেকে প্রচুর রস আহরণ করা হয়। পরে তা দিয়ে গুঁড় তৈরি হয়। মৌসুমে খেজুর তো আছেই। খেজুর, রস ও গুঁড়ের ঘাটতি হচ্ছে এ গাছ কমার কারণে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ ফল সম্পর্কে এখন ধারণা রাখে না বললেই চলে। জাতীয় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে খেজুর গাছরোপণ বাড়ানো উচিত। তাতে আমরা ফিরে পাবো আমাদের দেশীয় ফল এবং গ্রামীণ স্মৃতি। সেইসাথে দেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
‘ছাই লাগবে, ছাই!’ এভাবে প্রতিদিন ফেরি করে বেড়ান এক নারী। নাম তার শেলীনা। বয়স প্রায় পঞ্চাশ। শাড়ির আঁচলে মুজে যাওয়া ছাই মুছতে মুছতে হাঁটেন শহরের অলিগলি ঘুরে। কেউ তাকে ডাকেন ‘ছাইওয়ালি’, কেউ আবার স্নেহে ‘ শেলীনা আপা’। কিন্তু তার পরিচয়টা এর চেয়েও বড় তিনি একজন সংগ্রামী নারী। কারণ, এই ছাই-ই তার অস্তিত্বের সঙ্গী, সন্তানদের বেঁচে থাকার ভরসা, তার নিজস্ব পৃথিবীর সোনার খনি।ভোরের আগে ঘুম ভাঙে শেলীনার। শাহবাগ থেকে পাইকারি দামে ছাই এনে সকাল সকাল গলিতে গলিতে বিক্রি করতে বের হন। ৫২০ টাকা দরে এক বস্তা ছাই কিনতে হয় তাকে। সেই ছাই ছোট ছোট ভাগে ৫০ বা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। সারাদিনে বিক্রি কোনো দিন ৩০০, কোনো দিন ৩৫০ টাকা। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়। শহরের আনাচকানাচে ছাই নিয়ে হাঁটেন শেলীনা।‘ছাই লাগবে, ছাই’ এই চিৎকারে মিশে থাকে তাঁর দিনের শেষ রুটি, মেয়ের ওষুধের খরচ, এক চিমটি লবণ, এক মুঠো চালের দানার স্বপ্ন। শহরের বহুতল দালানের গৃহকর্মীরা তার প্রধান ক্রেতা। কেউ বাসন মাজতে, কেউ গাছের গোড়ায় ছাই ব্যবহার করেন। কারও কাছে ছাই স্রেফ ময়লা, কারও কাছে অমূল্য সঙ্গী। শেলীনার কাছে সেটা বাঁচার অক্সিজেন।‘এক বস্তা কিনি ৫২০ টাকায়, বিক্রি কইরা দিনে ৩০০-৩৫০ টেকা রোজগার হয়। এই টাকায় ভাড়া দিই, চাল, ডাল কিনি, মাইয়ার চিকিৎসা চলে,’ বলেন শেলীনা। কথায় কঠোরতা আছে, চোখে জলের রেখা। শেলীনা জানেন না এর বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা, জানেন শুধু, ছাই মানে টাকা, এটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় সত্য।এই পেশা বেছে নেয়া প্রসঙ্গে শেলীনা বলেন, বাসাবাড়িতে কাজ না করে ছাই বিক্রিকে বেছে নিয়েছেন মূলত আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার কারণে। অন্যের বাড়িতে কাজ করলে সেখানকার শর্ত, সন্দেহ, বকাঝকা মেনে নিতে হয়, যা তার জন্য মানসিকভাবে খুবই কঠিন।শেলীনার ভাষায়, ‘মাইয়া প্রতিবন্ধী, স্বামীর অবস্থা ভালো না, কেউ ওসব বোঝে না। এই ছাই বিক্রি করি, নিজের মতো চলি। দিন শেষে নগদ টেকা হাতে পাই, ওই টেকা দিয়া চাউল-ডাল কিনি, মাইয়ার ওষুধ কিনি। বাসার কামে গেলে মাসের শেষে টেকা দেয়, তত দিনে চুলায় আগুনও জ্বলে না, মাইয়ারে ভাতও খাওয়াইতে পারি না। যত দিন বাঁচুম, কারও দরজায় দাঁড়ায়া কাজ চামু না। এইটুকু আত্মসম্মান তো মাইনষের থাকন লাগে, তাই না আপা?’শেলীনার মেয়ে রুবিনা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার চিকিৎসায় প্রতিদিনই লাগে টাকা। স্বামী আছেন, কিন্তু তিনিও কাজে অক্ষম। সংসারের পুরো ভার শেলীনার কাঁধে। থাকেন বস্তিতে, ভাড়া মাসে ৪ হাজার ৩০০ টাকা। একদিন কাজ বন্ধ মানেই চুলা নিভে যাওয়া। শেলীনার মনে একটাই স্বপ্ন, মেয়েটার যেন ঠিকমতো চিকিৎসা হয়।শহরের যান্ত্রিক চাহিদার ভিড়ে শেলীনার মতো মানুষেরা অদৃশ্য। তাদের না আছে পত্রিকার হেডলাইন, না আছে কোনো ফেসবুক পোস্টে ‘নেত্রী’ হওয়ার গল্প। তারা বাঁচেন নিঃশব্দে, যুদ্ধ করেন নীরবে। তবু তাঁদের হাতেই টিকে আছে অগণিত সংসার, অগণিত স্বপ্ন। নারীর শ্রমের স্বীকৃতি কোথায়? ছাই কুড়িয়ে বা বিক্রি করে বাঁচা শেলীনার শ্রমও শ্রম। কিন্তু সেই শ্রমের কোনো তালিকাভুক্ত বেতন নেই, নেই কোনো নিরাপত্তা। তবু তিনি থামেন না।শেলীনা বলেন, ‘দুনিয়াতে বাঁচতে হইলে নিজের পায়ে দাঁড়াইতে হয়। ছাই বিক্রি কইরা হোক বা অন্য কিছু কইরা, আমি কারও কাছে হাত পাতি না। এইটুকু ইজ্জতই আমার বড় সম্বল।’ শেলীনাকে এই শহর চেনে না। যারা চেনে, তারাও হয়তো করুণার চোখে দেখে। কিন্তু শেলীনা চান না করুণা, চান সম্মান। তার কাছে জীবনের মানে হলো টিকে থাকা, নিজের শক্তিতে দাঁড়ানো। ছাই বিক্রি করে হোক কিংবা অন্য কোনো পেশায়, নিজের মতো করে লড়াই চালিয়ে যাওয়া।শেলীনার মতো কত শত নারী আছেন, যাঁরা প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভাঙার আগেই ঘর ছাড়েন। কেউ রাস্তায় ঝাঁট দেন, কেউ ইটভাঙা কারখানায় দিন কাটান, কেউবা শেলীনার মতো ছাই বিক্রি করে সংসার চালান। সবারই লক্ষ্য এক, মুখে আহার আর সন্তানদের জন্য ভালো ভবিষ্যৎ।তাদের গল্পগুলো শোনার মতো কান আমাদের খুব কমই আছে। অথচ তারা কোনো দিন হেরে যেতে শিখেননি। ছাইয়ের ধুলোয় মাখা শেলীনার হাতের রেখায় লেখা আছে মেয়ের সুস্থ হওয়ার গল্প, লেখা আছে তার নিজস্ব বিজয়ের ইতিহাস। এই গল্পগুলো হয়তো কোনো দিন পত্রিকার প্রথম পাতায় আসবে না, তবু এই গল্পগুলোই আসল গল্প অন্তরের গল্প।ভোরের আকাশ/এসএইচ
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের তৈরী ছোট বড় নৌকা (কোষা) মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঠ মিস্ত্রিরা। মাদারীপুরের শিবচরে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এসকল দিন মজুরেরা। এসব খেটে খাওয়া মানুষেরা বর্ষা মৌসুম ছাড়াও অন্য পেশায় শ্রম দিয়ে থাকেন। বর্ষা মৌসুমের আগেই তারা বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় নৌকা বা ‘কোষা’ তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন।শিবচর নদী বিধৌত এলাকা হলেও নদী শাসনের ফলে পানি প্রবেশের দ্বার দিয়ে চাহিদা পরিমাণ বর্ষার মৌসুমে জোয়ারের পানি ডুকছে না। পানি না থাকায় নৌকার চাহিদা কম,তবুও নৌকার দাম বাড়তি।বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে উপজেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ঘুরে এসব নৌকা তৈরীর কারিগরদের নৌকা বানাতে ব্যস্ত দেখা যায়,উপজেলার কাঁওড়াকান্দি পুরাতন ফেরিঘাট, চরজানাজাত, মাদবরেরচর হাটের পদ্মাপাড়ে, আড়য়াল খা নদীর পাড়, উতরাইল, চর শ্যামাইল, শেখপুর বাজার, পাঁচ্চর, উপশহর এলাকায়সহ শিবচরের বেশ কিছু জায়গায় এই নৌকা মেরামতে কর্ম ব্যস্ত দেখা যায় সাধারণ দিন মজুরদের। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এসব কোষা বানিয়ে আয় রোজগার করছে সাধারণ কাঠ মিস্ত্রীরা।স্হানীয় লোকজন বলেন, আজকাল দেশের অনেক অঞ্চলেই সেই ৯০ দশকের মত পানি তেমন বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না বিধায় নৌকার প্রচলন দিন দিন অনেকটাই কম দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বিল এলাকা ও নদী এলাকায় কিছু নৌকা দেখা গেলেও এসব নৌকা দিয়ে খেয়া ঘাটে সল্প পরিসরে যাত্রী পারাপার,সল্প দুরে বিল থেকে কাটা ধান,পাটসহ যে কোনো বর্ষা মৌসুমের ফসল বয়ে নেওয়ার কাজে লাগছে।এছাড়াও নদী,বিলের মাছ ধরার কাজসহ এই নৌকা ব্যবহার করছে অনেকেই। বিশেষ করে কৃষকদের কাজে বেশি ব্যবহিত করছে।আবার অনেকেই শখের বসে এই নৌকা ব্যবহার করছে।৯০ দশকের তুলনায় নৌকার চাহিদা কিছুটা কম। কারণ আগের মত জোয়ারের পানি বিভিন্ন খাল বিলে তেমর প্রবেশ করছে না। ‘পদ্মা বেড়িবাঁধ’ নদী শাসনের ফলে অনেক শাখা নদীর মুখ বন্ধ রয়েছে দেওয়া হয়েছে কালবাট।তাই চাহিদা অনুযায়ী পানি ডুকছে না। যতটুকু পানি আসে তাও বেশি দিন স্হায়ী থাকছে না। তাই দিন দিন নৌকার চাহিদা কমছে।নৌকার চাহিদা কম থাকলেও বাড়ছে নৌকার দাম।একাধিক শ্রমজীবী বলেন,এখন আর আগের মত পানি ও হয় না। পদ্মা বেড়িবাঁধের কারনণ বিভিন্ন খাল,বিলে পানি ডুকছে না। পানির অভাবে নৌকার চাহিদা কম। তবুও আমরা পেটের দায়ে রোজ মায়না হিসাবে কাজ করছি।কাজের মজুরী হিসাবে রোজ ৮ থেকে ১২ শত টাকা মায়না পাই।কোন মতে দিনকাল পার করছি। বর্ষার মৌসুম ছাড়া কাম কম থাকে। তখন ঘর বাঁধার কাজ করে থাকি। এসব নৌকা তৈরী করতে অনেক পরিশ্রম হয়।এসব নৌকা তৈরী করতে বিভিন্ন গাছের কাঠ,লোহার পেরাক,পাতাম,বিট ফোম,আলকাতরা,ধুপ কাঠের আঠাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নৌকা বানিয়ে থাকি।সাধারণত একটি নৌকা মেরামত করতে আমাদের কমপক্ষে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে।বিভিন্ন নকশি আকারে এই নৌকা বানিয়ে থাকি।দাম বৃদ্ধির এব্যাপারে মহাদেব নামে এক মহাজন বলেন, প্রতিবছর আমরা নৌকা তৈরী করে থাকি।তবে বর্ষা মৌসুমে আষাঢ়,শ্রাবণ,ভাদ্র এই তিন মাসে আমরা নৌকা তৈরীতে একটু বেশি ব্যস্ত থাকি।ছোট,বড় ও মাঝারি ধরতেন কোষা বানিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রী করছি। গাছ ও মজুরীর দামের উপর ভিত্তি করে নৌকার দামের তারতম্য হয়।এছাড়াও কি কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরী করছি,সেটার উপর বিবেচনা করে দাম কম বেশি নিয়ে থাকি।নৌকার দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে দিলীপ বাবু বলেন,সাধারণত চাম্বুল গাছের নৌকার দাম সবচেয়ে কম,চাম্বুল গাছের ৮ হাতের একটি নৌকা ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা কঁড়াই গাছের ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা এবং মেহেগুনী গাছের একই হাতের একটি নৌকা ৫ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।এছাড়াও পরি সূত্র দর বলেন, ১০ হাত একটি নৌকা ভালো কাঠের ৯ হাজার,১১ হাতের একটি নৌকা ১০ হাজার এবং ১২ হাতের একটি নৌকা ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রী হয়ে থাকে।এসব নৌকা খুচরা হিসাবে বাজারে আরো কম বা বাড়তি দামেও বিক্রি করে থাকি।ভোরের আকাশ/আজাসা
তালপাতায় বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা বাতাসে দুলে-দুলে গভীর মুগ্ধতা ছড়িয়ে আদিকাল থেকেই তালগাছ বাড়িয়ে আসছে সীতাকুণ্ডের গ্রাম-বাংলার শোভা ও ঐতিহ্য। আর চিরকাল ধরেই তালগাছ বজ্রপাতজনিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতে সীতাকুণ্ডবাসিকে রক্ষা করে আসছে। এ উপজেলায় পরিবেশবান্ধব তালগাছের বিলুপ্ততায় বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত মৃত্যূঝুঁকি। ৯টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে গঠিত সীতাকুণ্ড উপজেলায় রয়েছে ১২০টি গ্রাম। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠা ব্যাপক শিল্প-কারখানায় তালগাছের নিবিড় বনায়নে মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব পড়লেও সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড পৌর সদর, মুরাদপুর, বাঁশবাড়ীয়া ও কুমিরায় আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি-সারি তালগাছের সেই নিবিড় বনায়ন এখন শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি। বজ্রপাত থেকে রক্ষায় উঁচু তালগাছের কোন বিকল্প নেই। উন্নত জাতের তালগাছ লম্বায় সত্তর থেকে আশি ফুট পর্যন্ত হয়। এ গাছের জীবনকাল প্রায় একশত থেকে একশত পঞ্চাশ বছর। তালগাছ হারিয়ে যাওয়ায় উপজেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুহানি। রেহাই পাচ্ছে না পশু-পাখিও। গত আষাঢ়ে ১নং সৈয়দপুরের মহানগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো, মাসুদের ৩টি গরু বজ্রপাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় মারাত্বক হতাশা নেমে আসে সীতাকুণ্ডের কৃষক পরিবারে। গত বর্ষায় বজ্রপাতে ৭নং কুমিরা ইউনিয়নস্থ কাজীপাড়ায় দরিদ্র কৃষক মো. হাশেমের ৩টি ও মুরাদপুর, সৈয়দপুরে আরো ৪টি গরু এবং ১টি মহিষের মৃত্যূতে কৃষক পরিবারে বাড়ছে আহাজারি। ৬নং বাশঁবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ছালামত উল্লাহ সালাম জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারি ভাবে তালগাছ রোপনের উদ্যোগে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো উপজেলায় হারিয়ে যাওয়া তালগাছের পুনঃ বনায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমুদ্র-পাহাড়ে অপরূপ উপজেলার প্রকৃতির জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বাড়ীর আঙ্গিনার পাশে, রাস্তার ধারে, বেড়ীবাঁধ, অনাবাদি কিংবা পতিত জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালগাছ রোপনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পৌরসভার পন্থিছিলার বাসিন্দা চট্টগ্রাম জজ আদালতের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মোঃ জহির উদ্দিন বাবর জানান, প্রাচীনকাল থেকেই তালগাছ তার রস, ফল ও বীজের শাঁস দিয়ে ভোজনরসিক সীতাকুণ্ডবাসীর রসনাবিলাস করে আসছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এস. এম সাইফুল আলম জানান, তালে রয়েছে ভিটামিন এ.বি ও সি, রয়েছে জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সহ অনেক খনিজ উপাদান। তালের রস দিয়ে গুড়, পাটালি, মিছরি, পায়েস এবং তাড়িসহ ইত্যাদি তৈরি করা হয়।সীতাকুণ্ডে জৈষ্ঠ্য-আষাঢ়ে কাঁচা তালের শাঁস খাওয়ার জন্য গ্রাম বাংলায় চারিদিকে হৈ-চৈ পড়ে যায়। শ্রাবণ মাসে পাকা তালের হলুদ রসে তালের পিঠা, তালের রুটি, তালসত্ব এবং তালের বড়াসহ আরো কতো বাহারি রকম পিঠা স্বাদে-গন্ধে কদর দেশব্যাপী আদি ও অকৃত্রিম। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় সমাধান, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি, সু-স্বাস্থ্য রক্ষা, হজম শক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠ্য-কাঠিন্য দুর, হাড়কে শক্তিশালী করাসহ পাকা তালের রসে রয়েছে বহু পুষ্টিগুন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য হতে রক্ষা করা ছাড়াও তালপাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, চাটাই, মাদুর, আঁকার পট, পুতুল, বিভিন্ন কুটির শিল্প ও হাতপাখা তৈরিতে রয়েছে অপরিসীম ভূমিকা। আর তালের কান্ড দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের খুঁটি, ভেলা ও নৌকা। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. কমল কদর জানান, তালগাছ অন্যতম পরিবেশবান্ধব, জনপ্রিয়, ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষাকারী পরমবন্ধু। এক সময় গ্রাম-বাংলার অধিকাংশ বাড়ী-ঘর, রাস্তার দু-পাশ, পুকুরপাড়, বেড়িবাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর তালগাছ ছিল। তখন দুর থেকে কোন বাড়ী বা স্থান চেনাতে তালগাছের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সেই দিন আর নেই। কালের পরিক্রমায় আজ হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ঐতিহ্যবাহী তালগাছ। তালগাছের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে পাতায় বাসা তৈরি করে অবস্থান করা হাজার হাজার বাবুই পাখির কিচির-মিচির ডাকের মনোরম দৃশ্য।ভোরের আকাশ/আজাসা