× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শ্রাবণ দিনের শুভ্র কেয়া

ভোরের আকাশ ডেস্ক

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫ ০৩:০৩ পিএম

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদ আছে, বর্ষায় কেয়া ফুল না ফুটলে নাকি বর্ষাই শুরু হয় না। বর্ষায় কেয়া ফুল ফোটার প্রবাদ থাকলেও মূলত জৈষ্ঠ্যের শেষের দিকে এর দেখা মেলে। কেয়া ফুলের স্নিগ্ধতা, শুভ্রতা আর সুরভি প্রেমিকের মনে নাড়া দেয়। কেয়ার প্রেমে মজেছেন স্বয়ং কবিগুরুও। 

কবিগুরুর ভাষায়, তোমার ফাগুন দিনের বকুল চাঁপা, শ্রাবণ দিনের কেয়া, তাই দেখে ত বুঝি তোমার কেমন যে তান দেয়া। আরেক কবিতায় কবি লিখেছেন, কেতকীকেশরে কেশপাশ করো সুরভি।

বর্ষার রানি কেয়া! ঘনঘোর বর্ষাকে স্বাগত জানিয়ে প্রেমপূজারী কবি কাজী নজরুল ইসলামও গেয়ে উঠেছিলেন, ‘রিমি ঝিম্ রিমি ঝিম্ ঐ নামিল দেয়া।/ শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া...। শ্রাবণ দিনের কেয়াকে স্মরণ করে রবি ঠাকুরও লেখেন, ‘...তোমার ফাগুন দিনের বকুল চাঁপা, শ্রাবণ দিনের কেয়া,/ তাই দেখে ত বুঝি তোমার কেমন যে তান দেয়া...।’

চিরন্তন বাংলার বিরহী বর্ষাকে শুভ্রবর্ণে আর মিষ্টিঘ্রাণে মাতাল করে তোলা সেই কেয়া ফুল এখন নীরব অভিমানী। আকাশ ভেঙে জলভরা মেঘদলও আসে, ঝুমবর্ষায় ভাসে পথ-প্রান্তরও। অথচ কেয়া যেন হারিয়ে যাচ্ছে। কেয়ার উজ্জ্বল উপস্থিতি আগের মতো আর নেই। গন্ধে-বর্ণে কমতি পড়েছে। ‘কেয়া না ফুটলে কী বর্ষা হয়?’ প্রবাদটি তাই রূপ নিয়েছে তীব্র আক্ষেপে। আগে বর্ষায় নদী-খাল আর জলাশয় পাড়ে ছড়িয়ে থাকত ফুলটি।    
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী আর জলাভূমি ধ্বংস, নগরায়ণ ও অব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতির অবক্ষয়, বাণিজ্যিক ব্যবহারের অপ্রতুলতা, সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের তোড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে কেয়া।

উদ্ভব :পৃথিবীর প্রাচীনতম আদি একবীজপত্রী গাছের মধ্যে অন্যতম কেয়াগাছ। পান্ডানেসি পরিবারের ও পান্ডানুস গণের অন্তর্ভুক্ত এসব গাছের উদ্ভব ঘটেছিল প্রায় ৬ থেকে ৮ কোটি বছর আগে ক্রিটেশিয়াস যুগে। যাদের আদিভূমি ছিল প্রাচীন অতিমহাদেশ গোন্ডওয়ানা, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল আধুনিক মাদাগাস্কার, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল। পরে মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে গ্রীষ্ম ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় বিভিন্ন দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলে।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এমনভাবে অভিযোজিত হয়েছে যে, কেয়াগাছ সহজেই সমুদ্র উপকূল ও লবণাক্ত অঞ্চল সহ্য করতে সক্ষম। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রচুর কেয়া ফুল দেখা যায়। বাংলাদেশের কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সুন্দরবন ও আশপাশের ম্যানগ্রোভ অঞ্চল, কুয়াকাটার উপকূলীয় বনভূমিতে এখনো কেয়ার সৌন্দর্য চোখে পড়ে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বর্ষায় নদীতীর, ঝোপঝাড়, ভেজামাটি থেকে মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়লে বোঝা যায় কেয়া ফুটেছে।

নামকরণ :অঞ্চল ও ভাষাভেদে কেয়া ফুল বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলাদেশে কেতকি, কেওড়া, স্বর্ণকেয়া, স্বর্ণপুষ্পী, পাংশুলা বলেও ডাকা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, কন্নড়, মারাঠি, ওড়িয়া ও নেপালে কেতকী বলা হলেও তামিল ভাষায় কেয়াকে তলাই, মালয়ালমে কেইতা আর তেলেগুতে কেথকি বলা হয়। হিন্দিতে কেওড়া হলেও পাকিস্তানে বা উর্দুতে কেয়ার নাম কেতকী। শ্রীলঙ্কায় কেয়াকে বলা হয় কাদোলু। মাদাগাস্কারে ভাকোনা আর ফ্রান্সে প্যান্ডানাস ওডোরিফার। অনেক অঞ্চলে কেয়া সুগন্ধি পাইন বা পান্ডান পাম হিসেবে পরিচিত।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অনেক দেশে বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কেয়া ফুল প্যান্ডান নামেই পরিচিত। যেমন—মিয়ানমারে কেয়া পরিচিত প্যান্ডান নামে। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড আর ভিয়েতনামে বলা হয় সুগন্ধি প্যান্ডান, মালয়েশিয়ায় প্যান্ডান ওয়ানগি, সিংগাপুরে প্যান্ডান লিফ বলা হয়। আমেরিকায় কেয়া ফুলের নাম স্ক্রু পাইন। তবে সেটা পাইনগাছ নয়। কেয়ার পাতা ও শেকড়ের প্যাঁচানো আকৃতির জন্য স্ক্রু নামটি এসেছে।

পরিচিতি :কেয়া বা কেতকী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। গাছটি তিন-চার মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। কাণ্ড গোলাকার ও কাঁটাযুক্ত। কাণ্ড থেকে শাখা-প্রশাখা বের হয়। প্রতিটি কাণ্ডেই থাকে অসংখ্য বায়বীয় মূল। এসব মূল গাছকে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। কেয়ার সবুজ কাঁটাওয়ালা পাতা তিন-চার মিটার পর্যন্ত লম্বা আর পাঁচ-ছয় সেন্টিমিটার চওড়া হয়ে থাকে। শেকড় জট পাকানো।

কেয়ার ফুল ফোটে বর্ষা মৌসুমে। জুন থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। কেয়ার বেশির ভাগ ফুলই পুরুষ প্রজাতির, যার রং সাদা সুগন্ধযুক্ত। পুরুষকে বলা হয় সিত কেতকী। স্ত্রী কেয়া ফুলের রং হয় সোনালি। নিজের ঘ্রাণ দিয়েই কেয়া তার অস্তিত্ব জানান দেয়। কেয়া ফল ১৫-১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। দেখতে কমলা, পীত বা ধূসর রঙের।

কেওড়ার জল :কেয়া সুগন্ধি গাছ হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রান্নার কাজে ফুলের চেয়ে কেয়ার পাতাই বেশি ব্যবহূত হয়। বাংলার ঘরে ঘরে বিরিয়ানি রান্নায় কেওড়ার জল ছাড়া যেন চলেই না। মূলত, কেয়া ফুল থেকেই বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় কেওড়ার জল বা ‘প্যান্ডানুস ফ্লাওয়ার ওয়াটার’। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বহু দেশে কেয়া ফুল থেকে তৈরি করা কেওড়ার জলের জনপ্রিয়তা রয়েছে।

ব্যবহার :গ্রামীণ নারীরা একসময় চুলে পরতে কেয়া ফুল দিয়ে মালা তৈরি করতেন। ঘরে সুবাস আনতে সেই মালা আবার ঝুলিয়ে রাখা হতো। বিয়ে বা পূজা-পার্বণে ঘর বা মঞ্চসজ্জার কাজে এই ফুলের ব্যবহার হতো। তাছাড়া কেয়াগাছ ও ফুলের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। যদিও মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারণে কেয়াগাছ কমে যাওয়ায় সেসব ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। একসময় কেয়া ফুল দিয়ে আতর, সুগন্ধি ও ধূপ তৈরি করা হতো। তবে এসব জিনিস কৃত্রিম রাসায়নিক থেকে উত্পাদিত হওয়ায় ব্যাবসায়িকভাবে কেয়া ফুলের কদর কমে গেছে। যদিও এর নির্যাস থেকে এখনো অনেক পারফিউম কোম্পানি সুগন্ধি উত্পাদন করছে।

উপকারিতা :কেয়া ফুল আর পাতার রস অনেক উপকারী। প্রতি রাতে শোয়ার আগে কেয়া ফুলের তেল মাথায় মাখলে যেমন অনিদ্রা কেটে যায়, তেমনি খুশকিও দূর হয়। প্রতিদিন কেয়া পাতার রস খেলে হূিপণ্ডের সমস্যা ভালো উপকার পাওয়া যায়। মুখের ব্রণে লাগালেও দ্রুত সেরে যায়। কেয়ার বীজ থেঁতো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যকৃতের সমস্যায় অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। কেয়া পাতার রস খেলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার পাওয়া যায়।

বর্ষার রানি কেয়া ফুলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য অনেকেই পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনার কথা ভাবছেন। জলাভূমি ও ঝোপ সংরক্ষণসহ নগর-মহানগরে বোটানিক্যাল পার্ক স্থাপনের পরামর্শও দিচ্ছেন। কৃত্রিম পণ্যের বদলে নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে কেয়া ফুল থেকে পরিবেশবান্ধব সুগন্ধি উত্পাদনের দাবিও তুলছেন। এসব বাস্তবায়িত হলেই কেবল কেয়া ফুলের হারানো গৌরব ফিরতে পারে।

ভোরের আকাশ/তা.কা

  • শেয়ার করুন-
 চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৫২.৫৭ শতাংশ

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৫২.৫৭ শতাংশ

 জীবন-মরণের লড়াইয়ে কুদরত উল্লাহ, সহায়তা চান বিত্তবানদের কাছে

জীবন-মরণের লড়াইয়ে কুদরত উল্লাহ, সহায়তা চান বিত্তবানদের কাছে

 এইচএসসির ফল সবাইকে বিস্মিত করেছে : শিক্ষা উপদেষ্টা

এইচএসসির ফল সবাইকে বিস্মিত করেছে : শিক্ষা উপদেষ্টা

 ‎পিরোজপুরে চলছে টাইফয়েডের টিকা কার্যক্রম

‎পিরোজপুরে চলছে টাইফয়েডের টিকা কার্যক্রম

 আগাম আলু চাষে সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ কৃষকের

আগাম আলু চাষে সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ কৃষকের

 হাসপাতালে অব্যবস্থাপনায় আতঙ্কে রোগীরা

হাসপাতালে অব্যবস্থাপনায় আতঙ্কে রোগীরা

 বিশ্ব খাদ্য দিবস আজ

বিশ্ব খাদ্য দিবস আজ

 বরিশালে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

বরিশালে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

 কালীগঞ্জে ইয়াবাসহ দুই যুবক আটক

কালীগঞ্জে ইয়াবাসহ দুই যুবক আটক

 মধ্যনগরে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার

মধ্যনগরে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার

 একটু শুকানোর সময় দেন, কালি উঠবে না: উপাচার্য

একটু শুকানোর সময় দেন, কালি উঠবে না: উপাচার্য

 নতুন বিতর্কে ট্রাম্প, এবার বিশ্বকাপের ম্যাচ সরানোর হুমকি

নতুন বিতর্কে ট্রাম্প, এবার বিশ্বকাপের ম্যাচ সরানোর হুমকি

 আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করলে সনদে স্বাক্ষর করবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম

আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করলে সনদে স্বাক্ষর করবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম

 এইচএসসিতে ফেল ৫ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী

এইচএসসিতে ফেল ৫ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী

 এইচএসসি ফল: কোন বোর্ডে কতজন পেলেন জিপিএ-৫?

এইচএসসি ফল: কোন বোর্ডে কতজন পেলেন জিপিএ-৫?

 এলএসটিডি'র উদ্যোগে ব্রি ধান (১০৩) এর ফসল কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

এলএসটিডি'র উদ্যোগে ব্রি ধান (১০৩) এর ফসল কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত

 পানিতে ডুবে ছেলের মৃত্যু, ফল জিপিএ-৫ দেখে কাঁদলেন বাবা

পানিতে ডুবে ছেলের মৃত্যু, ফল জিপিএ-৫ দেখে কাঁদলেন বাবা

সংশ্লিষ্ট

গদখালীর ফুলের রাজ্য যেন এক স্বর্গ উদ্যান

গদখালীর ফুলের রাজ্য যেন এক স্বর্গ উদ্যান

ইতিহাসের হারানো শহর: রহস্যে ঘেরা সভ্যতার নিঃশব্দ সাক্ষী

ইতিহাসের হারানো শহর: রহস্যে ঘেরা সভ্যতার নিঃশব্দ সাক্ষী

গবাদিপশুর রোগ অ্যানথ্রাক্স যখন মানবদেহে, করণীয় কী?

গবাদিপশুর রোগ অ্যানথ্রাক্স যখন মানবদেহে, করণীয় কী?

বরিশালের সাতলা গ্রাম: ফুটে থাকা শাপলার রঙিন সমারোহ

বরিশালের সাতলা গ্রাম: ফুটে থাকা শাপলার রঙিন সমারোহ