সংগৃহীত ছবি
নদী-নালা ও পুকুরের ধারে সহজেই জন্ম নেওয়া একটি উদ্ভিদ ঢোলকলমি। নাম শুনলেই হয়তো অনেকেই হেসে উঠেন কিন্তু এই উদ্ভিদটি আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ঔষধি গুণে ভরপুর এই লতা সামান্য আর্দ্রতা থাকলেই খুব দ্রুত জন্মায়। এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে থাকা এই উদ্ভিদটির পুষ্টিগুণও কম নয়।
পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণাবলি
ঢোলকলমি যেকোনো ঋতুতে শুকায় না, বরং শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা যেকোনো সময়ই তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকে। শরীরে ক্ষত হলে এর পাতার পেস্ট লাগালে দ্রুত সেরে যায়। শরীরের ব্যথা কমাতে গরম করে এই পাতার মোড়ক বেঁধে দিলে আরাম দেয়। ফোলা কোথাও থাকলে পাতার পেস্ট লাগালে ফোলা উপশম হয়।
দাঁতের ব্যথায় ঢোলকলমির ব্যবহার
দাঁতে পোকা বা পায়োরিয়া থাকলে ঢোলকলমির পাতা দিয়ে ব্রাশ করলে আরাম মেলে। এছাড়া বিছে কামড়ালে পাতার রস কাটা জায়গায় লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয় এবং বিষের প্রভাব ধীরে ধীরে কমে যায়।
ঢোলকলমি যেমন ঔষধি গুণে ভরপুর, তেমনই এর বিষাক্ততার দিকটিও জানা জরুরি। তাই ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
ভোরের আকাশ/তা.কা
সংশ্লিষ্ট
এ রাজ্যে কেবলই নানান ফুলের সমাহার। চারপাশের মাঠে মাঠে বাহারি রঙের ফুল আর ফুল। আর সেই ফুলের শোভা দেখতে এখন কত যে মানুষ ভীড় করে তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা দায়। যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার ‘গদখালী’ ইউনিয়ন বৃহত্তম ফুলের এক রাজ্য বলে এখন সর্বত্র খ্যাত। ফুল আর ফুলের মাঠ ঘিরে গদখালী এখন পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।সংগৃহীত ছবিফুলের মৌসুমে তাই পরিবার পরিজন নিয়ে গদখালী ফুলের মাঠ দেখা, পিকনিক করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ফুলপ্রেমীরা। একসময় হয়ত কারো ধারণাতেই ছিল না এদেশে এমন করে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হতে পারে। কিন্তু ‘গদখালী’ এখন এক অনন্য উদাহরণ।‘গদখালী’ নামটি উচ্চারিত হলে তাই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে রং বেরঙের ফুলের মাঠ। বিয়ে, জন্মদিন যায় বলুন না কেন এখন সবখানেই গদখালীর ফুলের বড় বেশি কদর। আর তাই শখ মেটাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুল ক্রেতারা ছুটে চলেন গদখালীতে।সংগৃহীত ছবিগদখালির ঝিকরগাছা উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম। এই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার একর জমিতে এখন ফুলের চাষ হয়। দেশী-বিদেশী নানান জাতের ফুল চাষ হয়। গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, লিলিয়াম থেকে শুরু করে জারবেরা, গ্লাভিওলাস সব ধরনের ফুলের চাষ হয়। ফুলের বার্ষিক বাজারটাও এখন অনেক বড়।অর্থনীতিবিদদের মতে, এখানে নানান জাতের ফুলের বার্ষিক বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। গদখালির ফুল যে শুধু এখন আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে তা নয় এখানে উৎপাদিত ফুলের কদর বিদেশেও। তাই ফুল ব্যবসায়ীরা এখানে উৎপাদিত ফুল বিভিন্ন দেশেও রফতানি করছে।বিবিসি সূত্রে জানা যায়, গদখালিতে প্রথম ফুল চাষের প্রচলন করেন কৃষক শের আলী সরদার। চার দশক আগে তিনিই ফুল চাষের সূচনা করেন। কৃষক শের আলী এরশাদ আমলের প্রারম্ভে প্রথম রজনীগন্ধা চাষ করেন এক বিঘা জমিতে। শের আলীর দেখাদেখি আরও অনেকেই চাষ শুরু করেন। আর এভাবেই বিস্তৃত হয় ফুলের চাষ। গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে রজনীগন্ধা, গোলাপের বিমোহিত গন্ধ।সংগৃহীত ছবিযশোর শহর থেকে গদখালী ২৫ কিলোমিটার দূরে। যশোর-বেনাপোলের রাস্তা ধরে যেতে হয়। মূলত গদখালীর উইকিপিডিয়ার মতে, দেশের মোট উৎপাদিত ফুলের ৭০% উৎপাদিত হয় গদখালিতে। এখানে ছয় হাজার চাষী এবং ৫০ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে ফুল ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। গদখালির উল্লেখযোগ্য গ্রামের মধ্যে রয়েছে বারবাকপুর, বোধখানা, কামারপাড়া, ফতেপুর, জায়রনগর, পটুয়াপাড়া, বেনেয়ালি। এসব গ্রামের সর্বত্রই ফুলের চাষ হয়।এখন গদখালির মাঠে মাঠে ফুল ফুটেছে। আর এই ফুল দেখার জন্য প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থী ভীড় করছেন গদখালীতে। আনন্দ উপভোগে গদখালীর সকাল-বিকেলটা এখন ভীষণ রকম রঙিণ। ফুল চাষ ঘিরে এখানে এখন এক ধরনের পর্যটন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টের পাশাপাশি ছোট ছোট বিনোদন কেন্দ্রও গড়ে উঠেছে। যেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য রাইডারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ফুলের মাঠ দেখার জন্য এখন উদ্যোক্তা বা চাষীদের নির্ধারিত ফি দিতে হয়।সংগৃহীত ছবিগোলাপ, জারবেরা, লিলিয়াম- এসব ফুলের বাগানে প্রবেশ করতে হলে গড়ে ১০ থেকে ২০ টাকা ফি দিতে হয়। ফি দেওয়ার পর যে কেউ ফুলবাগান ঢুকে প্রাণভরে দেখতে পারবেন, ছবি তুলতে পারবেন। এখানে ফুলের চারাও পাওয়া যায়। রাস্তার দুপাশে রয়েছে বিভিন্ন নার্সারি। নার্সারিতে প্রবেশ করতে গেলেও নির্ধারিত ফি দেওয়া লাগে।মূলত ডিসেম্বর, জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিত মাসে গদখালীতে দর্শণার্থীদের বিপুল ভীড় জমে উঠে। এখনে গেলে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না। মাঠে মাঠে ফুল আর ফুল। আর চারপাশে ফুলপ্রেমিকদের আনাগোণা। এই বৃহত্তম ফুলের রাজ্যে গেলে আপনার মন আরও প্রাণময় হয়ে উঠবে তা নিশ্চিত বলা যায়।ভোরের আকাশ/তা.কা
সভ্যতার ইতিহাস মূলত মানুষের উত্থান-পতনেরই ইতিহাস। প্রাচীন যুগে পৃথিবীর নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছিল জ্ঞান, শিল্প ও স্থাপত্যে সমৃদ্ধ অসংখ্য নগর। কিন্তু সময়ের প্রবাহে অনেক শহর হারিয়ে গেছে—কিছু ভেঙে পড়েছে, কিছু মাটির নিচে চাপা পড়েছে। আজও তাদের ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দ সাক্ষীর মতো।ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা শত চেষ্টা করেও অনেক রহস্যের পূর্ণ উত্তর খুঁজে পাননি। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই হারানো শহরগুলোর কথা, যেগুলো এখনো ঘেরা রহস্যে—আটলান্টিস — কল্পনা না বাস্তব?প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো প্রথম লেখেন আটলান্টিস নিয়ে—একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ নগররাষ্ট্রের গল্প, যা হঠাৎ কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়।শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ এই হারানো শহরের সন্ধানে ঘুরছে—কেউ বলছেন ভূমধ্যসাগরে, কেউবা আটলান্টিক মহাসাগর বা ক্যারিবীয় অঞ্চলে এর অবস্থান।স্যাটেলাইট ছবি ও আধুনিক গবেষণার পরও এর অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। প্রশ্ন থেকে গেছে—আটলান্টিস কি সত্যিই ছিল, নাকি প্লেটোর কল্পনা মাত্র?মাচু পিচু — ইনকা সাম্রাজ্যের রহস্যময় দুর্গপেরুর আন্দিজ পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত মাচু পিচু, ইনকা সভ্যতার অন্যতম বিস্ময়। ১৫শ শতকে নির্মিত এই শহর ইউরোপীয়দের চোখে আসে ২০শ শতকের শুরুতে।পাথর কেটে পাহাড়ের মাথায় এমন নিখুঁত স্থাপত্য কীর্তি রচনা সত্যিই অবাক করে। কেউ বলেন এটি ইনকা রাজাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, কেউ বলেন ধর্মীয় কেন্দ্র, আবার অনেকে মনে করেন এটি ছিল জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণাগার। এত উচ্চতায় পানি ও কৃষি ব্যবস্থা কীভাবে চলত—সে প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা।মোহনজো-দারো — সভ্যতার প্রাচীনতম নগরপাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত মোহনজো-দারো ছিল সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র। প্রায় ৪৫০০ বছর আগেই এখানে গড়ে উঠেছিল পরিকল্পিত শহর, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও স্নানাগার—যা আধুনিক নগর ব্যবস্থাকেও হার মানায়।কিন্তু রহস্যজনকভাবে শহরটি হঠাৎ করেই ধ্বংস হয়ে যায়। কেউ বলেন বন্যা বা ভূমিকম্পে, কেউ বলেন কোনো আক্রমণে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরজুড়ে অসংখ্য কঙ্কাল পেয়েছেন—যাদের মৃত্যু হয়েছিল হঠাৎ ও অপ্রত্যাশিতভাবে। তবুও, ধ্বংসের প্রকৃত কারণ আজও অজানা।পম্পেই — ছাইয়ের নিচে বন্দি এক শহরখ্রিস্টাব্দ ৭৯ সালে ইতালির পম্পেই শহর মুহূর্তেই ইতিহাসে হারিয়ে যায়। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে পুরো শহর ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে।আজও প্রত্নতত্ত্ববিদরা খননের সময় প্রায় অক্ষত বাড়িঘর, দেয়ালচিত্র ও মানুষের দেহাবশেষ খুঁজে পান—যা তখনকার রোমান জীবনের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়—মানুষ কেন বিপদের পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও আগ্নেয়গিরির এত কাছে বসবাস করছিল?অ্যাঙ্কর ওয়াট — জঙ্গলের বুকে হারানো সাম্রাজ্যকম্বোডিয়ার ঘন জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাঙ্কর ওয়াট শুধু একটি মন্দির নয়, এটি ছিল বিশাল খেমার সাম্রাজ্যের কেন্দ্র।হাজার হাজার মন্দির, প্রাসাদ ও বসতির এই শহর ১৫শ শতকের দিকে রহস্যজনকভাবে বিলুপ্ত হয়।ভোরের আকাশ//হ.র
বাংলাদেশে গবাদিপশুর ভাইরাসজনিত রোগগুলোর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স অন্যতম। তবে বর্তমানে দেশের উত্তর অঞ্চলের মানুষও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অ্যানথ্রাক্স হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটিত একটি রোগ; যা প্রথমত গবাদিপশুকে আক্রান্ত করে। পরে আক্রান্ত পশুর মাধ্যমে মানুষও আক্রান্ত হয়। তবে মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ ছড়ায় না। তাই অ্যানথ্রাক্সকে জুনোটিক ডিজিজ বলা হয়।এটি বাংলায় ‘তড়কা রোগ’ নামে পরিচিত। এটি তীব্র ও গুরুতর সংক্রামক রোগ। তাই জেনে নিন অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়।অ্যানথ্রাক্স কীভাবে মানবদেহে ছড়ায়গবাদিপশু থেকে তিন ভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এ রোগ সংক্রমণ ঘটায়:ত্বকের মাধ্যমে: পশুজাত পণ্য (পশম, হাড়) থেকে ত্বকের কাটা বা আঁচড়ের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে: ব্যাকটেরিয়ার রেণু শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে।খাবারের মাধ্যমে: অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়ার কারণে সংক্রমণ হতে পারে।অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মূলত ছড়ায় আক্রান্ত প্রাণীর মাধ্যমে। এ জীবাণু মাটিতেও থাকতে পারে। কেউ যদি অসুস্থ প্রাণীর মাংস খায় কিংবা শ্বাসের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু তার শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে তিনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া ত্বকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়েও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।উপসর্গ১. কারো দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু কীভাবে প্রবেশ করছে, এর ওপর উপসর্গ নির্ভর করে।২. মাংস খাওয়ার মাধ্যমে কেউ আক্রান্ত হলে দেখা দেয় বমিভাব, বমি, রক্তবমি, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, গলা ব্যথা বা ঘাড় ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা। এ ছাড়া রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা হতে পারে।৩. শ্বাসের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে দেখা দিতে পারে গলা ব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি, পেশি ব্যথার মতো সাদামাটা উপসর্গ। এরপর বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট, বমিভাবও হতে পারে। শুধু তাই নয়, কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। ঢোঁক গিলতে গেলে গলা ব্যথা হতে পারে। জ্বরের তীব্রতাও বাড়তে পারে। একইসঙ্গে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।৪. ত্বকের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ালে ত্বকে পোকার কামড়ের মতো ফোলা ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থানের মাঝখানটা কালো হয়ে যায় এবং আশপাশেও ফুলতে থাকে। একই সঙ্গে চুলকানিও হয়। শরীরে জ্বরও থাকে।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স রোগের মূল কারণ হলো ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়া দীর্ঘদিন মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং অনুকূল পরিবেশ পেলে সক্রিয় হয়ে গবাদিপশুর মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়। সংক্রমণ সাধারণত সংক্রমিত চারণভূমি, দূষিত পানি, দূষিত খাবার বা মৃত পশুর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ঘটে। এটি মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে। বিশেষত পশুর মৃতদেহ বা সংক্রমিত মাংসের সংস্পর্শে এলে।’এ রোগ থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে এই অধ্যাপক বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হলো সংক্রমিত প্রাণী ও পশুজাত পণ্যের সংস্পর্শ এড়ানো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং অসুস্থ পশুর মাংস কাঁচা বা কম রান্না করা অবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকা।’তিনি আরও বলেন, ‘গবাদিপশুকে প্রতি বছর একবার অ্যানথ্রাক্স টিকা দিলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলে আশপাশের সব গরুকে টিকা দেওয়া উচিত। এ ছাড়া চারণভূমি, খাবার ও পানির উৎস পরিষ্কার রাখা জরুরি। সন্দেহজনক মৃত পশু বা নোংরা জায়গা থেকে পশুকে দূরে রাখা জরুরি। আক্রান্ত পশুর জন্য বিশেষ প্রতিষেধক সিরাম আছে, যা প্রাণী চিকিৎসক প্রয়োগ করতে পারেন। তবে রেজিস্টার্ড প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পশুকে চিকিৎসা করাতে হবে।’মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানান ড. মো. সহিদুজ্জামান।অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের উপায়১. খুব ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করা হয়নি এমন কোনো মাংস খাওয়া যাবে না।২. ত্বকে কোনো কাটাছেঁড়া থাকলে কাঁচা মাংস খালি হাতে নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকবেন।৩. গবাদিপশু পালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে পশুকে নিয়মমাফিক অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।৪. যিনি অসুস্থ পশুর দেখাশোনা করেন, তার সুরক্ষাসামগ্রী, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং যত্নের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।৫. অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস খাওয়া, কাটাকাটি করা বা নাড়াচাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।৬. অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে সচেতন হওয়া জরুরি। এটি ভয়ংকর সংক্রমণ হলেও সঠিক প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।ভোরের আকাশ/মো.আ.
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রাম এখন দেশের মানুষের কাছে ‘শাপলার গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। গ্রামের বিস্তীর্ণ জলাভূমি, স্থানীয়রা যাকে শাপলার বিল নামে ডাকে, পুরো মৌসুমে লাল, সাদা ও বেগুনি শাপলার ফুলে ছেয়ে থাকে। প্রায় ১০ হাজার একরের এই বিল ভোরের প্রথম আলোয় যেন লাল কার্পেটের মতো ছড়িয়ে যায়, যা দেখতে প্রতিটি দর্শক মুগ্ধ হয়।স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, শাপলা দেখতে সবচেয়ে ভালো সময় আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। ভোরবেলা ফুলগুলো পুরোপুরি ফুটে থাকে, কিন্তু দিনের বেলায় ধীরে ধীরে ফুলগুলো বুজে যায় বা স্থানীয়রা বাজারের জন্য তুলতে শুরু করে। তাই শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভোরে বিলে পৌঁছানোই উত্তম।পর্যটকরা সাধারণত রাতে গ্রামে এসে ভোরে বিল দেখতে যান। ঢাকা থেকে সাতলা যেতে হলে বরিশাল পর্যন্ত বাস বা লঞ্চে পৌঁছাতে হয়। ঢাকা থেকে বরিশালের বাস যাত্রীদের জন্য শাকুরা, হানিফ ও ঈগল পরিবহন রয়েছে। এছাড়া সদরঘাট থেকে বরিশালগামী লঞ্চে ভ্রমণ করা যায়, যেগুলো পরদিন ভোরে বরিশালে পৌঁছে। বরিশাল শহর থেকে সাতলা পৌঁছাতে হলে শিকারপুর বা নুতনহাট পর্যন্ত বাসে যেতে হয়, এরপর অটো বা মহেন্দ্র গাড়িতে গ্রামে প্রবেশ করা যায়।সাতলায় বড় কোনো হোটেল না থাকলেও স্থানীয় বাড়ি বা স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা যায়। বরিশাল শহরে থাকলে গ্র্যান্ড পার্ক, হোটেল এথেনাসহ অন্যান্য মানসম্মত হোটেল পাওয়া সম্ভব।স্থানীয়রা অতিথিপরায়ণ। শাপলার মৌসুমে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কেউ শুধু ফুল দেখার জন্য, কেউ ছবি তোলার জন্য বিলে আসে। এছাড়া এই গ্রামের শাপলা ফুল দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।প্রকৃতি প্রেমী ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আগ্রহীদের জন্য সাতলা গ্রাম হতে পারে এক অনন্য গন্তব্য।সূত্র: কুহুডাকভোরের আকাশ // হ.র