ডাব খাওয়ার আগে যে ৫ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
ডাবের পানি কিংবা শাঁস—দুটোই পুষ্টিগুণে ভরপুর। কিন্তু সবার জন্য সবসময় উপকারী নয়। কিছু ক্ষেত্রে ডাব খাওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।
১. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সীমিত সেবন
ডাবের পানিতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। তাই বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমাণমতো খাওয়াই নিরাপদ।
২. কিডনি সমস্যায় নিয়ন্ত্রণ জরুরি
ডাবের পানিতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। কিডনির রোগীরা বেশি খেলে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমে হার্টের জটিলতা তৈরি করতে পারে।
৩. সর্দি–কাশির সময় সাবধানতা
ডাবের পানি ঠান্ডা প্রকৃতির হওয়ায় সর্দি, কাশি বা গলা বসার সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই অসুস্থ অবস্থায় সীমিত খাওয়াই ভালো।
৪. খালি পেটে না খাওয়াই ভালো
খালি পেটে বেশি পরিমাণে ডাবের পানি খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক বা অস্বস্তি হতে পারে।
৫. অতিরিক্ত না খাওয়াই উত্তম
ডাবের পানি ও শাঁস একসাথে অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা বা ডায়রিয়া হতে পারে।
তাই শরীরের অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমাণমতো ডাব খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
ভোরের আকাশ/হ.র
সংশ্লিষ্ট
হঠাৎ করে পায়ের গোড়ালি বা পেটের নিচে ফোলাভাব দেখা দিচ্ছে? অনেকেই হয়তো ভাবেন, এটা শুধুই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ক্লান্তি বা পানি জমার ফল। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, বিষয়টি এতটা হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই ফোলাভাব হতে পারে নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD)–এর প্রাথমিক লক্ষণ।বিশ্বজুড়ে এই রোগের হার ভয়াবহভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপন ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব—এই তিনটি কারণ মিলে নীরবে বাড়াচ্ছে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি।লিভারে চর্বি বাড়লে যা ঘটেলিভারে অল্প পরিমাণ চর্বি থাকা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যখন এই চর্বি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে তা থেকে হতে পারে সিরোসিস বা এমনকি লিভার ক্যানসারও।ফ্যাটি লিভারের ধরনফ্যাটি লিভার সাধারণত দুই প্রকার—০১. অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার – অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে হয়।০২. নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (NAFLD) – অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, চর্বিযুক্ত খাবার এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে দেখা দেয়।উপসর্গ যেগুলোতে সতর্ক হবেনফ্যাটি লিভারের প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে ধীরে ধীরে কিছু ইঙ্গিত দেখা দিতে পারে, যেমন—পেটের ডান পাশে চাপ বা অস্বস্তিঅতিরিক্ত ক্লান্তিহঠাৎ ওজন কমে যাওয়াপেট বা পায়ে ফোলাভাবচোখ ও ত্বকে হলুদ ভাব (জন্ডিস)গাঢ় প্রস্রাব ও হালকা বর্ণের মলমাঝে মাঝে মানসিক বিভ্রান্তিব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) জানিয়েছে, পায়ে ফোলাভাবকে অবহেলা না করাই ভালো। অনেকেই এটিকে সাধারণ শারীরিক ক্লান্তি মনে করেন, কিন্তু এটি হতে পারে লিভারের ক্ষতির আগাম সংকেত।‘পিটিং এডেমা’ চিহ্নিত করবেন যেভাবেফুলে যাওয়া স্থানে আঙুল দিয়ে কয়েক সেকেন্ড চাপ দিন। যদি আঙুল তোলার পরেও সেখানে গর্তের মতো দাগ থেকে যায়, তবে সেটি হতে পারে পিটিং এডেমা—যা শরীরে অতিরিক্ত তরল জমে থাকার লক্ষণ। এটি ফ্যাটি লিভারসহ বিভিন্ন লিভারজনিত জটিলতার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।কী করবেনএমন অস্বাভাবিক ফোলাভাব দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করলে নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।প্রতিরোধে যা করবেনবিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলেই ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়—প্রতিদিন নিয়মিত শরীরচর্চা করুনসুষম ও পরিমিত খাবার খানঅ্যালকোহল পরিহার করুনওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনসবশেষে মনে রাখবেন—শরীরের ছোটখাটো পরিবর্তন কখনোই তুচ্ছ নয়। পেট বা পায়ে সামান্য ফোলাভাবও হতে পারে বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির আগাম বার্তা। তাই সচেতন থাকুন, নিজের যত্ন নিন।ভোরের আকাশ//হর
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৭৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৪৯ জন এবং বাকিরা ঢাকা সিটির বাইরের। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৭০ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৪ হাজার ৮৩৪ জন। মারা গেছেন ২৪৩ জন।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সব জায়গায় প্রচার চালাতে হবে। একইসঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী আক্রান্ত এবং ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৭৫৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।বুধবার (১৫ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ২০২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৫৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরে বিভাগওয়ারি আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা হলো- ঢাকা বিভাগে (ঢাকাসহ) ১৫৮ জন, চট্টগ্রামে ৮৫ জন, বরিশালে ১৩৩ জন, ময়মনসিংহে ৫০ জন, খুলনায় ৬২ জন, রংপুরে ১৯ জন, রাজশাহীতে ৪৭ জন এবং সিলেটে ২ জন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৪২ জনের। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫৭ হাজার ১৫ জন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার ন্যূনতম সুুযোগ সুবিধা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার উচ্চ ব্যয়ের চাপ কমাতে উপজেলাকেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু তাদের পদ খালি। অ্যানেস্থেসিয়া, গাইনি ও সার্জারি চিকিৎসকের অভাবে অপারেশন চলে না। প্রাইমারি চিকিৎসাসেবার কেন্দ্র হিসেবেই ভূমিকা রেখে আসছে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। ফলে ছোট সমস্যা নিয়েও গ্রামাঞ্চলের রোগীদের ছুটে যেতে হয় বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে।বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদানে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের অপারেশন থিয়েটারে টিউমার, ফোঁড়া, অর্থোপেডিকসসহ বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি অপারেশনের ব্যবস্থা থাকার কথা রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি, মেডিসিন, শিশু, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, সার্জারি, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞসহ ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। পদসমূহ খালি রয়েছে।চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার উচ্চ ব্যয়ের চাপ কমাতে সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, চিকিৎসা ব্যয় ও ওষুধের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় দেশের অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। তার চাপ গিয়ে পড়ছে বিনামূল্যে বা নামমাত্র খরচে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর। সরকারি হাসপাতালের তুলনায় অনেক গুণ বেশি চিকিৎসা খরচ হয়ে থাকে বেসরকারি হাসপাতালে। আর্থিক সঙ্কটে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর অকালে মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়। এমতাবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবার উচ্চ ব্যয় থেকে দরিদ্র জনগণকে বাঁচাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ও উন্নয়ন অতুলনীয় এবং বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। কেন্দ্র থেকে মফঃস্বল পর্যন্ত তথ্য-প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার এমন অবকাঠামো বিশ্বের কোথাও নেই।তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যয় বিবেচনায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। দেশের বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চালু রাখা অনেক ব্যয়বহুল। তাই ওই সব প্রতিষ্ঠানে খরচও অনেক। তবে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সীমিত পরিসরে হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জারি নিশ্চিত করা গেলে সাধারণ মানুষের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার স্রোত হ্রাস পেত।ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদী-ই মাহবুব ভোরের আকাশকে বলেন, সরকারি উদ্যোগ জেলা ও থানা পর্যায়ে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়াতে হবে। থানা পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলে মানুষ অর্থ ব্যয় ও কষ্ট করে জেলা পর্যায়ে যাবে না। আর জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত সরকারি ব্যবস্থা থাকলে বিভাগীয় পর্যায়ে যাবে না। এটা তো সহজ হিসাব।বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে না মানুষের সংখ্যা কম নয়। সারাদেশে নামমাত্র খরচে চিকিৎসাসেবা প্রদান, ওষুধ বিতরণ, রোগীদের খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসা উচিত। সরকারি উদ্যোগে থানা পর্যায়ে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হলে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রোগীদের যাওয়া কমে যাবে।উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, উপজেলা হাসপাতালের পদ থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ পদগুলো খালি থাকে। স্থানীয়ভাবে শূন্য পদগুলোতে সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব, অনেক দেশেই এই ব্যবস্থা আছে। হাসপাতালের ভর্তি রোগীরা প্রায় সকল ঔষধ বিনা পয়সায় পেয়ে থাকে কিন্তু বর্হিবিভাগ রোগীদের জন্য ঔষধ বরাদ্দ খুব কম এ বিষয়ে পরির্বতন আনতে হবে।এছাড়া নানাবিধি অসুবিধার কারণে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে অনেক বেশি রোগীর ভিড় থাকায় রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা হাসপাতালে রোগীরা ডাক্তার পায়না, ঠিকমত ওষুধ পায় না। ফলে তারা জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করে। যে কারণে এসব হাসপাতালে এক সঙ্গে অনেক রোগী থাকায় আমরা মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দিতে পারছে না। চিকিৎসা সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে রোগীরা উপজেলা ও জেলাভিত্তিক ইনডোর স্বাস্থ্যসেবা পেতে ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে এবং অপেক্ষাকৃত জটিল রোগের জন্য উপজেলা থেকেই জেলা, বিভাগীয় ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রেফারেল সিস্টেমের মাধ্যমে রোগী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদী-ই মাহবুব বলেন, জনগণের স্বাস্থ্যের ব্যাপারটিকে যদি আমরা ‘জনস্বাস্থ্য’ নামে আখ্যায়িত করি, তাহলে আমাদের নজর দিতে হবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যেখানে বাস করে, তাদের স্বাস্থের দিকে। আমরা প্রথমে চাইব, তারা যেন অসুস্থ না হয়। আর অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং সম্ভব হলে পরবর্তী স্তরের চিকিৎসা যেন কাছাকাছি পায়। সেটি তাদের কাছে কি আছে? নেই।আমাদের যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক! এই ধরনের একটি নিউক্লিয়াস পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের প্রাথমিকসেবা যদিও এখান থেকে শুরু হয়, তবুও সত্যিকারভাবে প্রাথমিক সেবাটা মানুষ পায় উপজেলা হাসপাতাল থেকে। তার নিচে আরও দুটো টায়ার আছে, এর একটি মুখ্য, তা হচ্ছে ইউনিয়ন হেলথ সেন্টার। এর বাইরে অনেক জায়গায় সাবসেন্টার রয়েছে। ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্স থেকে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত এই জায়গার মান বৃদ্ধি করতে পারলে আমরা মিরাকেল করতে পারি। তাহলে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অন্যরা পেরে উঠবে না। যেমন- একটি উপজেলা হাসপাতালে দশ জনের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন, সেখানে যাতায়াতের সুবিধাও খুবই উন্নত। তাহলে আমাদের রোগীরা উপজেলা হাসপাতালেই বেশিরভাগ চিকিৎসাসেবা পেয়ে যাচ্ছেন।তিনি আরও বলেন, উপজেলাগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান যদি উন্নত করি, আগামী দিনের সংস্কারে যদি এটি প্রাধান্য পায় এবং এগুলোকে যদি শক্তিশালী ও মানসম্মত করা যায়; পাশাপাশি এখানে প্রয়োজনগুলোর ঘাটতি যদি না রাখি, তাহলে আমাদের দেশের সর্বাঙ্গীনভাবে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা আমরা খুব সুন্দরভাবে নিশ্চিত করতে পারি।তবে উপজেলায় অনেকগুলো পোস্ট আছে, কিন্তু তাদের সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের উপজেলাগুলোতে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য কী করা যেতে পারে? সরকারিভাবে পদ সৃষ্টি করে দেওয়া আছে এবং পদায়নও করা আছে। কিন্তু শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিলেই হবে না, এর সঙ্গে আনুষাঙ্গিক সমস্ত সার্ভিস নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সার্ভিস নিশ্চিত না, তাহলে তাকে সেখানে পদায়নের লক্ষ্যটা কী? স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কেন আমরা এমন কাউকে পদায়ন করবো যাকে জনগণ পাবে না বা যে ব্যবহৃত হবে না? সুতরাং প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে সরকারকে সার্বিক সংস্কারের আগে ধাপে ধাপে চিকিৎসকদের বিষয়টিকে সংস্কার করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সকে শক্তিশালী করতে করণীয় : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন স্থানীয় মানুষজনের সার্বিক চিকিৎসা সেখানেই সম্ভব হয়। এতে সেখানকার জনোগোষ্ঠীর বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা যা দরকার, তার বিরাট অংশই তারা পাবেন সেখানে। শুধুমাত্র এর চেয়ে উন্নত সেবার জন্যই তারা জেলা হাসপাতালগুলোতে যাবেন। আর জেলা হাসপাতালগুলোর চেয়ে উন্নত সেবার প্রয়োজনে তারা যাবেন বিশেষায়িত হাসপাতালে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে সংস্কার প্রথম দরকার উপজেলা হাসপাতালগুলোতে। এখানে সংস্কার করলে দেশব্যাপী সংস্কারের প্রভাব পড়বে। আমরা উপজেলা হাসপাতালগুলোতে যদি জনবল নিশ্চিত করতে পারি, একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আমরা উপজেলাতেই পূর্ণাঙ্গ একটা ইউনিট পেতে পারি যেখানে জনগণ সার্বিক স্বাস্থ্যসেবাটা পাবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ