আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫ ১২:৫৭ এএম
নির্বাচনে পরাজয় সত্ত্বেও ক্ষমতা ছাড়ছেন না জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা
জাপানের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন জোট। তবে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানিয়েছেন, তিনি এখনই পদত্যাগ করছেন না।
রবিবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জনগণ ভোট দেন। নির্বাচনের ফলাফল ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও এর জোটসঙ্গী কোমেইতোর জন্য হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ভোটগ্রহণ শেষে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, “আমি এই কঠিন ফলাফল আন্তরিকভাবে মেনে নিচ্ছি। তবে এই মুহূর্তে আমার মনোযোগ বাণিজ্য আলোচনার ওপর।”
এর আগে, গত বছর দেশটির নিম্নকক্ষেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় সরকার। এবার উচ্চকক্ষে হার, জোট সরকারের ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উচ্চকক্ষের ২৪৮টি আসনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারজোটের প্রয়োজন ছিল ৫০টি আসন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এনএইচকের তথ্য অনুযায়ী, তারা পেয়েছে ৪৭টি আসন। একটি আসনের ফল এখনও ঘোষণা বাকি রয়েছে।
নির্বাচনের এই ফলাফল ভোটারদের মধ্যে বর্তমান সরকারের প্রতি অসন্তোষের প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চলমান মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ও এলডিপিকে ঘিরে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
কান্দা ইউনিভার্সিটি অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জাপানিজ স্টাডিজের অধ্যাপক জেফ্রি হল বিবিসিকে বলেন, “এলডিপির ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীল ভোটারদের একটি অংশ সরে গেছে ডানপন্থী নতুন দল সানসেইতো-র দিকে। কারণ অনেকেই ইশিবাকে যথেষ্ট রক্ষণশীল মনে করেন না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের জাতীয়তাবাদী ও চীনবিরোধী অবস্থান ইশিবার মধ্যে অনুপস্থিত বলে তারা মনে করেন।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ছিলেন এলডিপির দীর্ঘমেয়াদি ও জনপ্রিয় নেতা। দলীয় ভাঙনের মাঝে তাঁর অনুসারীরা বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এলডিপির শেষ তিন প্রধানমন্ত্রী উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হন। এবারও সেই চিত্র পুনরাবৃত্তি হতে পারে। সম্ভাব্য নতুন নেতাদের মধ্যে সানায়ে তাকাইচি, সাবেক মন্ত্রী তাকাইয়ুকি কোবায়াশি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কইজুমির ছেলে শিনজিরো কইজুমির নাম আলোচনায় রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে সানসেইতো পার্টির উত্থানও উল্লেখযোগ্য। কোভিড মহামারির সময় টিকা বিরোধী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানোর মাধ্যমে আলোচনায় আসা দলটি এবার অভিবাসন ইস্যুতে জনগণের সাড়া পেয়েছে।
জাপানের কড়াকড়ি অভিবাসন নীতির পরও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশি পর্যটক ও অধিবাসীর সংখ্যা বেড়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ‘বিদেশীরা সুযোগ নিচ্ছে’ এমন মনোভাব শক্তিশালী হয়েছে। এই পটভূমিতে বিদেশিদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ ও খারাপ আচরণ রোধে একটি টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইশিবা।
নতুন নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনা ও বিদেশনীতি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে জাপানের রাজনৈতিক অঙ্গনে নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্য সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ভোরের আকাশ//হ.র