নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫ ১২:২৩ এএম
প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান বিষয়ে একক ব্যক্তি না থাকার পক্ষে নয় বিএনপি
প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধান এক ব্যক্তিই হবেন কি না— এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপি জানিয়েছে, দলটি এ বিষয়ে বিরোধিতা করছে না। তবে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে ভিন্নমত (ডিসেন্টস নোট) রাখার সুযোগ রাখার পক্ষে মত দিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ১৭তম দিনের সংলাপ শেষে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হবেন— এ নিয়ে সব দল মোটামুটি একমত। কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি হলো, এটি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ঠিক করবে। পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হন।”
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, “কোনো একটি রাজনৈতিক দলে একাধিক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। কেউ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে পদে না-ও থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি দলীয় প্রধান থাকলেও অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তাই বাধ্যবাধকতার চেয়ে নমনীয়তা রাখা ভালো।”
সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, পাঁচ সদস্যের ওই কমিটিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার এবং বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলীয় নেতা, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন থাকবেন। এই কমিটি বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে নাম আহ্বান করবে এবং ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।
বিএনপির এই নেতা জানান, প্রথম প্রস্তাব ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারি ও বিরোধী দল ৫ জন করে এবং তৃতীয় দল ২ জন করে মোট ১২ জনের নাম জমা দেবে। সেই তালিকা থেকে উপদেষ্টার নাম চূড়ান্ত করার চেষ্টা হবে। তবে এখানেও ঐকমত্য না হলে তৃতীয় বিকল্প হিসেবে র্যাংক চয়েজ ভোটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব এসেছে, যদিও এই বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি।
সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা চাই প্রথমেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো হোক। না হলে শেষ পর্যন্ত সংবিধানের এয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান রয়েছে, সেটা অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়ার বিষয়টি এখন বিবেচনায় আছে।”
এসময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু হলে সংবিধানের ১২৩(৩) ও ৭২(১) ধারা সংশোধনের প্রয়োজন হবে। প্রথমটি নির্বাচনকালীন সংসদের বহাল থাকার বিধান সংশ্লিষ্ট এবং দ্বিতীয়টি সংসদের অধিবেশন আহ্বান সংক্রান্ত। বিএনপির মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যকর হলে এই ধারাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধনের প্রয়োজন হবে এবং এটি নিয়ে কোনো রাজনৈতিক বিতর্ক থাকবে না।
আলোচনার শেষভাগে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব ওঠে, তবে এ বিষয়ে বিএনপি কোনো মতামত দেয়নি। সালাহউদ্দিন বলেন, “আমি আজ কিছু বলছি না। আগামীকালের আলোচনায় অংশ নিয়ে মতামত জানাবো।”
সর্বসম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়েও প্রশ্ন ওঠে সাংবাদিকদের মধ্যে। জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বসম্মতি সবসময় সহজ হয় না। তবে, ১৯৯৬ সালে তিন দলের ঐকমত্যের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন সম্ভব হয়েছিল। তাই এবারও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই বিভক্তি নয়, চাই ঐকমত্য। বিভক্তি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে ভবিষ্যতে প্রশ্ন থেকেই যাবে।”
ভোরের আকাশ//র.ন