আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫ ১১:২৫ এএম
কিয়েভে রাশিয়ার তীব্র ড্রোন হামলা, নিহত ২, আহত ১৩
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বুধবার রাতভর রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত দুইজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। ইউক্রেন সরকার এই হামলাকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় রুশ বিমান হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
কিয়েভ শহরের কেন্দ্রীয় শেভচেনকিভস্কি জেলায় একটি আবাসিক ভবনের ছাদে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আগুন লেগে যায়। শহরের বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি, গুদামঘর ও অফিস ভবনে আগুন লেগে যাওয়ার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো জানান, “আবাসিক ভবন, গাড়ি, গুদামঘর, অফিসসহ অন্যান্য ভবনে আগুন লাগেছে।” আহতদের মধ্যে অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সময়ে, মেয়র ভিতালি ক্লিটসকো জানান, পডিলস্কি জেলায় অবস্থিত একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লিমেঙ্কো বলেন, হামলায় ৬৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা এবং মেট্রো স্টেশনের কাছে কর্মরত ২২ বছর বয়সী এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। রাতভর কিয়েভে বিস্ফোরণ, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওয়াজ এবং ড্রোনের গর্জনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে রাতের আকাশে বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখা গেছে, যদিও এগুলো এখনও স্বতন্ত্রভাবে যাচাই হয়নি।
রাশিয়া মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত একযোগে ৭২৮টি ড্রোন এবং ১৩টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে কিয়েভের ছয়টি জেলায় রাশিয়ার ড্রোন হামলার খবর নিশ্চিত করেছে সামরিক কর্তৃপক্ষ। তবে শহরের বাইরের এলাকায় হতাহতের খবর এখনও স্পষ্ট নয়।
কিয়েভ সিটি প্রশাসন বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে, সতর্কতা সংকেত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার এবং বাড়িতে ফেরার পর জানালা ও দরজা বন্ধ রাখার জন্য।
এই হামলা আবারও প্রমাণ করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধান এখনো কত দূরে।
জার্মানির চ্যান্সেলর অলাফ শলৎস বলেন, “কূটনীতির সব পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।” রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও একই মন্তব্য করেছেন।
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেন, “পুতিন আমাদের অনেক ‘বুলশিট’ দিচ্ছেন। তিনি সব সময় আমাদের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করেন, কিন্তু সেটার কোনো বাস্তব মূল্য নেই।” 이에 পেসকভ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “আমরা শান্তভাবে বিষয়টি দেখছি। ট্রাম্পের কথাবার্তা সবসময়ই কিছুটা তীব্র হয়।”
ট্রাম্প আগে দাবি করেছিলেন, তিনি একদিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন, তবে এখনও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। পশ্চিমা দেশগুলো এখন ইউক্রেনকে নিরাপত্তা ও সহায়তা দেওয়া এবং রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে কাজ করছে। ইউরোপ একটি নতুন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ প্রণয়ন করছে।
এই ইস্যু নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোমে ৭৭টি দেশের অংশগ্রহণে ইউক্রেনের পুনর্গঠন নিয়ে দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে ইউক্রেনের আকাশসীমা রক্ষার বিষয়ও আলোচনায় আসার কথা রয়েছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মালয়েশিয়ায় এক সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎ করার প্রত্যাশা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করেন, যার কোনো শেষ এখনো দৃশ্যমান নয়। এর ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ক্রমেই আরও নিয়মিত ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।
সূত্র: বিবিসি
ভোরের আকাশ//হ.র