সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশে ডা. জাহিদ
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫ ০৫:৫৮ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
আমাদের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা গণতন্ত্রকে নসাৎ করতে চায় মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শুক্রবার (১৮ জুলাই ) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, আমাদের ভেতরেও কিছু ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে, যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। তারা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের মুখোশ উন্মোচন করাও আমাদের দায়িত্ব।
সংগঠনটির সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর ডক্টর এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, প্রফেসর ড. লুৎফুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আসাদুজ্জামান চুন্নু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামীম প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে সংগঠনের নেতাকর্মীরা একটি মৌন মিছিল কদম ফোয়ারা হয়ে পল্টন মোড় থেকে প্রেসক্লাব এসে শেষ হয়।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায়, সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে; তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব। মিটফোর্ডের ঘটনার পর দ্রুততার সাথে বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং দাবি তুলেছে দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। তারপরেও আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ট্যাগিং করা হচ্ছে। আপনারা একবারও ভাবেন না আপনারা কী করছেন? আপনারা কেন আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করছেন, অন্যের ক্রীড়ানক হয়ে কেন আপনারা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সকলকে সতর্ক থাকতে হবে, সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না।
ঐক্য বিনষ্টকারীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, রাজনীতি করুন, ময়দানে আসুন। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো একত্রিত কর্মসূচি নিয়ে এসেছে। আপনাদের কী কর্মসূচি আছে, সেটি নিয়ে আসুন। কর্মসূচির নামের খবর নাই। কথায় কথায় পিআর (সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট ব্যবস্থা) বলবেন, কথায় কথায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই। আরে ভাই, গণতন্ত্রের লড়াই জাতীয় নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের জন্য গণতন্ত্রের লড়াই হয় না। আর পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশে ৫৪ বছর কেন, ১৫৪ বছরেও কোনো প্র্যাকটিস হয় নাই। আজকে কেন এই সমস্ত কথা বলে বিবাদ-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছেন। তার অর্থ হচ্ছে আপনারা গণতন্ত্রকে প্রলম্বিত করতে চান, গণতন্ত্র যাতে ফিরে না আসে; তাহলে হয়ত আপনাদের অন্য সুবিধা আছে।
তিনি বলেন, মনে রাখবেন, জনগণকে ক্ষমতাহীন করে বেশি দিন যদি রাখতে চান, এই জনগণ কিন্তু ফুঁসে উঠবে। তখন সেই আগুনে আপনারা জ্বলের পুঁড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। আমি সকলকে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাতে চাই, ধৈর্য ধরুন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারকে যেমন রুখেছি, তারা পালিয়ে গেছে এবং একইভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে লড়াই, সেই লড়াইয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কোনো অবস্থাতেই ষড়যন্ত্রকারীরা কামিয়াবি হবে না।
গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, মার্চ ফর গোপালগঞ্জ বলেন, আর পদযাত্রা বলেন, আমি তো বলি, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এই গোপালগঞ্জ- আপনাদের খেয়াল আছে, কোটালিপাড়ায় বোমার হামলার কথা প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) থাকা অবস্থায় উনার এখানে এতো কিছু থাকার পরে কীভাবে বোমা ফুটল? সেখানে তখন কোথায় ছিল গোয়েন্দা বাহিনী। অর্থাৎ ষড়যন্ত্র যদি না হয়, তাহলে এরকম ঘটনা ঘটানো যায় না।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার তো ফরিদপুরে সুন্দর প্রোগ্রাম হলো, সেখানে তো কিছু হলো না, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী- সবই তো কাছাকাছি। আপনারা নড়াইল গেলেন- কিছু হলো না; সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কোথাও কিছু হয় নাই- ওখানে কেন হচ্ছে? কাজেই মনে রাখতে হবে স্বৈরাচারের দোসরদের ওপর দোষ চাপাচ্ছি, ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের ভেতরে যারা আজকে গণতন্ত্রকে নসাৎ করতে চায়, সেই ষড়যন্ত্রকারীরাও ঘাপটি মেরে আছে; তাদের চরিত্র উন্মোচন করা আজকে আমাদের দায়িত্ব। ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয় কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে।
অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে পেশাজীবীদের অবদানকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। আজকে মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে রাজনীতিবিদরাও ছিলেন, পেশাজীবীরাও ছিলেন এবং আছেন। এই অবস্থায় আমরা যখন দেখতে পাই রাজনীতিবিদদের মধ্যে ছোট ছোট স্বার্থের জন্য অনৈক্য, তখন আমরা হতাশাগ্রস্ত হই। আমরা সাবধান করে দেই, আপনারা (রাজনীতিবিদরা) দ্বিধা-বিভক্ত হবেন না। আপনারা ঐক্য বিনষ্ট করবেন না। ঐক্য বিনষ্ট করলে কী হয়, সেটি সত্যিকার অর্থেই কিছু আলামত পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে তো কোনো ধরনের অনৈক্য ছিল না, এক কাতারে ছিলাম। তারপরে যখন আমরা দেখলাম, প্রধান উপদেষ্টা বললেন, শুধুমাত্র এরা (ছাত্ররা) আমাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে’; তখন বিভক্তি শুরু হলো।
মবজাস্টিস প্রসঙ্গে জাহিদ বলেন, যে কথাগুলো মাঠে এসেছে, মবাক্রেসি অথবা মবজাস্টিস। যখনই কোনো বিনা বিচারে কিছু হচ্ছে; বলা হচ্ছে- কঠোরভাবে দমন করা হবে। কিন্তু কঠোরতার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মাঠে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে আছে, র্যাব আছে, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার পরেও আজকে দুষ্কৃতিকারীরা কীভাবে সেই মিটফোর্ড বলেন, মুরাদনগর বলেন, খুলনা বলেন, কক্সবাজার বলেন, সেই পটিয়া বলেন, সেই পাটগ্রাম বলেন, কচুয়া বলেন এবং গোপালগঞ্জের সর্বশেষ ঘটনা বলেন। কীভাবে এসব ঘটনা ঘটলো, আজকে দেশের মানুষ জানতে চায়। আপনারা কি এই সমস্ত ঘটনা সত্যি সত্যি প্রতিরোধ করার জন্য আন্তরিক? না, সত্যি আপনারা মুখে এক কথা বলেন, আরেক কথা মনে মনে পোষণ করেন।
তিনি বলেন, অনেক উপদেষ্টার কথা শুনলে মনে হয়, যেন উনারা সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু মনে রাখতে হবে- আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি নন; আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিলেন, তাদের সমর্থিত হয়ে একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে জনগণ আপনাদেরকে ফুলের মালা দেবে। আর যদি ব্যর্থ হন, অর্থাৎ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে আপনারা যদি টালবাহানা করেন; মনে রাখবেন যেই জনগণ স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে, সেই জনগণ আগামী দিনে কোন ইতিহাস সৃষ্টি করবে- সেটি আপনাদের মনে রাখা উচিত। কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো অনৈক্যের কথা বলবেন না, এমন কোনো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে জড়াবেন না। মনে রাখবেন ওই কথাটি যে- ‘দিল্লিও নয়, পিন্ডিও নয়, সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে, সবার আগে বাংলাদেশ’।
ভোরের আকাশ/জাআ