চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৪:৫৮ এএম
সংগৃহীত ছবি
৩৫ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। এবারের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৫২১ জন শিক্ষার্থী।
নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শিক্ষার্থীরা শাটল ট্রেন, ঝুপড়ি, ক্যান্টিন, হল ও কটেজগুলোয় আলোচনা করছেন সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থী ও ইশতেহার নিয়ে।
৯০৮ জন প্রার্থী, ১৩টি প্যানেল
কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে প্রার্থী ৪১৫ জন, হল সংসদে ৪৭৩ জন এবং হোস্টেল সংসদের জন্য ২০ জন।
ভিপি পদে ২৪ জন, জিএস পদে ২২ জন এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২১ জন। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে মোট ১৩টি প্যানেল।
ইতিহাসের সপ্তম নির্বাচন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর ৩৫ বছর পেরিয়ে আজ সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ নির্বাচন।
নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে দেখা গেছে ব্যাপক আগ্রহ। দীর্ঘ বিরতির পর প্রত্যক্ষভাবে প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশ নিতে পেরে তারা রোমাঞ্চিত।
ভোট ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ভোটগ্রহণ হবে নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদ ভবন এবং আইটি ভবনে। থাকছে ৬০টি কক্ষে ৭০০টির বেশি বুথ।
প্রতিটি বুথে ৪০০ থেকে ৫০০ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। ব্যালট থাকবে চার পৃষ্ঠার। একজন ভোটার চাকসুর জন্য ২৬টি ও হল/হোস্টেল সংসদের জন্য ১৪টি—মোট ৪০টি ভোট দিতে পারবেন। এজন্য নির্ধারিত সময় রাখা হয়েছে ১০ মিনিট।
ভোট গণনায় থাকছে ওএমআর প্রযুক্তি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও প্রতিটি ব্যালটে ২৪ ডিজিটের গোপন কোড। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ভোটকেন্দ্র।
নিরাপত্তা চার স্তরে
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। ক্যাম্পাসে মোতায়েন থাকবে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনী।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. মনির উদ্দিন বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে বারবার বৈঠক করা হয়েছে। কারচুপির সুযোগ নেই।”
চবি প্রক্টর ড. হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী জানান, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আলোচনায় শীর্ষ পদে প্রার্থীরা
ভিপি পদে আলোচনায় আছেন:
জিএস পদে আলোচনায়:
এজিএস পদে আলোচনায়:
নারী প্রার্থীদের উপস্থিতি
এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ৪৭ জন নারী প্রার্থী। শীর্ষ তিন পদে রয়েছেন মাত্র তিনজন নারী। এজিএস পদে রয়েছেন ছাবেকুন নাহার ও জান্নাতুল ফেরদৌস।
শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানো
স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী আনোয়ার হোসেন ভোটের আগমুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে সমর্থন জানিয়েছেন ছাত্রদল প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিককে।
আনোয়ার বলেন, “তৌফিক সবার চেয়ে যোগ্য। আমি একাডেমিক ব্যস্ততা ও বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।”
শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে নেতৃত্ব নির্বাচনের পাশাপাশি তারা চাইছেন বাস্তব পরিবর্তন।
আবাসনের সংকট, শাটল ট্রেনের ভিড়, হলের খাবারের মান, চিকিৎসা, নিরাপত্তা এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন—এসব ইস্যুতে এবার প্রার্থীরা বেশ সোচ্চার। ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন অধিকাংশ প্রার্থী।
চাকসু নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণ। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নতুন নেতৃত্ব গড়ার এই সুযোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্দীপনার ঝড় তুলেছে।
অনেকেই বলছেন, এটি কেবল একটি নির্বাচন নয়—এটি পরিবর্তনের সূচনা।
ভোরের আকাশ // হ.র