গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৪:২৭ পিএম
ফাইল ছবি
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা রানা মিয়া (৩৫)। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুর্বীষহ জীবন কাটছিল তার। এ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ঋণের বোঝা নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোর স্বপ্নে সেখান গিয়ে শিকার হন প্রতারণার। এ অবস্থায় সড়ক দুর্ঘনায় মারা যান প্রাবাসী রানা মিয়া। তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শুরু হয় শোকের মাতম। বাঁকরুদ্ধ হয়ে পড়ে স্ত্রী-সন্তানেরা।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের পলুপাড়া গ্রামের নিহত রানার বাড়ি দেখা গেছে- স্বজনদের আহাজারির দৃশ্য। গত সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তার মরদেহ রাতে পৌঁছাছে গ্রামের বাড়িতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোবিন্দগঞ্জের কাটাবাড়ী ইউনিয়নের পলুপাড়া গ্রামের মৃত জামেদ আলীর ছেলে রানা মিয়া দেড় বছর আগে সৌদি আরবে যান। স্থানীয় সেলিম মিয়া নামের এক দালালের মাধ্যমে তিনি বিদেশ যান। এজন্য নিজের ৬ শতক ভিটেমাটি বিক্রির ৩ লাখ টাকা ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আরও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন।
এরপর সৌদিতে গিয়ে রানা মিয়া বুঝতে পারেন তাকে ভালো কোম্পানিতে চাকরি নয়, বরং ট্যুরিস্ট ভিসায় পাঠানো হয়েছে। ভিসার মেয়াদ ও শর্ত অনুযায়ী কোনো স্থায়ী চাকরি করা যায় না। দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করিয়ে পুরো বেতন নিজেরা নিয়ে নেয়। এভাবে চলতে থাকে কয়েক মাস। প্রতারণার বিষয়টি বুঝে তিনি একাধিকবার দালাল সেলিম মিয়াকে জানালেও কোনো সাহায্য পাননি।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বেকার ও অসহায় অবস্থায় পড়ে রানা মিয়া আবার দেশের বাড়ি থেকে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে ৬০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। সেই টাকায় একজন ব্যক্তির অধীনে ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেলযোগে ফুড ডেলিভারির কাজ শুরু করেন। এই কাজ করতে গিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর এক সড়ক দুর্ঘটনায় রানা মিয়া মারা যান।
এদিকে রানা মিয়ার মৃত্যুর খবরে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। বহু চেষ্টায় মরদেহ ঢাকা বিমানবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ আনা হয় তার গ্রামের বাড়ি পলুপাড়া গ্রামে। বাড়িতে পৌঁছানো মাত্রই শুরু হয় কান্না আর আহাজারি।
এ বিষয়ে নিহত রানা মিয়ার স্ত্রী আরেফা বেগম জানান, তার দুই শিশু সন্তান আরাফাত ও রাফিকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। এতদিন বড় ভাইয়ের বাড়িতে কষ্টে দিনাতিপাত করতেন। আশা ছিল, স্বামী বিদেশে পরিশ্রম করে টাকা পাঠাবেন। কিছু বছর পর ফিরে এসে আবার জমি কিনবেন। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সব স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। এখন কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন এই প্রশ্নই তার চোখেমুখে।
গোবিন্দগঞ্জের কাটাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জোবায়ের হাসান মো. শফিক মাহমুদ বলেন, রানা মিয়ার মৃত্যুর খবরটি খুবই বেদনাদায়ক। পরিষদের পক্ষ থেকে তার পরিবারে সহযোগীতার চেষ্টা করা হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ