নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫ ০২:২৪ পিএম
নওগাঁয় মুকুল ভরা গাছে আম নেই, দুশ্চিন্তায় চাষিরা
প্রথম প্রথম যখন আম গাছে মুকুল দেখা যায়, তখন কতই না খুশি ছিল কৃষকদের মনে। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনে ফিঁকে হয়ে উঠেছে তাদের সেই হাসি। বসন্তের আগমনে নওগাঁর প্রতিটি আম বাগান এ বছর মুকুলের স্নিগ্ধ সৌরভে মোড়ানো ছিল। গেল কয়েক বছরের তুলনায় বাগানগুলোতে এ বছর মুকুল এসেছিল সবচেয়ে বেশি। উচ্চ ফলনের স্বপ্ন বুনেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু গত ১৫ দিনের ব্যবধানে নওগাঁর প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ৭০-৮০ শতাংশ বাগানে এখন গত বছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে। উকুন পোকা, তীব্র খরা এবং আবহাওয়াজনিত কিছু সমস্যার কারণেই বাগানগুলোর এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকরা। বাগানের এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন আম চাষিরা। নওগাঁর অধিকাংশ আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা এবং নিয়ামতপুর উপজেলায়।
সম্প্রতি পোরশা, সাপাহার এবং পত্নীতলার আম বাগান গুলো ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। বাগানের ৮০ শতাংশ গাছেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ আমের দেখা মিলছে না। গত মৌসুমের তুলনায় বাগানগুলোতে এবছর ১০-১৫ শতাংশ আম রয়েছে। এই পরিমাণ আমে উৎপাদ খরচ উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ জেলার কৃষকরা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বগানে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার টন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গত বছর জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল, যা থেকে উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। গেল বছরের তুলনায় জেলায় এ বছর ২০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তিলনা ইউনিয়নের বাদ-দমদমা গ্রামের আম চাষি মফিজ জানান, নিজস্ব ৮ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত নেই। যার কারণে উকুন পোকার আক্রমণ অনেক বেশি। বাগানে কীটনাশক স্প্রে করেও পোকা তাড়ানো যাচ্ছে না।
গত বছর বাগান থেকে আম বিক্রি করে সাড়ে ৬ লাখ টাকার মতো পেয়েছিলাম। শ্রমিক, কীটনাশক, পরিবহন এবং সেচ খরচসহ গত বছর প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিল। এ বছর তীব্র তাপদাহের কারণে অধিকাংশ মুকুলই ঝরে গেছে। গতবারের তুলনায় বাগানে এ বছর আমের পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু খরচ গত বছরের মতোই হবে। খরচ উঠাতে পারব কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় আছি।
পোরশা উপজেলার গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নের চাচাইবাড়ী গ্রামের আমচাষি মতি বলেন, নিজস্ব ৯ বিঘা জমিতে আম্রপালি আমের বাগান রয়েছে। এবছরের মতো উকুন পোকা আগে কখনো দেখিনি। ৯ বিঘা বাগানে এখন পর্যন্ত কীটনাশক এবং অন্যান্য খরচ মিলায়ে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। বাগানের এই পরিস্থিতি দেখে খুব হতাশার মধ্যে আছি। আম উঠানোর আগ পর্যন্ত এখনো অনেক খরচ হবে। এই পরিমাণ আম দিয়ে খরচের টাকা উঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে।
জেলার সপাহার উপজেলার বাহাপুর গ্রামের আমচাষি রাকিব বলেন, বাগানে গত বছরের তুলনায় আম নেই বললেই চলে। এ বছর যে মুকুলগুলো প্রথম দিকে এসেছিল সেগুলোতে শুধু আম হয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের মুকুলের সকল আম তাপমাত্রার কারণে ঝরে গেছে। গতবার থেকে এ বছর ফলন কম হবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গতবছর মার্চ মাসে যে তাপমাত্রা ছিল তার থেকে এ বছর মার্চ মাসে তাপমাত্রা কম ছিল। আর বছরের এই সময়টাতে তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে। মুকুলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমের গুটির পরিমাণ বেশি তাই ঝরে পড়ে যাচ্ছে। বাগানে যে আম রয়েছে তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ