নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫ ০৩:২০ পিএম
ছবি : ভোরের আকাশ
স্বামী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়েছেন ছিয়ারন নেসা (৮৫)। বুকের দুধ খাইয়ে মানুষ করেছেন আড়াই মাস বয়সী নাতনি কমলাকে। নিজের ৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৮ বছর আগে সেই নাতনির স্বামীকে সৌদি আরব পাঠিয়েছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই নাতনিই এখন বৃদ্ধ নানিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।
অন্য দিকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ঠাঁই হচ্ছে না ছেলে বাবু মোল্যার বাড়িতে। ঘরবাড়ি, জায়গা জমি হারিয়ে অসহায় বৃদ্ধ নানি নিরুপায় হয়ে এক মুঠো ভাতের জন্য গ্রামের মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের চরশালিখা গ্রামে। এখন ছিয়ারন নেসা ভিটেমাটি হারিয়ে এক মুঠো ভাতের আশায় গ্রামের এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ছিয়ারন নেছা বলেন,‘নাতনি কমলাকে ছোট থেকে আমি বড় করেছি। সে আমার জমি নিয়ে গেছে ফাঁকি দিয়ে।আমি তারে পাঁচ কানি জমি দিতে চেয়েছিলাম।সে আমার সব নিয়ে গেছে। আমি কিছু ঠিক পায়নি।পরে শুনি আমার সব জমি নিয়ে গেছে। আমার জমি নিয়েছে আবার আমারে খেদায় (বের করে) দিয়েছে। আমার জমি ছয়াল কে দি- নাই, মায়েকে ও দি- নাই।এহন আমারে ছেলেরা ও দেহে না, মেয়েরা ও দেহে না।আমি ঠেলা খেয়ে বেড়ায়।গ্রামের মানুষ আমারে দেহে খাতি দেয়।’
চর শালিখা গ্রামের মো. মুরাদ শেখ বলেন,‘আমরা গ্রামবাসী ছিয়ারন নেসাকে তার নাতনি কমলার বাড়িতে দিয়েছি। তবে কমলা তার নানিকে রাখবে না। আমরা যারা তাকে বাড়িতে উঠায় দিয়েছি, সেই কয়জনের নামে থানায় অভিযোগ করেছে। এখন দারোগা এসে আমাদের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।’
প্রতিবেশীরা জানান,কমলার যখন দুই মাস বয়স তখন থেকে তার নানি তাকে মানুষ করেছে। বড় হলে তাকে বিয়ে দিয়েছে। তার নানির কাছে সে পাঁচ কানি জমি চেয়েছে। নানি সেটি দিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে কমলা ও তার স্বামী তার নানির কাছ থেকে অন্য জমিও লিখে নিয়েছে।
প্রতিবেশী ইয়াদুল শেখ বলেন, কমলার জন্য তার নানি কি না করেছে। তার স্বামীকে জমি বিক্রি করে বিদেশ পাঠিয়েছে। তিন মাস বয়স থেকে লালন পালন করেছে। তার চার সন্তান বৃদ্ধ মহিলা মানুষ করছে। এখন বৃদ্ধ মহিলা দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। পরের বাড়ি ভিক্ষা করে খায়। এই মহিলা এখন খুব অসহায়।
বৃদ্ধা ছিয়ারন নেছের ছেলে বাবু মোল্যা বলেন, তার এত সম্পত্তি অন্য লোকের নামে লিখে দিয়েছে। তাই মনের রাগে খোঁজ নেই আমরা।
বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সাখা কাজী বলেন,কমলা হচ্ছে ছিয়ারুনের মেয়ের মেয়ে।কমলার যখন বয়স ৩ মাস তখন তার মা মারা যায়। সেই থেকে কমলাকে তার নানি বড় করে। তার পর গ্রামের সাইফুল শেখের সাথে তাকে বিয়ে দেয়। এর পর কমলার নানি কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে সাইফুলকে বিদেশ পাঠায়।পরে নানির যে বাকি সম্পত্তি ছিল ওই কমলা কবলা দলিলে লেখে নেয়। তার ছেলে বাবু মোল্যাকে একটু জমিও দেয়নি। এখন কমলা তার নানীকে ভাত কাপড় দেয় না। গ্রামের মানুষের বাড়ি খেয়ে বেড়ায়।
তার নানির এহেন অবস্থা দেখে গ্রামের মানুষ কমলাকে বলেন,তোর নানীকে ভাত দিতে হবে। অথবা তার জমি ফেরত দিতে হবে। এই অবস্থায় কমলা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।এখন জানতে পারি আমিসহ গ্রামের কয়েকজনের নামে চাঁদা দাবির অভিযোগ দিয়েছে।
অভিযুক্ত কমলা রানি বলেন, জমি লিখে দিয়েছে অনেক আগে। ২০ বছর ধরে নানি আমার সাথে খায়। গ্রামের দলাদলির কারণে কতিপয় মানুষের পরামর্শে নানি এহেন অভিযোগ করছেন। কিছু মানুষ নানীকে ভাত কাপড় দিতে হবে দাবি করে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।আমি তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি।
নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, নানির সম্পত্তি লিখে নিয়ে খেতে দেয় না৷ এ ঘটনাটি আমরা অনুসন্ধান করছি।অনুসন্ধান করে সঠিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনায় কমলাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের ও একটি অভিযোগ পেয়েছি।
ভোরের আকাশ/মো. আ.