শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫ ০৪:০৪ পিএম
শেরপুরে শিশু কবিরাজের দোয়া নিতে মানুষের ঢল
হঠাৎ চার বছরের এক শিশু কবিরাজের আবির্ভাব হয়েছে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া গ্রামে। মাত্র চার বছরের ওই শিশুর ঝাড়ফুঁক দেওয়া পানি ও তেল ব্যবহার করে সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন অসুস্থ রোগীরাÑ এমন বিশ্বাসে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন তেল ও পানি পড়া নিতে। ভিড় হওয়ায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হচ্ছে পানি পড়া। তবে চিকিৎসক ও সচেতন মহল বলছেন, ‘এটা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়।’
শ্রীবরদী উপজেলার লংগরপাড়া গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল মুন্সীর দুই ছেলে ও এক মেয়ের সর্বকনিষ্ঠ চার বছরের শিশু পুত্র লাবীব। তার মা ফিরোজা বেগম পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। ডাক্তারের ওষুধ খেয়েও ব্যথা কমছিল না। এ অবস্থায় শিশু লাবীবের পানি পড়া আল্লাহর নাম নিয়ে পান করালে ব্যথা মুক্ত হন। তার আত্মীয় অনেকেই পানি ও তেল পড়া নিয়ে পান করে ও মালিশ দিয়ে ভালো হয়েছেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় ওই শিশু কবিরাজের বাড়িতে গত দুই সপ্তাহ ধরে মানুষের ভিড় বেড়েই যাচ্ছে। সবাই আসছেন পানি আর তেল নিতে। জটিল ও কঠিন রোগের মুক্তি মিলছে এমন দাবি রোগী ও তাদের স্বজনদের।
রোগমুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজার হাজার মানুষ। বাবা ও স্বজনদের কোলে চড়ে শিশু কবিরাজ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ-মহিলাদের পানি ও তেলের বোতলে ফুঁ দিচ্ছে। এতেই সন্তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফিরছেন রোগীরা। আদৌ এতে রোগ সারবে কি না জানেন না আগত লোকজন। এ বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
এ সময় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নারী ও পুরুষ রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, অনেক অসুস্থ রোগী ডাক্তারের চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েও এখানে এসে সুস্থ হয়েছেন। এমন খবর শুনে আমরাও এসেছি। আশা করি আমরাও সুস্থ হবো।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার দ্বিতীয়বারের মতো স্ট্রোক হওয়ার পর একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারতাম না। এই শিশু কবিরাজের চিকিৎসায় আমি এখন সুস্থ। এখন লাঠি ছাড়া দ্রুত হাঁটতে পারি।’
শিশুটির বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে শত শত মানুষের রোগ ভালো করেছে বলে রোগীরা জানিয়েছেন। তার এই ক্ষমতা আল্লাহ প্রদত্ত। প্রথমে সে তার মাকে চিকিৎসা করে ভালো করেছে। পরে সুস্থ করেছে এলাকার আঘাতপ্রাপ্ত কয়েকজন ফুটবল খেলোয়াড়কে। এরপর জানাজানি শুরু হলে মানুষের ভিড় জমে। আল্লাহর নাম নিয়ে আমার ছেলে ফুঁ দিলে অনেকেই সুস্থ হয়ে যান, তাই হাজার হাজার লোক আসেন। তবে আমার ছেলে আজ পর্যন্ত কারো কাছ থেকে একটি টাকাও নেয়নি।’
তিনি আরও জানান, তিনি চান তার ছেলে একজন আলেম হয়ে উঠুক এজন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। ভোরের আকাশ/এসআই
জামালপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ নাদিম হাসান (এফআরসিএস) বলেন, ‘চিকিৎসক ও সচেতন মহলের মতে, এগুলো কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো ভিত্তি নেই।’
রোগী ও স্থানীয়রা জানান, এ শিশু কবিরাজ ঝাড়ফুঁকের জন্য কোনো টাকা-পয়সা নেন না। এজন্য চারপাশ থেকে আসছেন মানুষ। সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বজনরা। ঝাড়ফুঁক বন্ধ করার পরও মানুষের ঢল কমেনি। ফলে ঝাড়ফুঁক বন্ধ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
ভোরের আকাশ/এসআই