কোরবানির হাট কাঁপাতে প্রস্তুত ‘কালা বাবু’
কোরবানির ঈদ এলেই দেখা মেলে বাহারি নাম ও বিশাল আকৃতির গরুর। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। গরুটি শান্ত প্রকৃতির ও কালো রংয়ের হওয়ায় তার নাম রাখা হয়েছে ‘কালা বাবু’। ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার 'কালা বাবু' গরুটি আসন্ন কোরবানির জন্য প্রস্তুত। পুরো শরীরটাই কালো আর বিশাল দেহ হওয়ায় গরুটির নাম রাখা হয়েছে ‘কালা বাবু’। ওজন ২০ মণ হবে ধারণা গরুটির মালিকের। কালা বাবুকে একনজর দেখতে গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। এলাকার মানুষ ধারণা করছেন, এটিই উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু।
গরুটির মালিক রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন। সরেজমিনে গেলে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, সাড়ে বছর আগে গ্রামের একজনের কাছ থেকে ফ্রিজিয়াম জাতের কাল রঙের এ ষাঁড় বাছুরটি কিনেছিলাম। তার পর থেকে আমি গরুটির লালন পালন করি। খুব শান্ত স্বভাবের। শখ করে নাম রাখি ‘কালা বাবু'। এর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রয়েছে কাচা ঘাস, ভুসি, চালের কুড়া, ভুট্টা, অ্যাংকর, খৈল । তার পেছনে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৭শ টাকা। পাইপ দিয়ে প্রতিদিন ২-৩ বার গোসল করাতে হয়। গরমে আরামের জন্য ফ্যান ও মশা তাড়াতে দৈনিক ৪টি করে কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে।
মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘খুব শখ করে সন্তানের মতো লালনপালন করছি। এবারের কোরবানির ঈদে বিক্রি করে দেব।’ কেমন দাম চান? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম ৬ লাখ টাকা। যে বা যারা কালা বাবুকে নেবেন তারা নিজেরাই দেখে মেপে দাম করে নিয়ে যাবেন।
তিনি আরও জানান উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট নেকমরদ বাজার রবিবারে তিনি গরুটিকে হাটে তুলবেন। সেখানে যে কেউ দেখে শুনে দাম করে নিতে পারবেন। অথবা গরুটি কিনতে ০১৭১৯-৩৪৬৬১৮ গরুর মালিকের এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।
রাণীশংকৈল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুপম চন্দ্র মহন্ত বলেন, রাণীশংকৈল উপজেলায় এখন পর্যন্ত জানা মতে মনোয়ার হোসেনের ‘কালা বাবু’ গরুটিই সবচেয়ে বড়। কোরবানির পশুর হাটে এটি আকর্ষণীয় হবে বলে আমরা মনে করছি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
বর্ষা এলেই প্রকৃতির পরতে পরতে যে ফুলটি নীরবে জানান দেয় তার আগমন, সেটি হলো কদমফুল। বাংলাদেশের চারিত্রিক প্রকৃতির বর্ষা ঋতুকে স্বাগত জানানোর এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছে এই ফুল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকালের প্রতিটি দিনে কদমফুল তার রঙ, ঘ্রাণ ও উপস্থিতিতে মাতিয়ে রাখে প্রকৃতিকে।গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে রাস্তার পাশে কিংবা বাড়ির আনাচে-কানাচে উঁকি দিচ্ছে অসংখ্য কদমগাছ। তার শাখা-প্রশাখায় সাদা-হলুদের মিশেলে ফুটে উঠেছে মনকাড়া কদমফুল। সবুজ পাতার আড়ালে লুকানো এই ফুলগুলো দেখে থমকে যাচ্ছেন পথচারীরা। যেন একটুকরো কবিতার মতো প্রস্ফুটিত হয়েছে প্রকৃতির বুকে। শুধু সৌন্দর্যই নয়, গ্রামীণ জীবনে কদমফুল ছিল একসময় খেলার সরঞ্জাম। ছোটরা ফুলের ভেতরের গোল অংশ দিয়ে বল বানিয়ে খেলতো, কানে গুঁজে হাঁটতো মাঠে-ঘাটে। এখনও কিছু এলাকায় দেখা যায় শিক্ষার্থীরা হাতে কদমফুল নিয়ে বিদ্যালয়ের পথে রওনা দিয়েছে। মেয়েরা খোঁপায় গুঁজছে কদমফুল, তরুণ-তরুণীরা প্রিয়জনকে দিচ্ছে প্রেমের বার্তা হিসেবে।কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী দক্ষিণপাড়া গ্রামের প্রকৃতি প্রেমিক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, ‘ছোটবেলায় কদমফুল ছিল আমাদের খেলার অন্যতম অনুষঙ্গ। এখন সেই কদমগাছ আর দেখা যায় না। কদমফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় না, এমনকি ব্যক্তিগত উদ্যোগও খুব কম দেখা যায়।’তিনি আরো বলেন, ‘এই গাছ দ্রুত বড় হয় এবং কাঠ নরম হওয়ায় এটি জ্বালানি কাঠ হিসেবেও খুব উপযোগী। তাই ব্যক্তি ও সরকারি উদ্যোগে এর রোপণ বাড়ানো উচিত।’বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের নেতারা জানান, বর্ষা মানেই কদমফুল। এই ফুল শুধু একটি ঋতুকে নয়, আমাদের শৈশব, স্মৃতি, প্রেম, প্রকৃতি এবং সম্ভাবনাকে একসঙ্গে ধারণ করে। কদমগাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাওয়ায় এ ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। সময় এসেছে এই গাছকে ভালোবাসার, রোপণের এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর মায়াময় গল্পগুলো পৌঁছে দেওয়ার।উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘কদমফুল শুভ্রতার প্রতীক। এটি বর্ষা মৌসুমে বাঙালির মনে ভিন্নধর্মী আবেগ সৃষ্টি করে। কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় কদমফুলের উল্লেখ রয়েছে। এটি প্রকৃতির সঙ্গে আত্মিকভাবে যুক্ত।’ তিনি জানান, কদম গাছের কাঠও অনেকভাবে ব্যবহারযোগ্য।জেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ বলেন, ‘ছোটবেলায় আমাদের খেলার অন্যতম অংশ ছিল কদমফুল। এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। তাই কদম গাছ সংরক্ষণ ও পুনঃরোপণের জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভিতরে ঢুকে চিকিৎসাধীন দম্পতি রুমি বেগম (৩৮) ও আব্দুল করিম (৪২) এর উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে । আহত দম্পতি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পাঁচগাছি ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা।রোববার (১৫ জুন) ভোর রাতে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৭ নং রুমের মহিলা ওয়ার্ডে দূর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এ ঘটনা কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগীর ভাই মোঃ আব্দুস সালাম। বর্তমানে আহত দম্পতি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।স্থানীয়রা জানান, এদের কোন কাজ নেই, এরা তিনজনই ঢাকায় কিশোর গ্যাং এর সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলেন।এদিকে হাসপাতালের ভিতরে হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।প্রত্যক্ষদর্শী মোছাঃ আকলিমা বেগম জানান, শনিবার ভোর রাতে সবাই যখন ঘুমে আছন্ন। অপরিচিত ৬-৭জন কিশোর, যুবক দলবেধে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে প্রবেশ করেন। পরে ঘুমন্ত অবস্থায় রুমি বেগমের উপর বেধড়ক মারপিট ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ সময় রুমি বেগমের স্বামী মোঃ আব্দুল করিম বাঁধা দিতে গেলে দূর্বৃত্তরা চড়াও হয়ে লাটি সোটা কিল ঘুষি দিয়ে নগদ টাকা কেড়ে নিয়ে দ্রুত বের হয়ে যায়।এমন অবস্থায় রুমের ভিতর আতঙ্কিত হওয়া অনান্য রোগীর ও স্বজনরা বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। যা সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষিত আছে।এর আগে, শনিবার বিকেলে পাঁচগাছী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে পাওনা ২ হাজার দুশো টাকা জেরে আঃ করিমের বাড়িতে ঢুকে রুমি বেগমকে শারীরিক নির্যাতনের ও কপালে চাকু দিয়ে আঘাত করেন তিন কিশোর সোহেল, ইব্রাহিম, জামিল। এতে রুমি বেগমের কপালে ৪টি সেলাই পড়ে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা তিনজনকে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয়।পরে দুপক্ষের সিদ্ধান্তে পুলিশের উপস্থিতিতে কিশোরদের অভিভাবকের জিম্মায় দেন পুলিশ প্রশাসন।ঘন্টা তিনেক পার না হতে ভোর রাতে হাসপাতালে আবারো হামলা চালায়। এ ঘটনায় আহত দম্পতির ছোট ভাই মোঃ আব্দুস সালাম কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।আহত রুমি বেগমের স্বামী মোঃ আব্দুল করিম জানান, আমার মেয়ে জামাইয়ের কাছে ২ হাজার ২ টাকা পান ভেলাকোপা সোহেলরা। গতকাল রবিবার টাকা দেয়ার কথা ছিল। এর দুদিন আগে সন্ধ্যায় ওই ছেলেগুলো বাড়ির ভিতরে ঢুকে অকথ্য গালিগালাজ ও চাকু দিয়ে আমার স্ত্রীর কপালে চাকু মারে। স্ত্রীকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ওরা হাসপাতালের ভিতরে আমার ও আমার স্ত্রীর উপর হামলা করে।আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ড. মোঃ শহিদুল্লাহ বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। আইনগত ব্যবস্থা নিতে সকল প্রকার সহযোগিতা থাকবে বলে জানান তিনি।কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল্লাহ জানান, এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে, দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।ভোরের আকাশ/জাআ
প্রায় আড়াই ফুট গভীর একটি গর্তে শিশু সন্তান গোপালকে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শিশুটির মাথা ও হাত দুটি যাতে বাইরে থাকে এমন করে গর্তটি করা হয়েছে। ক্ষুধার সময় প্রচণ্ড কান্নাকাটি করলে মা শিশুটিকে গর্তে ঢুকিয়ে খাওয়ান। দিনের বেশিরভাগ সময় কান্না করলে তাকে ওই গর্তের ভেতরে রেখে বিভিন্ন বিনোদন দেখিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করেন মা। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে।জানা গেছে, চা শ্রমিক দম্পতির একমাত্র সন্তান গোপাল সাঁওতাল। শিশুটির বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। জন্ম থেকে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। শিশুটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারে না। বসিয়ে রাখলে সে ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকে। তাই খাওয়ানো ও অন্যান্য পরিচর্যার জন্য মা সনচড়িয়া সাঁওতাল প্রায় ৬ মাস আগে ঘরের মেঝেতে ছোট একটা গোলাকার গর্ত করেছেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন গোপালের দাদি কল্পনা সাঁওতাল। মা ঘরের কাজ সামলানোর পাশাপাশি সারাক্ষণ ছেলেকে দেখে রাখেন। বাবা অনিল সাঁওতাল মুরইছড়া চা বাগানে ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। সম্প্রতি কুলাউড়ার অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ ব্যক্তিগত ফেসবুকে এই সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন। এরই সূত্র ধরে রোববার বিকেলে মুরইছড়া চা বাগানের স্কুল টিলা এলাকায় যান ভোরের আকাশ প্রতিবেদক।সরেজমিনে গিয়ে তিনি দেখেন, রোদ, ঝড় কিংবা বৃষ্টি মাড়িয়ে একটি জীর্ণশীর্ণ ঘরের ভেতর তাদের বসবাস। ঘরের বাহিরে একমাত্র সম্বল কয়েকটি গবাদিপশু রয়েছে। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে প্রতিবন্ধী শিশু গোপালকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।আলাপকালে শিশু সন্তান গোপাল সাঁওতালের মা সনচড়িয়া সাঁওতাল জানান, জন্ম থেকেই তার সন্তান শারীরিক, বুদ্ধি, বাক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। চিকিৎসকরা বলেছেন শিশুটিকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। কিন্তু নিয়মিত নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের। ছেলেটির কান্না আর কষ্ট আমি কী করে সহ্য করি। তাই বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য আড়াই ফুট গভীর এই গর্তটি করেছি। সেখানে ঢুকালে ছেলেটি একটু দাঁড়াতে পারে।কুলাউড়ার অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিবারে প্রতিবন্ধী ছোট্ট শিশুটি বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকবে সেটা কারও কাম্য হতে পারে না। তার চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায় ছাড়াও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।স্থানীয় কর্মধা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিলভেস্টার পাটাং বলেন, শিক্ষকের মাধ্যমে জেনে ওই পরিবারের খোঁজ নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেছি। আশা করছি খুব দ্রুত সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়া যাবে।উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রানেশ চন্দ্র বর্মা ভোরের আকাশকে বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি, শিশুর প্রতিবন্ধী ভাতার কাজ প্রক্রিয়াধীন এবং এ মাসেই ভাতার টাকা পাবে। রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য করা হবে। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র মৌলভীবাজার থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও উপকরণ সরবরাহ করা হবে।কুলাউড়ার ইউএনও মো. মহিউদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, বিষয়টি খুবই মানবিক। প্রতিবন্ধী শিশু গোপাল সাঁওতালের খোঁজ নিয়ে সমাজসেবা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে সরকারের পক্ষ থেকে ভাতার ব্যবস্থা করব।ভোরের আকাশ/এসএইচ
কয়দিন আগে সাতোয়া (সাতদিন ব্যাপী বৃষ্টি) নাগচিলো। সাতোয়ায় সিদ্ধ ধান টানাটানি করতে করতে ধান গুল্যা প্রায় নষ্ট। খড় গুল্যায় অর্ধেক পচে গেছে। বাড়ির উঠানে পঁচা খড় উল্টাতে উল্টাতে এসব কথা বলছিলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল পাকারমাথা এলাকার বাসিন্দা লতিফা বেগম।এবার ভয়েস কল আসলে হামার (আমার) এই ক্ষতি হলো না হয়- যোগ করেন লতিফা। ভয়েস কল কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন- আগে মাসে মাসে মোবাইলে ভয়েস কল আসতো। ভয়েস কলে বন্যা, খড়া, বৃষ্টি, আবহাওয়ার আগাম খবর দিতো। জমিতে কখন কোন সার, কি বীজ দিতে হবে সব বলে দিতো। এতে আমাদের অনেক উপকার হতো।লতিফার মতো উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি এ দুই উপজেলার অসংখ্য মানুষ ভয়েস কলের উপকার পেয়েছেন। কেননা, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার মধ্যে চারটি যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। বিশেষ করে সাঘাটা ও ফুলছড়ি দুই উপজেলা বেশী দূর্যোগ প্রবণ।সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার মানুষ অকাল কিংবা প্রলম্বিত বন্যা-খড়া, অনাবৃষ্টি, নদীভাঙ্গনসহ নানা রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ তাদের নিত্যসঙ্গী। তারপরও প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে তাদের মধ্যে তেমন কোন ধারণা ছিল না। মূলত: অনুমানের ওপর ভর করে যেমন- পিঁপড়ার সারি দেখে বৃষ্টি, উত্তুরে কিংবা দখিনা বাতাসে বন্যার কমা-বাড়তি অনুমান করতো তারা।এখন অনুমানের সেই দিন আর নেই। সাঘাটার খামার পবনতাইড় বালুবাড়ি গ্রামের রুমি বেগম, চিনিরপটল ঝোলাপাড়ার পুতুল রানী, মাঝিপাড়ার সোনালী রানী, খামার পবনতাইড় পালপাড়ার শিরিনা বেগমের মতো অনেকেই এখন প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে শুধু সচেতন নয়। কোন দূর্যোগের আগে কিংবা পরে কি করতে হবে সবই এখন তাদের জানা। আর তারা এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন গাইবান্ধার বেসরকারী সংগঠন এসকেএস ফাউন্ডেশন বাস্তবায়িত প্রকল্প সুফলের কল্যাণে।চিনিরপটল ঝোলাপাড়ার পুতুল রানী বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গ্রামে গ্রামে ২০ থেকে ২২ জন নারী-পুরুষ নিয়ে এসকেএস ফাউন্ডেশন থেকে গ্রুপ তৈরি করা হয়। তারপর উঠান বৈঠক, আলোচনা, সভা, সেমিনার, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা গ্রামের অনেক নিরক্ষর মানুষ প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে সচেতন হই।এরপর গ্রামের প্রতিটি গ্রুপের সদস্যের কাছে সুফল প্রকল্পের মাধ্যমে আসতে শুরু করে ভয়েস কল। ভয়েস কলে জানানো হয় বন্যার আগাম বার্তা। সেই বার্তা পেয়ে আশেপাশের মানুষকে মাইকে ঘোষণার মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয় স্ব স্ব এলাকার গ্রুপের সদস্যরা।বার্তা পাওয়ার পরপরই শুরু হয় নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতির কাজ। নারী, পুরুষ ও কিশোরীদের জন্য তৈরি হয় আলাদা আলাদা থাকার জায়গা। যেখানে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয় বিশেষ ব্যবস্থা। এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার রাস্তা সংস্কার, আশ্রয়কেন্দ্রে সুপেয় পানি, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং গবাদী পশু রাখার জন্য নির্মাণ করা হয় অস্থায়ী শেড। আবার বন্যা পরবর্তী সময়ে ঘড়বাড়ি মেরামত, জীবানুমুক্ত করার কাজে ঝাপিয়ে পড়েন তারা। কথাগুলো বলছিলেন, পালপাড়ার শিরিনা বেগম।বন্যা পূর্বাভাস বা ভয়েস কল পাওয়ার আগে অর্থাৎ বর্ষা আসার আগেই আলগা চুলা তৈরি করা, শুকনো খাবার সংরক্ষণ, কাপড়, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন করা হয় গ্রামের মানুষকে। বন্যা-ভাঙ্গনের মতো নিদানকালের জন্য টাকা জমানোর ব্যাপারেও সজাগ করা হয় তাদের। নদ-নদী তীরবর্তী এসব এলাকার মানুষের একমাত্র সম্বল গবাদী পশু। বিশেষ করে বন্যার সময় গোখাদ্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় তাদের। মাঠ-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় প্রাকৃতিক খাবারের সব উৎস হারিয়ে টাকা দিয়ে গোখাদ্য কেনার সামর্থ থাকেনা তাদের। সেজন্য প্রতিটি গ্রুপের সদস্যকে হাতে কলমে গোখাদ্য তৈরি ও সংরক্ষনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।শুধু বন্যার সময় নয়, মাঝে মধ্যেই সুফল প্রকল্প থেকে ভয়েস কল আসতো গ্রুপের সদস্যদের কাছে। আসতো আবহাওয়ার খবর। যেমন জমিতে কোন আবহাওয়ায় সেচ, কীটনাশক বা সার প্রয়োগ করা যাবে আর কখন প্রয়োগ করা যাবে না- সে সম্পর্কে আগাম খবর আসতো ভয়েস কলে। সারের পাশাপাশি শৈত প্রবাহ ও খড়ার আগাম বার্তা এবং কোন মৌসুমে কোন ফসল আর কোন ধরনের বীজ বপন করতে হবে; সে বিষয়েও আগাম জানিয়ে দেয়া হতো এই ভয়েস কলে।সুফল-২ প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক (সাবেক) নুরুন্নাহার বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় জেলার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ৬ হাজার ৭শ ৫৭ জন মানুষকে ভয়েস কল সেবা পৌঁছে দেয়া হয়। ২ হাজার ৭শ ১০ জনকে আর্থিক সহায়তা, দুইটি ড্রামের ভেলা তৈরি, ৫টি বাঁশের সাঁকো, ৫টি আশ্রয় কেন্দ্রের রাস্তা মেরামত, এগারোটি ল্যান্ডগেজ ও একটি রিভার গেজ স্থাপন, ১০টি স্কুল কাম ফ্লাড শেল্টার মেরামত এবং হাইজিন কিডস বিতরণ করা হয়।এছাড়া দুইশ জনকে সাইলেজ ও হেলেজ পদ্ধতিতে গোখাদ্য তৈরির প্রশিক্ষণ এবং গবাদী পশুর জন্য ২২টি ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পে গবাদী পশুর সেবা দেয়া হয়।সাঘাটা উপজেলার উত্তর উল্যা বালুচর এলাকার কৃষক সবুজ মিয়া। কৃষি কাজ করে কোনো মতো স্ত্রী সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করেন। এই অভাবের সংসারে জন্মগ্রহন এক নবজাতক ছেলে সন্তান। নাম রাখেন নাঈম ইসলাম। বয়স যতই বাড়তে থাকে ততই নানা রকম সমস্যা দেখেন নাঈমের। বিশেষ করে হাত-পা বিকল অবস্থা দেখা দেয়। এই নাঈম বড় হওয়ার পর চলাফেরা করতে পারতেন না। তাই বন্যার সময় এলেই কষ্টে পড়েন সে। ঠিক তখনই তার পাশে এসে দাঁড়ায় সুফল। তাকে বন্যা কবলিত স্থান থেকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। যা এই প্রতিবন্দী নাঈমেরর জীবনে বড় সহায়ক হিসাবে কাজ করেছে।উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল গ্রামের ঝুমি বেগম বলেন, আগে বন্যা এলেই আমরা সব থেকে বেশি বিপাকে পড়তাম গরু ছাগল নিয়ে। কারণ বন্যা আসায় গোখাদ্য নিয়ে তেমন চিন্তা চেতনা থাকতো না। নিজের জীবন আগে বাঁচাবো, না গরু ছাগল বাঁচাবো। সেই দিক থেকে গোখাদ্য নিয়ে কিছুই অগ্রিম জানতাম না। পরে সুফল আসার পরে গোখাদ্য কি ভাবে বন্যার পূর্বে বানাতে হয় সে বিষয়ে জেনেছি। এখন বন্যা আসলেও আগের মতো আর গোখাদ্য নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।একই গ্রামের শিল্পী বেগম বলেন, আগে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পরেই আমরা যখন বাড়ি ঘড়ে চলে যেতাম, গিয়ে দেখতাম ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের সাপ দেখা যেত। তখন এই সাপের আতঙ্ক থেকে রক্ষা পেতে শুকনো মরিচের গুড়া বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু তারপরেও সাপের উপদ্রব কমতো না। আর এখন সুফল প্রকল্পের প্রশিক্ষণে আমাদের বলা হয়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই মিটিং করা হয় এবং বন্যার পানি যুক্ত স্থানে ব্লিচিং পাউডার, লাইফবয় সাবান টুকরো করে ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে দিলে সাপ থেকে নিরাপদ থাকা যায়।খামার পবনতাইড় গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগে বন্যা যখন আসতো কোনো খবরেই পেতাম না। ফলে কষ্টে ফলানো ফসলগুলো পানিতে তলিয়ে যেত। লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল এমনি ভাবে বানের জলে ভেঁসে যেত চোঁখের সামনে। কিন্তু সুফল আসার পরে তারা পেতে শুরু করেন ভয়েস কল। আর এই ভয়েস কলের মাধ্যমে আগাম আবহাওয়ার খবর পাওয়ার কারণে কৃষি ফসল চাষাবাদে তেমন আর ক্ষতি হয় না। তাই তো ভয়েস কলে খুশি এসব এলাকার কৃষকরা। এছাড়া বস্তায় এবং ঝুলন্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্পর্কেও এখন গ্রামের মানুষ সচেতন। গত বছরের ডিসেম্বরে সুফল প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সাথে বন্ধ হয় ভয়েস কলও। প্রকল্প বন্ধ হলেও বন্যার আগে ও পরে করনীয় সম্পর্কে গ্রামের মানুষ বেশ সচেতন। প্রকল্প থেকে পাওয়া জ্ঞান কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলার ফলে আর্থিক ক্ষতি কম হচ্ছে। তবে ভয়েস কল বন্ধ হবার কারণে এখন আর প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা আবহাওয়ার আগাম কোন খবর পাচ্ছেন না তারা।সুফল প্রকল্পের ফোকাল পার্সন খন্দকার জাহিদ সরওয়ার সোহেল জানান, এসকেএস ফাউন্ডেশন ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে গাইবান্ধার সাঘাটা, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় সুফল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এ প্রকল্প থেকে অন্তত: দুই লক্ষাধিক মানুষ প্রাকৃতিক দূর্যোগ সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন এবং পরোক্ষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছেন। ভয়েস কল চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।ভোরের আকাশ/জাআ