× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বরগুনায় চাপা কষ্টে তরমুজ চাষীরা

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫ ০৫:১৮ পিএম

বরগুনায় চাপা কষ্টে তরমুজ চাষীরা

বরগুনায় চাপা কষ্টে তরমুজ চাষীরা

মাঠজুড়ে তরমুজের সমারোহ, কৃষকের তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মাঠ থেকে বাজারে যাচ্ছে বরগুনার তরমুজ। এ বছর বাম্পার ফলনে কৃষক লাভের স্বপ্ন দেখলেও বাস্তবতা দেখাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। হাত ঘুরলেই বেড়ে যাচ্ছে তরমুজের দাম। চার হাত ঘুরে ১৫০ টাকার তরমুজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এতে মৌসুমের প্রথম ফসল হিসেবে বাজারে আসার পরেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, খুচরা বিক্রেতারাই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, যা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

সরজমিনে কৃষকের ক্ষেত, পাইকার, আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে জানা যায়, কৃষক থেকে খুচরা বিক্রেতা-এর মধ্যে ৪ হাত ঘুরে প্রায় চার গুণ বেশি দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। সাধারণত কৃষকদের কাছ থেকে তরমুজ কিনে থাকেন পাইকাররা, কখনো ক্ষেত চুক্তিতে, কখনো পিস হিসেবে। ক্ষেত থেকে পিস হিসেবে কেনা তরমুজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয় আড়তদারদের কাছে। খেত থেকে কৃষক প্রতি পিছ তরমুজ বিক্রি করছেন ১৫০ টাকায়। পাইকার ও আড়তদারদের হাতে পরে সেটি বিভিন্ন সাইজে ভাগ হয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে ১০০-৩০০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতা ৩০০ টাকায় কেনা তরমুজই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

এতে খুচরা বিক্রেতারা লাভ করছেন শতকরা ৬০-১৩০ ভাগ। আড়তদার আর খুচরা বিক্রেতা দ্বিগুণ লাভ করলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক, আর সিন্ডিকেটের গেরাকলে ভোক্তারা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চড়া দামে। কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, কৃষক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লাভ করা যায়। অথচ বাস্তবে খুচরা বিক্রেতারা ৬০-১৩০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করছেন।

বরগুনা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর তরমুজের আবাদ বেড়েছে। ১২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়া তরমুজের সম্ভাব্য বাজারমূল্য ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বরগুনায় নির্ধারিত ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।

এ বছর ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে তরমুজ চাষি আব্দুল মান্নান জানান, তিনি ১০ কানি জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। প্রতি কানিতে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ করে ৫০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে লবণগোলা এলাকার তরমুজ চাষি নয়ন মিয়া করে বলেন, আমরা এখানে তিন থেকে চার মাস কষ্ট করে ফসল ফলাই। এ বছর সার ও কীটনাশকের দাম বাড়তি। এছাড়া লেবার খরচ, খাবার খরচ সবকিছুই বেশি। কিন্তু পাইকাররা আমাদের থেকে মাত্র ৮০-১২০ টাকায় তরমুজ কিনছেন। অথচ  আমাদের তরমুজ বাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। আমরা সবসময় লসেই থাকি।

তরমুজ বিক্রির ধাপ নিয়ে পটুয়াখালী থেকে আসা পাইকার আবুল কালাম বলেন, তরমুজ পাকার সময় হলে আমরা কৃষকের জমি কিনি। স্থানীয় কানির হিসেবে ৪-৬ লক্ষ টাকা দরে এক কানি জমির তরমুজ কিনে থাকি। পরে সংগ্রহ, পরিবহন ও খাজনাসহ একেকটি তরমুজ ২০০ টাকার মতো খরচ পড়ে, যা গড়ে ২২০ টাকায় আড়তদারের কাছে বিক্রি করি। গত বছর প্রথমে তরমুজের দাম বেশী  থাকলেও পরে দাম কমে যায়। এ বছর দাম মোটামুটি ভালো আছে।

রমজানে বরগুনা বাজারের তরমুজের চাহিদা স্বাভাবিক আছে জানিয়ে আড়তদার আইয়ুব আলি খান বলেন, বাজারে তরমুজের চাহিদা স্বাভাবিক আছে। বড় তরমুজের চেয়ে মাঝারি ও ছোট তরমুজের চাহিদা বেশি। বর্তমানে বাজারে ১০০-২৫০ টাকার মধ্যে তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে বাজারে তরমুজের সরবরাহ কম তাই দাম বেশী দাবী করে জসিম নামের এক খুচরা তরমুজ ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে আগাম তরমুজ ছাড়া সব রকমের তরমুজ এখনো আসেনি তাই দাম একটু বেশি। আমি ১৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত তরমুজ কিনে বিক্রি করছি সাইজ অনুসারে ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। আমরা আড়তদারের থেকে তরমুজ কিনি যা ভালো হলেও আমাদের মন্দ হলেও আমাদের। কিন্তু বিক্রির সময় কাস্টমার খারাপ টা আর নেয় না। বাজারে তরমুজের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেন ক্রেতা আল-আমিন হিরা।

তিনি বলেন, এখন তরমুজের ভরা মৌসুম তাই বাজারেও পর্যাপ্ত পরিমাণ তরমুজ আছে। কিন্তু দামের দিক থেকে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। ২০০ টাকার একটি তরমুজ ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে তরমুজ এখন ভোগ্যপণ্য নয়, বিলাসিতার পণ্য হয়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে বরগুনার কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. শাহ্জাহান আলী বলেন, কৃষি বিপণন বিধি অনুযায়ী তরমুজের ক্ষেত্রে উৎপাদনের পর থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৩০% লাভ করতে পারবে। বাজারে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে, যা আমরা নিয়মিত তরকারি করছি। আমরা বাজারে গেলে দাম ঠিক থাকে আমরা চলে আসলেই আবার দাম বেশি রাখার চেষ্টা করে। আর ভোক্তা হিসেবেও আমরা সচেতন না হওয়ার সুযোগটা ব্যবসায়ীরা নিচ্ছে। ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।

খুচরা বিক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছেন জানিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সু চন্দ্র মণ্ডল বলেন, রমজানের শুরু থেকেই আমরা তরমুজের ক্ষেত থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত মনিটরিং করছি। ক্ষেত ও পাইকারের কাছে যে দামে বিক্রি হচ্ছে সেটা যৌক্তিক পর্যায়ে আছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দাম নিচ্ছেন। পাইকারি বাজারে বিক্রি হওয়া ২৭০ টাকার তরমুজ খুচরাতে ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

সংশ্লিষ্ট

নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র আইভী গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র আইভী গ্রেপ্তার

আইভীকে আটকে অভিযান, রাস্তা অবরোধে সমর্থকরা

আইভীকে আটকে অভিযান, রাস্তা অবরোধে সমর্থকরা

জৈন্তাপুরে মেঘালয় টি এস্টেটের ইজারা বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালিত

জৈন্তাপুরে মেঘালয় টি এস্টেটের ইজারা বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালন