ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৫ ০১:১৫ পিএম
বড়পুকুরিয়ায় আউটসোর্সিং নিয়োগে চরম অনিয়ম
আওয়ামী দোসর প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় ২৫ জন জনবল আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রত্যেকের নিকট হতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করে নিয়োগ প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে আউটসোর্সিং জনবল প্রায় ২৭৫ জন। তিনি নিয়োগ প্রদান করার পর প্রথমে তাদেরকে ঢাকার অফিসে ১০-১২ মাস বসিয়ে রাখেন, তারপর কয়লা খনিতে পোস্টিং দিয়ে থাকেন।
এই অভিনব জালিয়াতির কারণ কি? বাস্তবতা হলো, যারা টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছে তারা চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ খুলছে না। গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত (৫ আগস্ট ২০২৪ এর পট পরিবর্তনের পূর্বে) প্রধান কার্যালয়ে স্থাপিত বায়োমেট্রিক হাজিরা এবং ঢাকার লিয়াজো অফিসে রক্ষিত হাজিরা রেজিস্টার চেক করলে ২৭৫ জন জনবলের ব্যাপক গরমিল পাওয়া যাবে। কারণ তিনি বেশ কিছু তার নিকটতম আত্মীয়কে (যেমন : আপন ভাতিজা, আপন ভাগিনা ইত্যাদি) ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া, বগুড়ার ঠিকাদার সেলিমের দুই ছেলে এবং ঠিকাদার রাকিবের স্ত্রী ও বোনকে নিয়োগ প্রদান করেছেন। তারা অফিস না করে বাড়িতে বসে থেকে দীর্ঘদিন বেতন নিয়েছেন।
কয়লা খনির আশপাশের গ্রামগুলো যেমন- চৌহাটি, ভবানীপুর, দুর্গাপুর, ময়মনসিংহ ও জামালগঞ্জ ইত্যাদির কয়েকজন ড্রাইভারসহ এটেনডেন্ট পদে প্রায় ১০-১৫ জনকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়ে প্রথমে তাদেরকে ঢাকা লিয়াজো অফিসে পোস্টিং দিয়েছেন এবং ১০-১২ মাস পর প্রত্যেককে কয়লা খনিতে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলা কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি যদি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে, তবে এই খাতে বড় ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাবে।
জানা যায় যে, মো. সাইফুল ইসলাম সরকারের পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান প্রায় ৩ বছর কয়লা খনিতে দায়িত্ব পালনকালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১ জন লোকও নিয়োগ দেননি। আর সাইফুল ইসলাম সরকার তার দায়িত্ব গ্রহণের ২ বছরের মধ্যে ২৪-২৫ জনকে নানা কৌশলে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে কয়লা খনিতে গাড়ির চেয়ে ড্রাইভারের সংখ্যা অনেক বেশি, ফলে অনেক ড্রাইভার অফিসে এসে ডিউটি না করে মাস শেষে বেতন নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, মো. সাইফুল ইসলাম সরকার কয়লাখনির আবাসিক এলাকায় ২৮-৩০ বছর পুরোনো ৫০টির বেশি ফলদ বৃক্ষ কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই বিক্রয় করেছেন। তিনি গাছ কাটার বা বিক্রির পূর্বে বন বিভাগ/পরিবেশ অধিদপ্তর বা এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমতি না নিয়ে ফলদ বৃক্ষ কর্তন করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে এবং ফলদ বৃক্ষ বিক্রির কোনো অর্থ কয়লা খনি সংশ্লিষ্ট কোনো ডিভিশনের কোনো ব্যাংকে জমা করেছেন কি না, তা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ