বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় র্যালি।
‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি, এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আমার আগুন বুকে জ্বালি-এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস-২০২৫ পালিত হয়েছে। বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এর আয়োজনে দুপুর ১২টায় একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসন হলরুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাগত বক্তব্য ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মো. মোর্তজা মোর্শেদ, উপ-মহাপরিদর্শক (কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া। ) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘বাসা-বাড়িতে যারা কাজ করে এদের বেশিরভাগই শিশু। নিজেদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। শিশুশ্রম প্রতিরোধে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, পরিবার ও সমাজকে সচেতন করাও জরুরি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে হলে তাদেরকে স্কুলে পাঠাতে হবে, কাজে নয়। ’
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, মালিক প্রতিনিধি-এম এ হালিম, শ্রমিক প্রতিনিধি- মো: আজম বেপারী, এনজিও প্রতিনিধি- এস এম শাহিন (নির্বাহী পরিচালক, স্বনির্ভর ব্রাহ্মণবাড়িয়া), পুলিশ সুপার এর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এম এন রকিবুল রাজা (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেল)।
বক্তারা বলেন- চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কলকারখানা, পরিবহণসহ সব জায়গাতে শিশুদেরকে কাজের জন্য 'না' বলতে হবে এবং সামজিকভাবে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে; তাহলেই শিশুশ্রম প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়াও উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন- বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত স্কাউট সদস্য, কলকারখানার শ্রমিক ও সাংবাদিকবৃন্দ।
ভোরের আকাশ/আজাসা
সংশ্লিষ্ট
কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার মাঠজুড়ে এবারও দেখা মিলছে ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাটের সবুজ ‘গালিচা’। চাষিদের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। সরকারি কোনও সহযোগিতা বা প্রণোদনা ছাড়াই কৃষকেরা একান্ত প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমে দিন দিন পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে প্রতি বছর বাড়ছে চাষের পরিমাণ।স্থানীয় কৃষকেরা জানান, একসময় পাট চাষ অলাভজনক মনে হলেও বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অনেকেই পাট চাষে ফিরে এসেছেন। বিশেষ করে ধান, গমের তুলনায় তুলনামূলক কম খরচ ও লাভজনক হওয়ায় এই আঁশ ফসল আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চাষিরা জানান, সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকলেও তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে জমি প্রস্তুত করে পাট চাষ করছেন। সঠিক পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “গত বছর ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম, ভালো লাভ হয়েছিল। এবার ৪ বিঘায় পাট চাষ করেছি। সরকারের সহযোগিতা পেলে আরও বড় পরিসরে চাষ করা যেত।”চাষিরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বীজ, সার, কীটনাশক কিংবা বিপণন— কোনো ক্ষেত্রেই সরকারি সহযোগিতা মেলে না। তবুও তারা আশাবাদী, কারণ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা বেড়েই চলেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, চাষিদের আগ্রহ বাড়লেও প্রণোদনা প্রকল্পের অভাবে তারা চাইলেও সরাসরি সহায়তা দিতে পারছে না। তবে কারিগরি পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে। কৃষিবিদরা মনে করছেন, পরিবেশবান্ধব এই আঁশ ফসলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে সরকারি সহায়তা, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ ও আধুনিক চাষপদ্ধতির প্রসার ঘটাতে হবে। কুষ্টিয়া সদরের কৃষকেরা একে একে সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখছেন পাটকে ঘিরে। এই সম্ভাবনাকে জাতীয়ভাবে কাজে লাগাতে এখনই প্রয়োজন নীতিনির্ধারকদের কার্যকর উদ্যোগ।ভোরের আকাশ/আজাসা
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সিরাজুম মুনিরা (৩২) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল হক জুয়েলের দাপ্তরিক সহকারী (সিএ-২) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।শনিবার (২৮ জুন) সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাথরঘাটায় ডেঙ্গুতে প্রাণ হারালেন দুই নারী।নিহত সিরাজুম মুনিরা উপজেলার ৩ নম্বর চরদুয়ানী ইউনিয়নের হোগলাপাশা গ্রামের বাসিন্দা।পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা শুরু করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে বরিশালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে পথেই তার মৃত্যু হয়।এর আগে গত ২৪ জুন কালমেঘা ইউনিয়নের ছোট পাথরঘাটা গ্রামের গৃহবধূ সাধনা রানী (৩৫) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার স্কুলপড়ুয়া ছেলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে এখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২০ জনেরও বেশি মানুষ। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে বরগুনা জেলাকে ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি এখনই কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে পাথরঘাটাও যে কোনো সময় সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য একটি আলাদা ওয়ার্ড খোলা হলেও চিকিৎসক ও জনবল সংকট প্রকট। ২৭টি অনুমোদিত চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র একজন চিকিৎসক, যিনি একজন দন্ত চিকিৎসক (ডেন্টিস্ট)। এই সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিরভাগ রোগীকেই বরিশালে রেফার করা হচ্ছে।স্থানীয়রা বলছেন, মশক নিধন কর্মসূচি ও প্রচার প্রচারণা থাকলেও চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন দৈন্যদশায় মানুষ বাড়িতে বসেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, ওষুধ সরবরাহ, ফগিং কার্যক্রম জোরদার ও জনগণকে সচেতন করতে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালানোর দাবি উঠেছে।ডেঙ্গুতে দুই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয়দের প্রশ্ন, আর কত প্রাণ গেলে নড়বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ?ভোরের আকাশ/জাআ
পিরোজপুরের নাজিরপুরে দারিদ্র বিমোচন বেকারত্ব দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০ দিনব্যাপী পেশাভিওিক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০ টায় দশ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের সমাপনি অনুষ্ঠানবিভিন্ন ভ্যানুতে হয়।সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোঃ ফজলে রাব্বি।আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডাঃ মসিউর রহমান, উপজেলা কৃষি অফিসার ইশরাতুন্নেছা এশা, উপজেলা প্রাণিসম্পাদ অফিসার ডাঃ তাপশ কুমার ঘোষ, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার সারোয়ার হোসেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃ মাহফুজুর রহমান, উপজেলা বেটিনারি সার্জন ডাঃ আল মুক্তাদির রাব্বি, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ মাহবুব।আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র দাস, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মোঃ মাসুম মিয়া, উপজেলা সমবায় অফিসার হোসনেয়ারা, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার এস এম জাহিদ হোসেন, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মাধ্যমিক শিক্ষা, সুমন বিশ্বাস, উপসহকারী প্রকৌশলী (স্বাস্থ্য) মোঃ রুবেল শেখসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও ১৮ জন প্রশিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।জানা গেছে, এই প্রশিক্ষণে দারিদ্রতা দূরীকরণ ও আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার কৌশল ও জীবনমান উন্নয়নে দারিদ্র বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা প্রধান। ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বিষমুক্ত ও পরিবেশ বান্ধব বান্ধব পদ্ধতিতে সবজি ও ফল চাষ, ব্যাগিং পদ্ধতিতে মানসম্মত ফল উৎপাদন, বার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন দুগ্ধ জাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণসহ গরু মোটাতাজা করন সহ হাঁস মুরগি কবুতর পালন ও স্বল্প পরিসরে ছাগল ভেড়া পালন ও বাজারজাতকরণ।এছাড়া উপকূলীয় সামুদ্রিক মৎস্যজীবীদের জন্য দায়িত্বশীল মৎস আহরণ প্রশিক্ষণ, বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন কৌশল ও মাছের প্রজনন খাদ্য ব্যবস্থাপনা, আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি হস্তশিল্পের বিভিন্ন নকশা আঁকা ও তৈরিসহ দারিদ্র্য বিমোচন ও ঋণ কর্মসূচি ও হস্তশিল্প (ব্যাগ) তৈরি, প্রশিক্ষণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সুযোগ-সুবিধা বিষয়ক গ্রামীণ জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধি করে আত্ম কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু এবং পরিচালনা বিষয়ক অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, কাজের বিনিময় খাদ্য গ্রামীণ জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধি করে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু এবং পরিচালনা বিষয়ক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য আত্মকর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজলে রাব্বি বলেন, উপকারভোগি পরিবারের চাহিদা মোতাবেক ১৮ টি ভেনুতে পেশা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে উপকারভোগী পরিবারসমূহ দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়েছে। তারা এখন নিজেরাই সহ উদ্যোগে কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে।ভোরের আকাশ/জাআ
দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরগুনায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহের বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর ঢল নেমেছে, এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ জনে। এই পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ও গবেষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।হাসপাতালে রোগীর চাপ, অপ্রতুল সুবিধা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় (২৬ জুন সকাল ৮টা থেকে ২৭ জুন সকাল ৮টা) জেলায় নতুন করে ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই বরগুনা সদর উপজেলার। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৪৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন, যার মধ্যে ১৯৭ জনই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। চলতি বছরে জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২,৬৩০ জন। এই তথ্য ২৭ জুন ২০২৫ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে। তবে, এর বাইরেও অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন, ফলে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা মেঝেতে দেওয়া হচ্ছে, কারণ শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। পরীক্ষার সুবিধা অপ্রতুল হওয়ায় রোগীদের শহরের বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি ও রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় গুরুতর রোগীদের বরিশাল বা ঢাকায় রেফার করতে হচ্ছে, যা রোগী ও স্বজনদের জন্য কষ্টকর।মৃত্যু ও আক্রান্তের পরিসংখ্যান গত সপ্তাহে (২২-২৭ জুন) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বরগুনায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। ২২ জুন রাবেয়া (১০০) নামে এক বৃদ্ধা এবং ২৬ জুন সাধনা রানী (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৩-এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে ২২ জনই সদর উপজেলার। জুনের প্রথম ১৫ দিনে ৮৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, যা মে মাসের ৭৮৪ এবং এপ্রিলের ১৮০ জনের তুলনায় অনেক বেশি। তবে এটা শুধু সরকারি হাসপাতালের তথ্য কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা এর ১০ থেকে ১৫ গুণ হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। একটি বেসরকারি ক্লিনিকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, "গত এক সপ্তাহে ১০০ জনের বেশি জ্বরের রোগী এসেছেন, যার ৩০-৩৫% ডেঙ্গু পজিটিভ।" তাঁর মতে, জেলার সবগুলো ক্লিনিকের তথ্য নির্দিষ্ট অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে জেলায় ডেঙ্গু রোগীর প্রকৃত সংখ্যার ধারণা পাওয়া যাবে।একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাব টেকনিশিয়ান বলেন, "আমরা প্রতিদিন ২০-২৫টি ডেঙ্গু টেস্ট করি, যার ৪০% পজিটিভ আসে। কিন্তু এই তথ্য জাতীয় ডেটাবেজে আপলোড করার ব্যবস্থা নেই।" প্রতিরোধে ঘাটতি ও জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেনসহ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাসপাতালে ভর্তির বাইরেও প্রচুর রোগী শনাক্ত হচ্ছে না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। সঠিক রেকর্ড রাখার অভাব এবং প্রতিরোধ কার্যক্রমে ঘাটতি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।আইইডিসিআরের একটি দলের জরিপে দেখা গেছে, বরগুনা সদরে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় ৮ গুণ বেশি। বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখা, জলাবদ্ধতা এবং অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মশার প্রজনন বাড়িয়েছে।প্রশাসনিক উদাসীনতা ও স্থানীয় অভিযোগ স্থানীয় নাগরিক সংগঠন স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলতার ঘাটতি এবং মশার অভয়াশ্রম হিসেবে পরিত্যক্ত জমি-জলাশয়ের অস্তিত্ব পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে।জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজীর আহমেদ বলেন, “বরগুনার পরিস্থিতি আমাদের প্রতিরোধ কৌশলের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরছে।”করণীয় বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে জমে থাকা পানি পরিষ্কার, শরীর ঢেকে রাখা পোশাক পরা এবং মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলার তাগিদ রয়েছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে মশক নিধন, জনসচেতনতা ও সরকারি-বেসরকারি ডেটা সমন্বয় প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।ভোরের আকাশ/এসএইচ