ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ৫ যাত্রী
আশরাফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন চালকের দক্ষতায় রক্ষা পেল অটোরিকশার ৫ যাত্রী। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লেভেল ক্রসিংয়ে যাত্রীসহ অটোরিকশাটি আটকে যায়। এসময় চালক দুর্ঘটনার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদেরকে রক্ষা করেন। ট্রেন চালক এনায়েত হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর ট্রেনটি প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর শুরুতে অটোরিকশাটি দেখা যায়নি; যখন দেখি তখন খুব কাছাকাছি চলে আসি। ভেপু বাজাতে থাকি যেন এটি সরে যায়, কিন্তু সেটি সরছিল না। এরপর চেষ্টা করি ট্রেন থামানোর। আল্লাহর রহমতে অটোরিকশা থেকে কয়েক ফুট দূরে ট্রেন থেমে যায়।’ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, জামালপুর থেকে চট্টগ্রামগামী ৩৮ ডাউন নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন দুপুর সোয়া ২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। ট্রেনটি কাউতলী এলাকায় সেতুর কাছাকাছি পৌঁছালে সেখানে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে যায়। চালক দূর থেকে দেখতে পেয়ে ট্রেন থামিয়ে দেয়ায় অটোরিকশায় থাকা চালকসহ ৫ যাত্রী রক্ষা পান।
সংশ্লিষ্ট
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, নিয়মিতকরণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান প্রক্রিয়া অভূতপূর্ব সংস্কারের নিদর্শন স্থাপন করেছে।বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহে প্রায় ৪৬ হাজার ৪৫৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী একই পবিসে দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত রয়েছেন।বিগত আমলে যারা বঞ্চিত ছিল অর্থাৎ ১৭ বছরেও যাদের বদলি করা হয়নি তারা চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল ও তাদের কর্মদক্ষতা লোপ পাচ্ছিল। এহেন মুহূর্তে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক পবিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি, পেশাগত বিকাশ, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিগত ৯ মাসে মোট ৪ হাজার ৭৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এক পবিস হতে অন্য পবিসে বদলি করা হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক কারণে এবং বিভিন্ন পবিসে ও অন্যান্য সংস্থায় কর্মরত স্বামী-স্ত্রীকে একই পবিস-কাছাকাছি কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে।৩৫৪ জন স্বামী-স্ত্রীকে তাদের চাহিদা-আবেদন মোতাবেক পছন্দের কর্মস্থলে বদলি-পদায়ন করা হয়েছে। ৩৫ জন স্বামী-স্ত্রীর সমন্বয় বদলি প্রক্রিয়া চলমান আছে, এটি একটি বিরল নজির। একইভাবে সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিগত ৯ মাসে বাপবি বোর্ডের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকেও বিভিন্ন দপ্তর, পরিদপ্তর, মাঠপর্যায়ে বদলি করা হয়েছে। সরকারি আদেশ অনুযায়ী একই কর্মস্থলে ৩ বছরের অধিক সময় কর্মরত থাকলে তাদের বদলির নির্দেশনা রয়েছে। বদলি চাকরির বিধি অনুসারে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এটা কোনো শাস্তি নয়।নতুন পবিসে বদলির মাধ্যমে কর্মকর্তারা ভিন্ন পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের পেশাগত দক্ষতা ও সমস্যা মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও কর্মপদ্ধতির আদান-প্রদান ঘটেছে, যা সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নে সহায়ক হয়েছে বিধায় বাপবিবো এবং পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে এবং কাজের প্রতি তাদের স্পৃহা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তা ছাড়া গ্রাহক প্রান্তে সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি না পাওয়া ২৫০ জন পবিস কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন পদে দ্রুত পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও গ্রাহকসেবা নির্বিঘ্ন ও কর্মক্ষেত্রে কাজ সহজীকরণ, শূন্যপদের বিপরীতে দ্রুত ৮৭৭ জন জনবল নতুনভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং আরও ২,৮৫৫ জন জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।পবিসের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত ৪৭২৩ জন লেভেল-১কে শূন্যপদের বিপরীতে নিয়মিত করা হয়েছে। ১৩০২ জন ‘কাজ নাই মজুরী নাই’ ভিত্তিতে নিয়োজিত বিলিং সহকারীকে অন-প্রবেশনে নিয়োগ করা হয়েছে। লাইন শ্রমিকদের চুক্তির মেয়াদ ৬ মাস/১ বছরের পরিবর্তে ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। মিটার রিডারদের চুক্তি ৩ বছর এবং এক জায়গায় ৪ মেয়াদে ১২ বছর অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা পূর্বে ৩ মেয়াদে ৯ বছর ছিল। এ ছাড়া ৬৮ জন কর্মচারীকে তাদের, আবেদন মোতাবেক পারস্পরিক বদলি করা হয়েছে।বর্তমান এই সংস্কার কার্যক্রম শুধুমাত্র পবিসেই সীমাবদ্ধ নেই। আরইবিতেও একইভাবে চলমান রয়েছে। বাপবিবোর্ডে কর্মরত ১৪৪৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আগস্ট, ২০২৪ হতে ১৫ মে, ২০২৫ পর্যন্ত বদলি-পদায়নকৃত বাপবিবোর্ডের প্রশাসন বিভাগে ৯৮ জন কর্মকর্তা, অর্থ বিভাগে ৭৮ জন কর্মকর্তা ও প্রকৌশল বিভাগে ২৮২ জন কর্মকর্তা এবং ২৪৬ জন কর্মচারীসহ মোট ৭০৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন দপ্তর, পরিদপ্তর ও মাঠপর্যায়ের অফিসে বদলি করা হয়েছে, যা মোট জনবলের প্রায় ৪৮%। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে কাজের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যোগ্যতার ভিত্তিতে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বোর্ডের বিভিন্ন বিভাগের শূন্যপদের বিপরীতে ১১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। রাজস্ব খাতে ৫০ জন ও আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে ১৮৬ জনসহ মোট ২৩৬ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে।এই অভূতপূর্ব বিশাল কর্মযজ্ঞের ফলাফল স্বরূপ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও সকল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রাণবন্ত কাজের উদ্দীপনা ফিরে এসেছে, যা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বলিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে। ভোরের আকাশ/এসআই
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কেবল ঐকমত্য কমিশনের একার নয় জানিয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, এ কাজে রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তিগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।রোববার (১৮ মে) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।ড. রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐক্য গঠনের দায়িত্ব শুধু আমাদের নয়। রাজনৈতিক দলগুলো এবং সমাজের সচেতন অংশকেও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।তিনি বলেন, অনেক বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে এবং অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। আবার কোনো কোনো বিষয়ে দ্বিমত রয়ে গেছে। ক্ষেত্রবিশেষে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কিছু কিছু বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে এবং যেগুলো পুনরায় আলোচনার সুযোগ আছে।তিনি আরও বলেন, যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক আলোচনায় যারা প্রতিনিধিত্ব করেন, বিভিন্নভাবে তাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে ফিরে যেতে হয়। কারণ, আলোচনার টেবিলে অনেক কিছুই উপস্থিত হয় যা পুনর্বিবেচনা দাবি করে। সেটিই আমরা অব্যাহত রাখছি।আজকের বৈঠকে জামায়াতের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত রয়েছেন।এর আগে, জামায়াতের সঙ্গে প্রথম দফায় ২৬ এপ্রিল বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে ওই বৈঠকে সকল সুপারিশ নিয়ে দলটির সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি বলে জানায় কমিশন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বারসিকের গবেষণায় বলা হয়েছে শব্দ দূষণের কারণে দেশের কম করে দেড় কোটি মানুষ বধির হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ভয়াবহ ঝুঁকি থেকে রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে সংস্থাটি। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১৭ মে) মিরপুর ২ নম্বরের শেরে-বাংলানগর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেটে ঢাকা শহরের শব্দ দূষণ রোধে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে সংস্থাটি। মানববন্ধনে মিরপুর এলাকার আপামর জনসাধারণসহ প্রায় ৫৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।এতে সভাপতিত্ব করেন মিরপুর ‘ট’ ব্লকের বাসিন্দা মোসাম্মাদ সোনিয়া বেগম এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করে বারসিকের সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম। মানববন্ধনের ধারণাপত্র পাঠ করে বারসিকের সহকারী কর্মসূচি কর্মকর্তা হেনা আক্তার রুপা।বারসিক সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা সকলেই জানি শব্দ দূষণ দিন দিন আমাদের জীবনকে অচল করে দিচ্ছে। যানবাহনের হর্ন বন্ধ করলে নগরের তিনভাগে দুইভাগ শব্দ দূষণ বন্ধ হয়ে যাবে। হাইড্রোলিক হর্ন একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া দরকার এবং যারা অকারণে শব্দ দূষণ করে তাদেরকে আইন অনুযায়ী জরিমানা অব্যাহত রাখা উচিত। আমরা জানি উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, এবং মাংসপেশির সংকোচন করে।এছাড়া শ্রবণশক্তি কমে আসে বা বধির হওয়ার মতো অবস্থা হয়। আমরা দেখি, প্রতি বছর নববর্ষ পালনের নামে অগনিত বাজি ফুটিয়ে, ফানুস উড়িয়ে বড় বড় শহরকে আলোকিত এবং শব্দে নগরীতে পরিণত করা হয়। ফল হিসেবে দেখা যায় শহরের অগনিত পাখির মৃত্যুঘটে শুধু মব্দের কারণে। এই হোলি খোলা বন্ধ করতে হবে। সকল যানবাহনকে আইনের মধ্যে থেকে তাদের যানবাহন পরিচালনা করতে বাধ্য করতে হবে। না হয়ে নগরের অধিকাংশ মানুষ বধির হয়ে যেতে পারে।মানববন্ধনের ধারণাপত্রে বারসিকের সহকারী কর্মসূচি কর্মকর্তা হেনা আক্তার রুপা বলেন, শব্দদূষণ এই শহরে আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। ভোর থেকে শুরু হওয়া শব্দের অত্যাচার চলে গভীর রাত অবধি। সিগন্যাল ছাড়তে না ছাড়তেই; কে কার চেয়ে বেশি জোরে হর্ন বাজাবেনÑ চলতে থাকে সেই প্রতিযোগিতা। মানুষের নিরাপদ শব্দসীমা ৪০-৬০ ডেসিবেল হলেও বাস্তবতা হচ্ছে নীরব এলাকাতেই দূষণের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেলের বেশি। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের শব্দ দূষণে ২০৪৫ সালের মধ্যে শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন দেশের দেড় কোটি মানুষ। ভয়াবহ এই দশা থেকে বেরিয়ে আসতে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোসহ শব্দের মাত্রা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনএপি) ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২ : নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস [ঋৎড়হঃরবৎং ২০২২: ঘড়রংব, ইষধুবং ধহফ গরংসধঃপযবং]’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী শব্দ দূষণে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের দুটি শহর। একটি আমাদের প্রাণের শহর ঢাকা এবং অন্যটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মহানগরী রাজশাহী।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকার জন্য অনুমতিযোগ্য শব্দের মাত্রা ৫৫ ডিবি (ডেসিবেল) এবং বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডিবি। সেখানে ঢাকায় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবল এবং রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবল পাওয়া গেছে।গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েক বছর ধরে ঢাকা শহরের প্রায সব ব্যস্ত এলাকাতেই শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য জেলা শহরের শব্দ দূষণের উৎসগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বায়ু দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর মতে ঢাকা শহরের ১২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খবয় (এলইকিউ) মান ছিল ৮০ ডেসিবেলের বেশি।এছাড়াও মিরপুর ১ বাস স্ট্যান্ড, আজিমপুর মোড়, জিপিও মোড়, মালিবাগ রেলগেট, উত্তর বাড্ডা মোড়, আবুল হোটেল মোড়, ফার্মগেট মোড়ে শব্দের মানমাত্রা ৯০ ডেসিবলের ওপরে পাওয়া গিয়েছে। যদিও শব্দ দূষণ রোধে দেশে আইন আছে। সেই আইনে জেল-জরিমানার বিধানও আছে। তবে তার প্রয়োগ হয় কতটা, তা নিয়ে বিশেষ তথ্য পাওয়া যায় না।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশে প্রায় ৩০টি জটিল রোগের অন্যতম প্রধান উৎস শব্দ দূষণ। ক্রমাগত বাড়তে থাকা শব্দের মাত্রা আগামীতে অসুস্থ প্রজন্ম জন্ম দিবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়।এ ছাড়া শ্রবণশক্তি কমে আসে বা বধির হওয়ার মতো অবস্থা হয়। মাথাব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনোযোগ কমে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, অযথা বিরক্তিবোধ এমনকি নানাবিধ মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। অন্যদিকে উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা, হৃদরোগীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শব্দ দূষণের ফলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহের রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সংকোচন করে, পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়, শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড চাপ দেয়।সম্মিলিত উদ্যোগই শব্দ দূষণের মতো একটি সামাজিক সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে। এজন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশসমূহ মধ্যে-বিধিমালা সংজ্ঞা অনুযায়ী চিহ্নিত জোনসমূহে (নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র) সাইনবোর্ড স্থাপন করে তা মান্যতার ব্যাপারে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। যেসব এলাকায় শব্দ দূষণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি সেসব এলাকাতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকাসমূহে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকরণ হচ্ছে যা ফলে শব্দ দূষণের পরিমাণ বাড়ছে। এক্ষেত্রে আবাসিক এলাকা সমূহকে বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তরিত না করা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হতে পারে।পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক দপ্তরের সমন্বয় সাধন করতে হবে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর শতভাগ বাস্তবায়ন, যানবাহনে ব্যবহৃত হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করা, হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি ও চালকদের শব্দ সচেতনতা যাচাই করে লাইসেন্স প্রদান করা শব্দ দূষণ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।বিশেষ করে হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে হর্ন না বাজানোর জন্য কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতায় পরিবেশ ক্যাডার ও পরিবেশ পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। যানবাহনের চাপ কামানোর জন্য, গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।এর মাধ্যমে আমাদের এই মরণব্যধি শব্দদূষণ থেকে আমাদের কিছুটা রেহাই দিতে পারে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বারসিক প্রতিনিধি এশা আক্তার লাবন্য, কারিতাস প্রতিনিধি জসীম উদিন, সুশীল সমাজ প্রতিনিধি দুলাল কর, ব্যবসায়ী মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।ভোরের আকাশ/এসএইচ
আগামীর রাজনৈতিক নীতি প্রণয়ণে পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিকল্প নেই। কোটি মানুষের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে বাসযোগ্য শহর নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলগুলো তথা গোটা বাংলাদেশের মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের স্বার্থে পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা এবং বিশিষ্টজনরা। শনিবার (১৭ মে) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলিনায়তনে ‘পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে এসব দাবি জানানো হয়।বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নগর গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ও তাদের পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পল্যুশন স্টাডিস-ক্যাপস), পরিবেশবাদী সংগঠন ‘মিশন গ্রিন বাংলাদেশ’, সামাজিক আন্দোলন ‘নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ-নাবিক’ এবং সেন্টার ফর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-সিজিডি যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাবিকের সহ-সভাপতি বুরহান উদ্দিন ফয়সাল।এ সময় ক্যাপসের চেয়ারম্যান এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, দূষণের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ প্রায়শই প্রথম বা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকছে। একটি পরিবেশবান্ধব নগর গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দলগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এবং তাদের সদিচ্ছাই পারে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে।বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকারের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। বিল, ডোবা, পুকুরসহ সব জলাশয় দূষণমুক্ত রাখতে হবে এবং খেলার মাঠগুলো উদ্ধার করতে হবে। দেশের ২০ কোটি মানুষ যদি দুটি করেও গাছ লাগায়, তাহলে ৪০ কোটি নতুন গাছ লাগানো সম্ভব। নেতাদের নিজেদের গাছ লাগাতে হবে এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তিনি এ ধরনের সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ, পরিবেশবান্ধব কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুর ওপর জোর দেন, যাতে সমাজের সব স্তরের মানুষ তা ব্যবহারে আগ্রহী হয়।তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি শহর পরিকল্পনামাফিক গড়ে তুলতে হবে, অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধ করতে হবে।গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, নীতিমালা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি। বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বাড়ি নির্মাণে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা মেনে চলতে হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ