প্রধান নির্বাহীসহ ১৪ জনের নামে মামলা
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৩:৪৬ পিএম
ছবি : ভোরের আকাশ
রংপুরে সাংবাদিক ও সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাকে মারপিটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৪ জনের নামে মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় মামলা হয়েছে।
এদিকে হয়রানিমূলক মামলা উল্লেখ করে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে করে নাগরিক সেবা প্রদান কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাগ্রহীতারা।
সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের অভিযোগ, জুলাইযোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দীদের নামে অটোরিক্সার লাইসেন্স প্রদানের নামে সিটি কর্পোরেশনের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক শহিদুল ইসলাম, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা যোগসাজশ করে ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পায়তারা করছিল। এ সংবাদ প্রকাশ করায় রবিবার দুপুরে তাদের নির্দেশে জুলাইযোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দী দাবী করা কয়েকজন যুবক সাংবাদিক বাদলকে সিটি কর্পোরেশনে নিয়ে এসে মারপিট করে।
এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবী জানান সাংবাদিকরা। এনিয়ে সোমবার সাংবাদিক বাদল বাদী হয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা, সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা লিটন পারভেজ, সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স শাখার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিজু, নবাবগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী রকি, রাজস্ব শাখার তন্ময়, আসাদ, শরীফ, জনি, লিপ্পন, সৈয়দ জাহাঙ্গীর কবির শান্ত, নগরীর বাসিন্দা রন্টু, রতন, সাগর, আশিকুর রহমান আশিকসহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫জনকে আসামী করে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানায় মামলা করে। মামলার পর থেকে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
কর্মবিরতিতে ভোগান্তি : সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স পরিদর্শক মিজানুর রহমান মিজুকে মারধর, প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমাসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে মামলার প্রতিবাদে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে কর্মবিরতির কারণে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, শিশু স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্নতা সেবাসহ নগর কেন্দ্রীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী।
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকালে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন-সমাবেশে অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিক বাদল কয়েকজন যুবককে সিটি কর্পোরেশনে নিয়ে আসেন এবং কিছুক্ষণ পর তিনিই কিছু নামধারী সাংবাদিকসহ সন্ত্রাসী বাহিনীদের নিয়ে সিটি কর্পোরেশনে হট্টগোল করেন। তার নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স শাখার পরিদর্শক মিজানুর রহমান মিজুকে বেধড়ক মারপিট, শার্ট ছিড়ে ফেলাসহ তাকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। যার প্রমাণ সিসিটিভি ফুটেজে রয়েছে। এ ঘটনায় উল্টো সাংবাদিক বাদল থানায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা দোষীদের শাস্তি দাবী জানাচ্ছি।
উল্টো দোষ চাপিয়ে মামলার আসামী করার দাবী অভিযুক্তদের : জুলাইযোদ্ধাদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদ, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ সঠিক বিচার দাবী জানিয়েছেন মামলার এক নম্বর আসামী ব্যবসায়ী এনায়েত হোসেন রকি।
তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, জুলাইযোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দীদের সহযোগিতার জন্য কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম ৪৫১ জনের নামে অটোরিক্সা লাইসেন্স দেয়ার উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে সাংবাদিক বাদল মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ ঘটনায় ৫ কোটি টাকা বাণিজ্য হয়েছে বলে সংবাদ পরিবেশন করেন।
এ বিষয়ে আমিসহ অন্যরা তার বাড়িতে গিয়ে জুলাইযোদ্ধা হিসেবে আমাদের প্রমাণাদি দেখালে তিনি রবিবার আরও কাগজপত্র নিয়ে কাচারী বাজারে আসতে বলেন। রবিবার কাগজপত্র নিয়ে তিনিসহ আমরা সিটি কর্পোরেশনে আসলে হঠাৎ করে তিনি চটে যান এবং তার গুন্ডা বাহিনীদের ফোন করে ডেকে জুলাইযোদ্ধাদের মারধর করেন এবং উল্টো পরবর্তীতে আমাদের দোষারোপ করে মামলা দায়ের করেন।
সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজ বলেন, লিয়াকত আলী বাদল আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। বিগত বিভিন্ন সময়ে সিটি কর্পোরেশনে চাঁদাবাজিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের কাছে সুবিধা করতে না পারায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
সাংবাদিক ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে হট্টগোল দেখে আমি রংপুরের সন্তান হিসেবে এগিয়ে এসেছিলাম। সবাইকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছি। অথচ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে মামলার আসামী করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রংপুর মেট্রোপলিটন থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, সাংবাদিকের দায়ের করা মামলায় রতন মিয়া ও সাগর নামে দু্ইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.