আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতনিধি
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:১৮ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
তোতা আলী মণ্ডল (৪৫)। কঙ্কালসার দেহ, দীর্ঘশ্বাস আর নীরব চোখের চাহনি যেন বলে দিচ্ছে শরীরে অসুখ বাঁধার খবর। হৃদয়ের (হার্ট ব্লক) যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। বাড়িতে হুইল চেয়ারে বসে কাতরাচ্ছেন। যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে পার করছেন প্রতিটি মুহুর্ত। একসময়ের টগবগে, হাস্যজ্জ্বল তোতা কথা বলতে হাঁপিয়ে উঠছেন। বিরক্তবোধ করছেন। যেন হাজার বছরের ক্লান্তি পেয়ে বসেছে তাঁকে। বয়স ৪৫ হলেও দেখে মনে হবে ৭০ ছুঁই-ছুঁই। অথচ পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণের ভার ছিল তাঁর কাঁধে। পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ১৪ মাস আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তোতার। মাত্র ৯ মাস পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
তাঁর হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। ওই সময় পরিবারের লোকজন পুনরায় ধার-কর্য করে টাকা পাঠিয়ে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ থাকায় অর্থের অভাবে চিকিৎসা এবং ওষুধ কিনতে পারছে না তাঁর পরিবার। অসুস্থ হয়ে এখন তিনি নিজ বাড়িতে নষ্ট ও পুরাতন হুইল চেয়ারে বসে কাতরাচ্ছেন। এমন দুর্দশায় চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে তোতার পরিবার।
অসুস্থ তোতা বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রামপুরা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মৃত ওসমান আলী মণ্ডলের ছেলে।
প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানান, দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন তোতা। কখনও রাজমিস্ত্রী আবার কখনও রঙমিস্ত্রীর কাজও করতেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখেই দিন কাটতো তোতার। কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে তিনি বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর বিভিন্ন এনজিও এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে রঙ মিস্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রায় ৯ মাস কাজও করেছেন। কিন্তু রঙের গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে চিকিৎসার পর হার্টে ব্লক ধরা পড়ে তাঁর।
স্ত্রী রুমি বেগম বলেন, ‘অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসা করানোর জন্য দেনা করে গত মাসের পহেলা অক্টোবর দেশে ফিরিয়ে এনেছি। এরপর বগুড়া ও ঢাকায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে সংসারে যা কিছু ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসা চালাতে পারছি না। এমনকি নতুন হুইল চেয়ার কেনার টাকাও নেই। পুরাতন হুইল চেয়ার মেরামত করে চালাচ্ছি। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা সাহায্য করলে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো।’
বড় ছেলে বাপ্পী বলেন, ‘বাবার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এখন ঠিকমতো কথা বলতেও পারছেন না। চিকিৎসকরা বলেছেন দ্রুত অপারেশন করাতে পারলে তিনি সুস্থ হতে পারেন।’
প্রতিবেশী আবদুল প্রামাণিক বলেন, ‘গ্রামের লোকজন ও প্রতিবেশীরা যেটুকু সহযোগিতা করেছে সেটা দিয়ে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব না। অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা চাই তোতা সুস্থ হয়ে আবারও আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল আমিন বলেন, ‘আমাদের অফিসে একটি লিখিত আবেদন দিলে তাঁর চিকিৎসার জন্য কিছু আর্থিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। তাছাড়া ইউএনও বরাবর আবেদন করলে নতুন হুইল চেয়ারের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে।’
অসুস্থ তোতার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করতে চাইলে বিকাশ পার্সোনাল নম্বর- ০১৭৯৭৭৪৮০৭৬।
ভোরের আকাশ/জাআ