ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মাজাহারুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১০ এএম
ছবি- সংগৃহীত
সরকার ও নির্বাচন কমিশন’র (ইসি) ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতিকে ইতিহাসের সেরা একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে জাতিকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংলাপকালে একটি ভালো নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন সিইসি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথাও সাফ জানিয়েছেন ইসি। সরকার ও ইসি’র এমন মনোভাবকে সাদুবাদ জানিয়ে নির্বাচনমুখী হয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলো। নিজ নিজ দলের প্রার্থী ঘোষণার পাশাপাশি ভোটে জয়ের লক্ষ্যে জোট গঠন করছেন দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জুলাই আন্দোলনের অগ্রবাগে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটে জয়ের লক্ষ্যে নির্বাচনী জোটের রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্ট হচ্ছে। বলা যায়, ভোট যতই ঘনিয়ে আসছে, পৃথক পৃথক নির্বাচনী জোট গঠনের তৎপরতা ধীরে ধীরে ততই দৃশ্যমান হচ্ছে। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে গণভোট অধ্যাদেশ ২০২৫ খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একইদিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোতে নির্বাচনী ব্যস্ততা বেড়েছে।
গণভোট, সংস্কার, আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ইসির প্রস্তুতি প্রায় শেষ প্রান্তে। এমনপরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোও থেমে নেই। চালাচ্ছে ভোটে জয়ের বিভিন্ন কৌশল। জামায়াত গত বছর ৫ আগস্টের পরপরই কার্যক্রম শুরু করায় নির্বাচনী আয়োজনের প্রায় সব কাজই গুছিয়ে এনেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা গণসংযোগ শুরু করলেও এখনও প্রার্থী বাছাই শেষ হয়নি। পোলিং এজেন্ট নির্ধারণ ও প্রশিক্ষণ কাজ শুরু করতে পারেনি। অন্যদিকে এনসিপির ব্যস্ত সময় পার করছে সম্ভাব্য প্রার্থীর সাক্ষাৎকারসহ জোট গঠনে প্রস্তুতি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে জোটই হতে পারে ফল নির্ধারণের বড় উপাদান। কয়েকটি ছোট দলের ভোটই অনেক প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দিতে পারে। তাই আসন্ন ভোটে জোটের সমীকরণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারা কার সঙ্গে যাবে, কত আসনে ছাড় পাওয়া যাবে, আর শেষ পর্যন্ত কে কাকে ভরসা করবে- সেই হিসাব-নিকাশই এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্র উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে একটি জোট হবে। আন্দোলনের মাঠে থাকা জামায়াতসহ আটটি দলের জোট হবে না, আসন সমঝোতা হতে পারে। এছাড়া এনসিপিসহ কয়েকটি দল ও বাম ঘরানার দলগুলোর আরও দুটি পৃথক জোট হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি।
তিনি বলেন, এবার জোট যাইহোক, যেহেতু নিজের প্রতীক নিয়ে সব দলের নির্বাচন করতে হবে, সেজন্য বড় দলগুলো ভেবেচিন্তেই শরিকদের আসন ছাড় দেবে। এজন্য হয়তো বড় দলগুলোর জোট গঠন এবং শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়ে আরও সময় নিতে চাইবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বে একটি বৃহৎ জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোট ছাড়াও যুগপতের বাইরে হাসিনা সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন দলগুলোর সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ও গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনী জোটে আসতে চাইবে, তাদের সবাইকেই এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রার্থী বাছাই শেষ না হলেও প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের মাঠে রয়েছেন। গণসংযোগ, পোলিং এজেন্ট বাছাই, প্রশিক্ষণ, এলাকাভিত্তিক নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছেন তারা। কেন্দ্রীয়ভাবেও চলছে জোর প্রস্তুতি। তবে দলীয় প্রার্থীদের সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা এখনও দেওয়া হয়নি। সংসদ নির্বাচনে সামাজিকমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য সামাজিকমাধ্যম ও তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ সুসংহত করতে এরই মধ্যে সাতটি টিম গঠন করেছে দলটি। যদিও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর এ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিএনপির জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ প্রার্থী বাছাই। গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে অর্ধশতাধিক আসনে শুরু হয় ‘মনোনয়ন বিদ্রোহ’। বাকি যে ৬৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা হয়নি, সেখানেও চলছে নানা যোগ-বিয়োগ।
বিএনপির নেতাকর্মীর মতে, তারেক রহমান দেশে আসার পর সবকিছুতে গতি আসবে। এর আগে মাঠ জরিপের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন প্রার্থীর অসংগতি দূর করার চেষ্টা চালানো হবে। সেখানে আসনভিত্তিক জটিলতা, প্রার্থীর দুর্বলতা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সক্ষমতা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৬ বছর এ দেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। নতুন প্রজন্ম তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে উৎসবমুখর ভোট আয়োজনে বিএনপি সব প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে ২৩৭ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে অন্যান্য প্রক্রিয়াও সামনে আনা হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলÑ এমন সমমনা দল ও জোটসহ অন্যান্য উদার গণতান্ত্রিক, বাম, ইসলামী ও আলেমদের সমন্বয়ে জোট গঠন করবে বিএনপি। এ নিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। মিত্র দল ও জোটের মধ্যে যথাক্রমে গণতন্ত্র মঞ্চ (জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ১২-দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), ১১ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চারদলীয় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) ও লেবার পার্টি বিএনপির বৃহৎ জোটে থাকছে বলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এর বাইরে আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির। এছাড়া দেশের আলেম সমাজ ও তাদের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে পাশে চায় বিএনপি। এজন্য দলটির নেতারা এরই মধ্যে হাটহাজারী মাদরাসা, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, ছারছীনা পীর, আলিয়া মাদরাসাভিত্তিক যেসব মুরুব্বি ও আলেম আছেন, তাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জোট গঠনের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। দেখা যাক, সেটি কীভাবে গঠিত হয়। তবে আমরা বিএনপির সঙ্গে শুরু থেকেই আছি।
১২-দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। আগামী নির্বাচনেও একসঙ্গে অংশগ্রহণ করব।
জামায়াতে ইসলামীর সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত ইসলামীও সাতটি ইসলামী দল নিয়ে ‘নির্বাচনী সমঝোতার’ পথে হাঁটছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য যুগপৎ কর্মসূচি পালন করা সাতটি দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে জামায়াত। এতে আরও কয়েকটি দল যোগ দিতে পারে।
জামায়াত নেতারা জানান, সমঝোতা হলে শখানেক আসন ছেড়ে দিতে হবে। যেসব আসন তারা নিশ্চিতভাবে ছেড়ে দেবেন, সেগুলোতেও সর্বাত্মক প্রচার চালাচ্ছেন জামায়াত প্রার্থীরা। সর্বাত্মক নির্বাচনী প্রচারে নেমেছে দলটি। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু করে প্রচারে নামে দলটি। জুলাইয়ের মধ্যে ২৯৮ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম জানানো হয়। ইতোমধ্যে আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করেছে তারা। ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৪০ হাজারের জন্য কেন্দ্র কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন চলছে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ।
নির্বাচনী প্রস্তুতির এসব তথ্য জানিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, পোলিং এজেন্টদের দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণ শুরু হবে শিগগির। অনলাইনে নয়, ঘরে ঘরে ভোটারের কাছে পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে জামায়াত।
আবদুল হালিম বলেন, আমরা বলছি, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির শাসন মানুষ দেখেছে। জামায়াতকে একবার দেখুন। ভোটাররা এই প্রচারে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে।
জামায়াতে শীর্ষ কয়েক নেতা বলেন, দলের প্রচার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি সাড়ে তিন কোটি তরুণ এবং নারী ভোটারদের গুরুত্ব দিয়ে। পুরুষ ভোটাররা সাধারণত জাতীয় রাজনীতির ইস্যুগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে ভোট দেন। নারীরা সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিকে গুরুত্ব দেন। তরুণরা প্রথাবিরোধী এবং পরিবর্তনকে সমর্থন করেন। দলটির নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের ভোট দাঁড়িপাল্লা পাবে না। শেখ হাসিনার কট্টর সমর্থকদের ভোটও পাবে না। কিন্তু সাধারণ পর্যায়ে সমর্থকের ভোট টানতে চেষ্টা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছয়টি বাম দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ বৃহত্তর একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী)। এছাড়া দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাধিক সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণসংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠন নতুন এই জোটে শরিক হতে সম্মতি দিয়েছে।
এর বাইরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, ঐক্য ন্যাপ, জাতীয় গণফ্রন্ট, বামপন্থিদের আরেকটি জোট ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’র শরিক দলগুলোর সঙ্গেও জোট গঠন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার শরিক দলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মাহবুব) ও গণমুক্তি ইউনিয়ন।
একটি সূত্রে জানা যায়, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরে এনসিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ (এবি পার্টি) সাতটি দল নতুন জোট গঠন করতে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে আরও কয়েকটি দল। সবকিছু মিলিয়ে তফসিলের আগেই নতুন জোট দৃশ্যমান হচ্ছে।
এনসিপির নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, আগে থেকেই সক্রিয় নেতাদের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। অন্য আসনে দলের নেতাদের বাইরে বিভিন্ন পেশার সৎ ও যোগ্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এনসিপির প্রার্থী হতে এক হাজার ৪৮৪ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। ১০ সাংগঠনিক বিভাগের জন্য ১০টি বোর্ড মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। একই আসনে একাধিক হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আগে ডাকা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের মধ্যেই প্রথম ধাপে ১০০ থেকে ১৫০ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, চিকিৎসক, শিক্ষক, আলেমসহ সব শ্রেণির মানুষ ফরম নিয়েছেন। এলাকায় মানুষের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা আছে, মানুষের জন্য এতদিন ধরে কাজ করেছেন এবং তাদের এলাকায় জিতে আসার সম্ভাবনা আছে, সে সম্ভাবনার ভিত্তিতে আমরা প্রার্থী করব।
এদিকে, গত বছর ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক দফা ঘোষণার দিনে ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠায় নতুন সংবিধান প্রণয়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসহ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তাদের ইশতেহারে রয়েছে : নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, ন্যায়ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা ও আইন সংস্কার, সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার, স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, জাতি গঠনে নতুন শিক্ষানীতি, গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব, ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা, নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন, মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি, তারুণ্য ও কর্মসংস্থান, বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি, টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব, শ্রমিক-কৃষকের অধিকার, জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা, জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার, বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দিনব্যাপী সংলাপ করে ইসি। সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন জাতিকে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি স্বীকার করেন, অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে কমিশন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। আমাদের এজেন্ডা একটাই, একটি ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দেওয়া। একটি ভালো নির্বাচন আয়োজন আমাদের দায়িত্ব। ভালো নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা লাগবে বলে জানান তিনি। সিইসি পর্যবেক্ষকদের ভোটের মাঠের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্রিয় সহযোগিতা চেয়েছেন। পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর প্রতি তিনি দুটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
সিইসি বলেন, যারা নতুন পর্যবেক্ষক সংস্থা, তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পর্যবেক্ষণের জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তারা যেন রাজনীতি ও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ