আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫ ০৩:৫০ পিএম
সোনারগাঁয়ে গাছে গাছে ঝুলছে রসালো লিচু
বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিনখ্যাত ঈশাখাঁর রাজধানী সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ছয় শতাধিক লিচু বাগান রয়েছে। গাছে গাছে মধু মাসের রসালো লিচু। ভালো দামে বিক্রির আশায় সোনারগাঁয়ের ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করবে সোনারগাঁয়ের লিচু।
বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বাজারে লিচুর ভালো দাম পাওয়ার আশায় ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিন-রাত লিচু বাগান পাহারা দিচ্ছেন। সময়মতো বাজারে লিচু বিক্রি করতে পারলেই পরিবারে আর্থিক অভাব-অনটন থাকবে না বলে আশাবাদী তারা। এবছর প্রচণ্ড খরতাপে ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় সোনারগাঁয়ে লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে।
তবে স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সময়মতো ভালো দামে বাগানের লিচু বাজারে বিক্রি না করা পর্যন্ত নাওয়া-খাওয়া-ঘুম নেই তাদের চোখে। বাগান মালিকদের অভিমত, বৈশাখ মাসে প্রচণ্ড খরতাপ ও প্রয়োজনমতো বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে ভালো দামে লিচু বিক্রি করতে পারলে আর্থিক সংকট থাকবে না বলেই তারা আশাবাদী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ছয় শতাধিক লিচু বাগান। এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এসব বাগানে লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। সোনারগাঁয়ের লিচু বাগানগুলোতে সাধারণত কদমী, বোম্বাই, চায়না-৩ ও স্থানীয় উন্নত পাতি জাতসহ চার ধরনের লিচুর ফলন হয়ে থাকে।
এর মধ্যে উন্নত পাতি জাতের লিচুর গাছ বেশি। সোনারগাঁয়ে সবার আগে পাতি লিচু পাকে। প্রতি বছরই মৌসুমের শুরুতেই লিচু বিক্রির জন্য গাছ থেকে ছিঁড়ে ব্যবসায়ীরা আগেভাগে বাজারে নিয়ে যান ভালো দাম পাওয়ার আশায়। ব্যবসায়ীরা কদমী লিচু বেশি দামে বিক্রি করেন। কদমী লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু। সোনারগাঁয়ে সর্বপ্রথম পাতি, পরে কদমী, তারপর চায়না-৩ এবং সর্বশেষ বোম্বাই লিচু পাকে।
পানাম গাবতলী এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন ও মনারবাগ এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কাসেম জানান, সোনারগাঁ উপজেলার গোবিন্দপুর, মনারবাগ, গাবতলী, হাড়িয়া, ইছাপাড়া, চিলারবাগ, দৈলেরবাগ, খাসনগরদীঘিরপাড়, ষোল্লপাড়া, সাদীপুর, পানাম, দত্তপাড়া, টিপরদী, গোয়ালদী, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, দরপট, ঠোটালিয়া, ভট্টপুর, বানীনাথপুর, মোগরাপাড়া, বড়নগর, গোহাট্টা, রহমতপুর, লেবুছড়া, ভৈরবদী ও দমদমাসহ প্রায় ৬০টি গ্রামে ছয় শতাধিক লিচু বাগান রয়েছে।
সরেজমিন কয়েকটি লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা আগামী এক সপ্তাহ পর বাজারজাতের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহে ব্যস্ত।
তারা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি শত পাতি লিচু বাজারে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বোম্বাই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং কদমী লিচু ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তবে এবছর দাম আরও বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক জানান, এবছর সোনারগাঁয়ে ১০৭ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬৫০ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ছোট-বড় মিলে প্রায় ৬ শতাধিক বাগান রয়েছে।
বিভিন্ন বাগান পরিদর্শনে দেখা গেছে, ফলন ভালো হলেও তীব্র তাপদাহে কিছু লিচু নষ্ট হয়ে গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। তারপরও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ