তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ০৮:৩৭ এএম
বাংলাদেশ ব্যাংকে ঝুলে আছে শেয়ারধারীদের ভাগ্য
নির্ধারিত সময়সীমার পর দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনও অনুমোদন হয়নি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৭ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন। অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এতে ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারছে না। পাশাপাশি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনও তৈরি করতে পারছে না। এ কারণে এসব ব্যাংকের শেয়ারধারীরা অনিশ্চয়তায় আছেন। কবে নাগাদ বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দিবে তা নিয়েও ধোয়াশা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গভর্নর দুবাই সফর থেকে ফেরার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে কবে ফিরবেন তিনি, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী, গত ৩০ এপ্রিল ছিল ২০২৪ হিসাব বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও তার ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ ঘোষণার শেষ দিন। এজন্য ব্যাংকগুলো ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। বার্ষিক প্রতিবেদন ও লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বা অনাপত্তি না পাওয়ায় এপ্রিলের শেষে ওই ব্যাংকগুলোর পর্ষদের সভাও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। আর্থিক প্রতিনেদন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময় ক্ষেপণে ১৭ ব্যাংকের গত ছয় মাসের আয়-ব্যয়ের চিত্র জানতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। এই সময়ে ব্যাংকগুলো কিভাবে চলছে তা নিয়ে পুরো অন্ধকারে তারা।
লভ্যাংশ ঘোষণা করতে না পারা ব্যাংকের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভোরের আকাশ’কে বলেছেন, বিভিন্ন কারণে এসব ব্যাংকের নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। এর মধ্যে রয়েছে, খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে না পারা ও প্রকৃত খেলাপির কিছু চিত্র না দেখানো। ব্যাংকগুলো যখন আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন, গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বিদেশে থাকায় স্পর্ষকাতর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন না।
জানা গেছে, গভর্নর গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশে ছিলেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সভা শেষে গত ১ মে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন। গভর্নর অফিস শুরু করলে এ বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে বলে আশা করছিলেন ব্যাংকাররা। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘বর্ধিত সময়ের জন্য আইনি জটিলতা এড়াতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য দু’একদিন সময় আরও বেশি লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
এরপর গত বুধবার (৭ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান ভোরের আকাশ’কে বলেন, ‘যেহেতু ৩০ তারিখের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাই আইনি জটিলতা এড়ানোর জন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। সময় বাড়ানোর আবেদনে মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়ে চলতি মে মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে বলে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে একই কথা জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। ভোরের আকাশ’কে তিনি বলেন, ‘এর আগেও এরকম হয়েছিল একবার। সেই রেফারেন্স বাংলাদেশ ব্যাংকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সময় চাওয়ায় মে মাস পর্যন্ত লভ্যাংশ দেওয়ার সময়টি বাড়িয়ে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।’ এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর গত ৮ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন দিয়ে তফসিলি ব্যাংকগুলোর বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলের সময়সীমা ৩১ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
এদিকে ব্যাংক কোম্পানি আইন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে আগের হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার বাধ্যবাধকতা আছে নতুন হিসাব বছরের প্রথম দুই মাসের মধ্যে। এ সময়ে নিরীক্ষা শেষে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইলে আরো দুই মাস বাড়িয়ে দিতে পারে সময়।
বছরের প্রথম চার মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারলে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হয়। সেটি না করলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) এর নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো জরিমানার মুখে পড়ে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো সিদ্ধান্তে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে না পারলে বিএসইসিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবহিত করতে হয়। এরকম পরিস্থিতি হলে কত সময়ের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে হবে, তার কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেয়নি বিএসইসি।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ না থাকায় মতামত নিতে হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ