তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩৩ এএম
রেমিট্যান্সে রেকর্ড, নেপথ্যে কী
স্বর্ণ চোরাচালানের উৎস সন্ধানে গত বছরের ডিসেম্বরে দুবাই সফর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল। ফিরে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে অবহিত করেন চোরাচালানের পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সক্রিয় হয়।
গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ জব্দ করে সংস্থাটি। উড়োজাহাজটির আসনের নিচ থেকে সোয়া দুই কেজির বেশি স্বর্ণ উদ্ধার হয়। আটক হন একজন। এই ঘটনা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আহরণে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে ধারণা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের। ওই উদ্যোগের ফলে দুবাইকেন্দ্রিক স্বর্ণচোরাচালানে ভাটা পড়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে মার্চে। মাসটিতে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা) রেমিট্যান্স এসেছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার ও জানুয়ারিতে ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। মার্চের পূর্বে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ছিল ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার; যা গত ডিসেম্বরে এসেছিল। প্রবাসী আয় রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও গেল বছরে বিদেশে কর্মী যাওয়ার পরিমাণ কমেছিল সাড়ে ২২ শতাংশ। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে, ২০২৪ সালে প্রবাসে নতুন কর্মী গেছে ১০ লাখ ১২ হাজার জন। এর আগের বছরে গিয়েছিল ১৩ লাখ ৬ হাজার কর্মী। জনশক্তি রপ্তানি প্রায় এক চতুর্থাংশ কমার পরও প্রবাসী আয়ে জোয়ারের পেছনে চোরাচালান কমে যাওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৭শ ৬২ মিলিয়ন (৭৬ কোটি ২০ লাখ) ডলার। এর মধ্যে শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেই বেড়েছে ১৭৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন (১৭ কোটি ৩৫ লাখ) ডলার। দেশটি থেকে মার্চে ৫০ কোটি ৮৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলার ও জানুয়ারিতে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুবাইভিত্তিক একটি বিশাল চক্র প্রবাসীদের থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে। আর বাংলাদেশে তাদের এজেন্টরা প্রবাসীদের আত্মীয়দের সমপরিমাণ টাকা বুঝিয়ে দেয়। প্রবাসীদের থেকে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ওই চক্রটি স্বর্ণের বার ক্রয় করে। এরপর নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুবাইফেরত উড়োজাহাজে এগুলো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
পাচারকৃত স্বর্ণের ৯০ ভাগের বেশি সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যায়। এর এক অংশের বিনিময়ে ভারত থেকে চোরাচালানে আসে গরু, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য। বাকি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসে। এতে বাংলাদেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। কারণ, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় না এলে সেটি দেশের রিজার্ভে যুক্ত হয় না। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির হিসাবে, বছরে অবৈধপথে ৯১ হাজার কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার দেশে আসে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে বলেন, আগেই আমরা ধারণা করেছিলাম, শুধু দুবাইকেন্দ্রিক স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করতে পারলেই মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আয় করা সম্ভব। আমাদের ধারণা সত্য হয়েছে। এই ধারা ধরে রাখতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার জন্য বাংলাদেশকে কারো কাছে ধর্ণা দিতে হবে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদেশ ফেরত একজন ব্যক্তি বিনাশুল্কে ১শ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার আনতে পারেন। ভারতে এই সুবিধায় মাত্র ২০ গ্রাম স্বর্ণ আনা যায়। বাংলাদেশে এই সীমা কমিয়ে আনলে অর্থ পাচার আরও কমে আসবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ১ সপ্তাহ আগে
আপডেট : ১ সপ্তাহ আগে
রেমিট্যান্সে রেকর্ড, নেপথ্যে কী
স্বর্ণ চোরাচালানের উৎস সন্ধানে গত বছরের ডিসেম্বরে দুবাই সফর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল। ফিরে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে অবহিত করেন চোরাচালানের পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সক্রিয় হয়।
গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ জব্দ করে সংস্থাটি। উড়োজাহাজটির আসনের নিচ থেকে সোয়া দুই কেজির বেশি স্বর্ণ উদ্ধার হয়। আটক হন একজন। এই ঘটনা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আহরণে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে ধারণা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের। ওই উদ্যোগের ফলে দুবাইকেন্দ্রিক স্বর্ণচোরাচালানে ভাটা পড়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে মার্চে। মাসটিতে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা) রেমিট্যান্স এসেছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার ও জানুয়ারিতে ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। মার্চের পূর্বে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ছিল ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার; যা গত ডিসেম্বরে এসেছিল। প্রবাসী আয় রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও গেল বছরে বিদেশে কর্মী যাওয়ার পরিমাণ কমেছিল সাড়ে ২২ শতাংশ। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে, ২০২৪ সালে প্রবাসে নতুন কর্মী গেছে ১০ লাখ ১২ হাজার জন। এর আগের বছরে গিয়েছিল ১৩ লাখ ৬ হাজার কর্মী। জনশক্তি রপ্তানি প্রায় এক চতুর্থাংশ কমার পরও প্রবাসী আয়ে জোয়ারের পেছনে চোরাচালান কমে যাওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৭শ ৬২ মিলিয়ন (৭৬ কোটি ২০ লাখ) ডলার। এর মধ্যে শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেই বেড়েছে ১৭৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন (১৭ কোটি ৩৫ লাখ) ডলার। দেশটি থেকে মার্চে ৫০ কোটি ৮৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলার ও জানুয়ারিতে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুবাইভিত্তিক একটি বিশাল চক্র প্রবাসীদের থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে। আর বাংলাদেশে তাদের এজেন্টরা প্রবাসীদের আত্মীয়দের সমপরিমাণ টাকা বুঝিয়ে দেয়। প্রবাসীদের থেকে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ওই চক্রটি স্বর্ণের বার ক্রয় করে। এরপর নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুবাইফেরত উড়োজাহাজে এগুলো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
পাচারকৃত স্বর্ণের ৯০ ভাগের বেশি সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে যায়। এর এক অংশের বিনিময়ে ভারত থেকে চোরাচালানে আসে গরু, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য। বাকি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসে। এতে বাংলাদেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। কারণ, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় না এলে সেটি দেশের রিজার্ভে যুক্ত হয় না। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির হিসাবে, বছরে অবৈধপথে ৯১ হাজার কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার দেশে আসে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে বলেন, আগেই আমরা ধারণা করেছিলাম, শুধু দুবাইকেন্দ্রিক স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করতে পারলেই মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আয় করা সম্ভব। আমাদের ধারণা সত্য হয়েছে। এই ধারা ধরে রাখতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার জন্য বাংলাদেশকে কারো কাছে ধর্ণা দিতে হবে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদেশ ফেরত একজন ব্যক্তি বিনাশুল্কে ১শ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার আনতে পারেন। ভারতে এই সুবিধায় মাত্র ২০ গ্রাম স্বর্ণ আনা যায়। বাংলাদেশে এই সীমা কমিয়ে আনলে অর্থ পাচার আরও কমে আসবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ