নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৫ ১১:০৮ পিএম
চামড়া নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতায় হতাশা
চলতি বছর সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বাড়ালেও বাস্তবে বাজারে তার প্রতিফলন নেই। বিশেষ করে গরুর কাঁচা চামড়া আগের মতোই কম দামে হাতবদল হচ্ছে। আর অন্যান্য বছরের মতো এবারও ছাগলের চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাননি অধিকাংশ আড়তদার।
ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামেও চামড়া নিয়ে হতাশার খবর পাওয়া যাচ্ছে সংশ্লিদের কাছ থেকে। সেখানে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি নিয়ে এবারও বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ঈদের দিন দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন মোড়ে সড়কের ওপর চামড়া সাজিয়ে অপেক্ষা করলেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়ার দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও সেটি প্রতিপালন হচ্ছে না মাঠ পর্যায়ে। ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যেই বড় গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে। ছোট গরু হলে দাম আরও কম।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার দাম ৫ টাকা বাড়ানো হলেও রাজধানীতে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না চামড়া। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকায় কুরবানির গরুর কাঁচা চামড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বরাবরের মতো ছাগলের চামড়ায় আগ্রহ নেই ব্যাপারিদের।
মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, ‘দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম বলে ৫০০ টাকা। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু তারা তো কিনবে না। যারা মাঠ পর্যায়ে কেনে, তারা দাম না দিলে কী করবেন?’
তারই প্রতিবেশী রাইসুল বলেন, ‘গরিবের এই হকের ওপর যদি সরকার নজরদারি করতো তাহলে ভালো হতো। দাম নির্ধারণের পর সেই দামের অর্ধেকও দিতে চাইছেন না ক্রেতারা।’
অপরদিকে বিক্রেতাদের দাবি, চামড়ার মান তুলনামূলক ভালো হলেও ন্যায্য মূল্য মিলছে না।
সরেজমিনে ঘুরে তুলনামূলক ছোট আকারের গরুর কাঁচা চামড়ার দাম সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে মানভেদে বেশিরভাগ গরুর চামড়ার দাম হাঁকানো হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
একাধিক আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এমনটাই জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, না বুঝেই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনে নিয়ে আসেন। তবে চামড়ার বাজার ভালো না।
এদিকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের আড়তদাররা বলছেন, লবণযুক্ত সংরক্ষিত চামড়ার জন্য যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কাঁচা বা লবণবিহীন চামড়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ফলে বেশি দামে চামড়া কিনে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়ছেন।
মোহাম্মদ হোছাইন নামের এক মৌসুমি বিক্রেতা বলেন, প্রতিটি চামড়া গড়ে ৪০০ টাকায় কিনেছি। আড়তদাররা বলছেন ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে পারবেন। এবারও তো শুধু লোকসানই হবে। গত বছরও ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান দিয়েছিলাম।
মো. এহেসান নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ৫০টা বড় গরুর চামড়া কিনেছি গড়ে ৪৫০ টাকা করে। বিকেলে বিক্রি করেছি ৩৭০ টাকা করে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কুরবানি ঈদে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারি মালিকেরা। এ জন্য বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চলতি বছর চামড়ার সরবরাহ ভালো হলেও ছোট গরুর চামড়াই বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি চামড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দাম রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
ভোরের আকাশ/আজাসা