কমানোর পরামর্শ দিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ০৮:১৯ পিএম
বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্য বাড়ছে
আগামী বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে সরকার। এবারের মতো আগামীতেও ঘাটতি মেটাতে মূল নির্ভরতা থাকছে ব্যাংক ঋণেই। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট বাজেট ঘাটতির অর্ধেকই এই খাত থেকে মেটানোর লক্ষ্য নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অর্থমন্ত্রণালয় আগামী বাজেটের ঘাটতি ধরছে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে।
এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা আসবে ব্যাংক থেকে। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি বাজেট ঘোষণার সময় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। কিন্তু সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এটি কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়েছে। তবে সরকারকে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পরামর্শ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সবসময় দেখা যায় অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ এই সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয়। তবে চলমান অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সরকার যত ঋণ নিয়েছে, তা আগে থেকে ঠিক করা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।
জানা গেছে, ১০ মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৫৬ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নিয়েছে।
ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১২ মাসে ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সরকার এর মধ্যে থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের জন্য মাত্র ২৫ হাজার কোটি টাকা অবশিষ্ট থাকবে। এই পরিমাণ অর্থ বেসরকারি খাতের জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, সরকার যখন ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যায়। বিশেষ করে যখন সরকারি ঋণের সুদের হার ১১-১২ শতাংশ, যা ব্যাংকগুলোর জন্য ঝুঁকিহীন ও লাভজনক। ফলে ব্যাংকগুলো স্বভাবতই বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি খাতে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী হয়। এ অবস্থায় সরকারের উচিত সতর্কতার সঙ্গে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিবেচনা করা।
চলতি অর্থবছরে সরকারের ঋণ সংগ্রহের জন্য মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ থেকে অর্থ জোগানের পরিকল্পনা ৯০ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। আর দেশের ভেতর থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা আছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। এই অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ আসবে ব্যাংকিং খাত থেকে। বাকি টাকা সরকার সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ধরা হচ্ছে, যা বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। অন্যদিকে দেশি ঋণের পরিমাণ হবে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই অভ্যন্তরীণ ঋণের বেশির ভাগই আসবে ব্যাংকিং খাত থেকে, যেখানে সর্বোচ্চ এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। আর সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।
এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের কথা চিন্তা করছে। যদিও চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা ঠিক করা আছে সরকারের।
সরকারের ব্যাংক ঋণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংক খাত থেকে সরকার কত টাকা ঋণ নেবে, এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়ে থাকে, এবারও দেবে।
মুখপাত্র জানান, দেশে সম্প্রতি একটা সফল বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে। এটি এখন বাস্তবায়নের সময় আসছে। বিদেশি বিনিয়োগকারী আসলে এ দেশের একটি প্রতিনিধি থাকে যাদের মাধ্যমে তারা ব্যবসা করে। এখন দেশীয় উদ্যোক্তারা যদি বিনিয়োগের সময় পর্যাপ্ত ঋণ না পান তাহলে এই প্রক্রিয়াটা ব্যাহত হবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যাশা থাকবে সরকার এমন মাত্রায় ঋণ নেবেন না, যেটা বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে।
আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। এই বাজেটে সরকারের ব্যয় কমিয়ে আনা হবে এবং নতুন কোনো বড় প্রকল্প নেওয়া হবে না বলে জানা গেছে। মূল লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব ঘাটতি কমানো।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ টেলিভিশন ভাষণে বাজেট উপস্থাপন করবেন।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতিহার সুদ বাড়ানো, আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার মতো পদক্ষেপ নিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এসব ব্যবস্থার প্রভাবে মূল্যস্ফীতির চাপ কমতে শুরু করেছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ