× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সারাদেশে টিকা কার্ডের সংকট

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫ ১০:৫১ এএম

সারাদেশে টিকা কার্ডের সংকট

সারাদেশে টিকা কার্ডের সংকট

সারাদেশে দেখা দিয়েছে টিকা কার্ডের সংকট। বাচ্চার জন্মের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) টিকা দিতে হয়। টিকা প্রদানের পর নতুনদের পরবর্তী টিকাদানের তারিখ উল্লেখ করে টিকাদান কার্ড দেওয়া হয় এবং পুরাতনদের কার্ডে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ উল্লেখ করা হয়। দুর্ভোগ ও বিপাকে পড়ছেন বাচ্চাদের অভিভাবকরা। আর টিকা কার্ড না পাওয়ায় সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদ করাতে পারছেন না তারা।

শুধু তাই নয়, কার্ড না থাকায় টিকা কর্মসূচির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে শিশুদের টিকা প্রদানের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি অর্জন করলেও উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়ে গেছে বলে সতর্ক করেছে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গ্যাভি।

ইপিআই কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সময় (প্রাপ্যতা অনুযায়ী) যক্ষ্মা, ডিফথেরিয়া, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, পোলিও, হেপাটাইটিস বি, হিমো-ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, হাম ও রুবেলা এই ৯টি রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করা হয়। পাশাপাশি ১৫ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের পাঁচ ডোজ টিটি টিকা দেওয়া হয়।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘এই সংকট হুট করে হয়নি। গত বছর আমাদের টেন্ডার হয়নি। সাপ্লাই দেয়নি। আমরা বিলও দেইনি। বছর শেষ হয়ে গেছে, আমরা কী করবো? এবার প্রিন্টিংয়ে যাচ্ছে। দু-এক মাস লাগবে হয়তো। এরপর সব জায়গায় পৌঁছে দেবো।’

দুর্ভোগ ও বিপাকে অভিভাবকরা
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার জয়রামকুড়া গ্রামের দম্পতি মো. কামাল ও জুলেখা। তারা ভোরের আকাশকে জানান, আমাদের নবজাতক শিশুকে টিকা দেওয়ানোর জন্য  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। টিকা কার্ড না থাকার কথা জানালেন স্বাস্থ্য সহকারী মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কার্ড পৌঁছলে জানানো হবে। কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা জানানো হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কামাল ও জুলেখা দম্পতি। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী ধোবাউড়া উপজেলাতেও।

সদর ইউনিয়নের স্বপন সরকার বলেন, ‘ কয়েক সপ্তাহ ধরে টিকা কার্ডের জন্য যোগাযোগ করছি। একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে বলে রেখেছি। কার্ড আসা মাত্রই খবর পাবো বলে জানান স্বপন সরকার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েক স্বাস্থ্য সহকারী ভোরের আকাশকে জানান, গত কয়েক মাস ধরে পর্যাপ্ত টিকা কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে আমাদের কোনো অবহেলা নেই। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে জেলায় এবং সেখান থেকে উপজেলায় এসে  পৌঁছায়। সংকটের কারণ জানি না।

দুর্গাপুরের মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা সুজন মারাক। তিনি উপজেলা সদরে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করেন। তিনি জানান,  বেশিরভাগ এলাকায় সাদা কাগজে হাতে লিখে টিকা দেওয়ার তথ্য সংরক্ষণ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কোথাও অনলাইন থেকে প্রিন্ট করে কাগজ দেওয়া হচ্ছে। যদিও এগুলো অফিসিয়াল কাজে গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান সুজন মারাক।

টিকা কার্ড পাননি এমন ভুক্তভোগীদের একজন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসে আমার একটি ছেলে সন্তান জন্ম লাভ করে। জন্মের ৪৫ দিনের মাথায় স্থানীয় মা ও শিশু কেন্দ্রে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে কোনো টিকা কার্ড দেয়নি। তাদের জিজ্ঞেস করা হলে জানায়, কার্ড শেষ হয়ে গেছে অনেক দিন আগে। কিন্তু সরকার থেকে এখনো তাদের কাছে কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। তৃতীয় দফায় টিকা দেওয়া হলেও কার্ড এখনো দেয়নি। টিকা কার্ড না দেওয়ার কারণে জন্ম নিবন্ধন সনদ করতে পারছি না।’

একই এলাকার আবু সাঈদও এ ঘটনার ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা অনলাইন পেপার দিয়েছে। সেটা দিয়ে আপাতত টিকা দিচ্ছি। কিন্তু কার্ড দেয়নি। এ কারণে ভবিষ্যতে তো আমরা বিপাকে পড়বো। জন্ম নিবন্ধন সনদ করা যাবে না। এ সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হবো।’ একই চিত্র বরগুনা জেলায়। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহে ঘুরে শিশু আসফিয়া তাইয়েবার টিকা দেওয়া গেলেও কার্ড পাননি তার মা শাহিমা আকতার।

শাহিমা আকতার বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে গিয়ে যথাসময়ে টিকা দিতে পারছি না। এক সপ্তাহেরটা আরেক সপ্তাহে দিতে হচ্ছে। আর টিকা কার্ড তো নাই। দিবে কোত্থেকে? চার মাস হয়ে গেলেও টিকা কার্ড পাইনি। যার কারণে জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদনও করতে পারছি না।’

টিকা কার্ডের সংকট রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়ও। জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী নীহার রঞ্জন আচার্য্য বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই টিকা কার্ডের সংকট। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ নেই।’
চার লাখ শিশু সব টিকা পায়নি, আওতায় আসেনি ৭০ হাজার

শিশুদের টিকা প্রদানের হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি অর্জন করলেও উল্লেখযোগ্য ব্যবধানু রয়ে গেছে বলে সতর্ক করেছে ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গ্যাভি। প্রায় চার লাখের মতো শিশু ঠিকমতো সব টিকা পায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাগুলো।

এছাড়া তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৭০ হাজার শিশু একেবারেই টিকার আওতায় আসেনি। এতে এসব শিশুর অবস্থা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল এক যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলগুলোতে টিকা না পাওয়ার হার বেশি। এখানে মাত্র ৭৯ শতাংশ পুরোপুরি টিকা পেয়েছে। কিন্তু ২ দশমিক ৪ শতাংশ এক ডোজ টিকাও পায়নি এবং নয় দশমিক আট শতাংশ টিকার সব ডোজ ঠিকমতো পায়নি। সেই তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ৮৫ শতাংশ শিশু টিকার সব ডোজ পেয়েছে।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 সেবা দিয়ে জনগণের মন জয় করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

সেবা দিয়ে জনগণের মন জয় করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

সংশ্লিষ্ট

সারাদেশে টিকা কার্ডের সংকট

সারাদেশে টিকা কার্ডের সংকট

নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে ৮৫ শতাংশ রোগী

নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে ৮৫ শতাংশ রোগী

কোথায় বসবে কে চালাবে ঠিক না করেই মেশিন কেনার তোড়জোড়

কোথায় বসবে কে চালাবে ঠিক না করেই মেশিন কেনার তোড়জোড়

ডায়ালাইসিস যুদ্ধেই প্রাণক্ষয়

ডায়ালাইসিস যুদ্ধেই প্রাণক্ষয়