আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫ ০১:৪৯ এএম
চীনের নতুন মেগা বাঁধে পানির যুদ্ধ আশঙ্কা, উদ্বেগে ভারত
চীনের পরিকল্পিত নতুন মেগা পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে ভারত। দিল্লির আশঙ্কা, তিব্বতে ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত চারটি সূত্র এবং ভারত সরকারের একটি বিশ্লেষণে এমন আশঙ্কা উঠে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতও দ্রুত নিজস্ব বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে, যাতে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলা করা যায়।
চীন গত ডিসেম্বরে ঘোষণা দেয়, সীমান্তবর্তী এক জেলায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ করবে। নদীটি ভারতে প্রবেশের পর সিয়াং ও ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত, যার ওপর নির্ভর করে চীন, ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে ১০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা। ভারতের দীর্ঘদিনের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী চীন এই নদীকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের সরকারি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনের বাঁধ সম্পন্ন হলে তারা প্রায় ৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরাতে পারবে, যা সীমান্তে ভারতের প্রাপ্ত পানির এক-তৃতীয়াংশের বেশি। এতে শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। এর জবাবে ভারত আপার সিয়াং মাল্টিপারপাস স্টোরেজ ড্যামের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে, যা ১৪ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সঞ্চয় করতে সক্ষম হবে।
তবে ভারতের ভেতরে এই প্রকল্পকে ঘিরে তীব্র প্রতিবাদ দেখা দিয়েছে। অরুণাচল প্রদেশের আদি সম্প্রদায় আশঙ্কা করছে, বাঁধ নির্মিত হলে অন্তত ১৬টি গ্রাম বিলীন হবে এবং প্রায় ১০ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয়রা সড়কে প্রহরা বসিয়েছে যাতে জরিপকর্মীরা প্রবেশ করতে না পারে।
একজন স্থানীয় দোকানি ওডনি পালো পাবিন বলেন, “এই জমি থেকেই আমরা ধান, এলাচ, কাঁঠাল চাষ করি। এগুলো দিয়েই সন্তানদের শিক্ষার খরচ জোগাই। আমরা মরে গেলেও বাঁধ হতে দেব না।”
তবে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী এবং স্থানীয় এমপি প্রকল্পটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন করলে মানুষকে রাজি করানো সম্ভব। ইতোমধ্যে কয়েকটি গ্রাম এনএইচপিসিকে বাঁধ-সংক্রান্ত কাজ করতে অনুমতি দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, তিব্বত ও অরুণাচল ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় বিশাল বাঁধ নির্মাণ বিপজ্জনক হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার গবেষক সায়নাংশু মডক বলেন, “ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় এ ধরনের প্রকল্প ভূমিধস, হিমবাহ হ্রদ ভেঙে বন্যা এবং নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ভারতকে অবশ্যই এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
চীনের দাবি, তাদের প্রকল্পগুলো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অনুমোদিত হয়েছে এবং ভাটির দেশগুলোর পানি, পরিবেশ বা ভূতত্ত্বের ক্ষতি করবে না। অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সম্প্রতি চীনা সমকক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছে। ইসলামাবাদের দাবি, দিল্লি পানি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ১৯৬০ সালের পানি-বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে।
সূত্র: রয়টার্স
ভোরের আকাশ//হ.র