বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ : ১১ ঘন্টা আগে

আপডেট : ২ ঘন্টা আগে

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমেনা বালুচের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির কূটনীতিক সম্পর্কে গতি ফিরতে শুরু করেছে। তিন দিনের সফর শেষে গতকাল শুক্রবার তিনি ঢাকা ছেড়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ২৭ এপ্রিল দুইদিনের সফরে ঢাকা আসছেন বলে জানা গেছে। তাদের এই সফরে দেশ দুটির কূটনীতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে দেশ দুটির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে। বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যুগুলোরও সমাধান হবে বলে উভয় পক্ষ আশা করছে। এছাড়া বাণিজ্য বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন তারা।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার অভিন্ন অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। ১৫ বছর পর আবারও অনুষ্ঠিত হলো পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমেনা বালুচ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন।

গত বৃহস্পতিবারের বৈঠকের খুঁটিনাটি গতকাল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। বৈঠকে উভয় দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং জনগণের অভিন্ন আকাক্সক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়। নিউইয়র্ক, কায়রো, সামোয়া ও জেদ্দায় সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই সব যোগাযোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো দ্রুত চূড়ান্তকরণ, নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সংযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। পাকিস্তান তাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির প্রস্তাবে বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে এবং শিক্ষা খাতে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সংযোগকে অগ্রাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ওই বৈঠকে দুই পক্ষ করাচি ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি নৌযান চলাচল শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানায়। দুই পক্ষ সরাসরি আবার আকাশপথে যোগাযোগ চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে। ভ্রমণ ও ভিসা সহজীকরণে অগ্রগতির প্রতিও উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ক্রীড়া, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিতে বড় পরিসরে সহায়তায় বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে উভয় দেশ সার্কের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে মত দিয়েছে। এ সময় কাশ্মির ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে পাকিস্তান। এ ছাড়া বৈঠকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও সেখানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। তার সঙ্গে বৈঠকে আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বাহ্যিক চাপমুক্ত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। শিগগিরই পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফরের প্রত্যাশার কথা জানানো হয়। দুই দেশের মধ্যে পরবর্তী বৈঠক ২০২৬ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

ঢাকা ছাড়লেন আমেনা বালুচ : তিন দিনের সফর শেষে গতকাল সকালে ঢাকা ত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমেনা বালুচ। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি বৈঠকে যোগ দিতে বুধবার ঢাকায় আসেন আমেনা বালুচ। সফরের দ্বিতীয় দিন গত বৃহস্পতিবার বেশ ব্যস্ততায় কাটে তার। শুরুতে এফওসি বৈঠকে ইসলাবাদের নেতৃত্ব দেন বালুচ।

অমীমাংসিত বিষয় ভোলেনি ঢাকা : প্রায় ১৫ বছর পর হওয়া বৈঠকে দুদেশের সম্পর্ক মজবুত করতে পাকিস্তানকে অমীমাংসিত ঐতিহাসিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে বলেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে একাত্তরে গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা এবং প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার পাওনা চেয়েছে সরকার। এ ছাড়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের কথাও পাকিস্তানকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এফওসি বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বালুচ।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিন বলেন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভক্ত সম্পদের সুষম বণ্টন, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বৈদেশিক সাহায্য তহবিল হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে জনসমক্ষে ক্ষমা চাওয়ার বিষয় আলোচনায় ছিল।

তিনি জানান, বাংলাদেশের আগের একটি হিসাবে ৪০০ কোটি ডলার এবং আরেকটা হিসাবে ৪৩২ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে পাকিস্তানের কাছে। এ হিসাব আলোচনায় বলেছি। বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের যখন অপশন দেওয়া হয়, কেউ কেউ বাংলাদেশে থেকে যেতে চান, কেউ কেউ পাকিস্তানে ফিরে যেতে চেয়েছেন। আটকে পড়া পাকিস্তানির সংখ্যা তিন লাখ ২৪ হাজার ৪৪৭ জন। অমীমাংসিত যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো নিয়ে পাকিস্তান আলোচনায় থাকবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ভারতের পরিবর্তে পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, সেটাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে গেলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মীমাংসা করা প্রয়োজন।

পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষ গেলে সেটাকে ঝোঁকা মনে হয় না। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে যেভাবে এনগেজ হচ্ছি, সেটার ভিত্তি হচ্ছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক লাভ। আমরা আমাদের লাভের দিকে দেখছি।

তিনি বলেন, কূটনীতির কাজ হচ্ছে আমাদের অবস্থানটা তুলে ধরে সেটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তারা বলেছে এ বিষয় তারা ভবিষ্যতে আলোচনায় রাখতে চান। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার আগামী ২৭ ও ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান তিনি।

সম্পর্ক জোরদারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার : বাণিজ্য ও ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজে বের করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমেনা বালুচ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস বলেন, কিছু বাধা রয়েছে। আমাদের সেগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সেখানে আমেনা বালুচ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের নিজেদের মধ্যে বিশাল আঞ্চলিক বাজার রয়েছে। আমাদের এটি কাজে লাগানো উচিত। আমরা প্রতিবারই সুযোগ হারাতে পারি না।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য সুখবর

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য সুখবর

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন হবে সর্বোত্তম: প্রধান উপদেষ্টা

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন হবে সর্বোত্তম: প্রধান উপদেষ্টা

আমরা একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই: আলী রীয়াজ

আমরা একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে চাই: আলী রীয়াজ

আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে পুলিশকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর নির্দেশ

আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে পুলিশকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর নির্দেশ

ঢাকায় পৌঁছেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ

ঢাকায় পৌঁছেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ

ঢাকায় পৌঁছেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ

ঢাকায় পৌঁছেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক

সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক

ট্রাম্পের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন বুধবার

ট্রাম্পের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন বুধবার

‘নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন’

‘নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন’

মন্তব্য করুন