বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার বাতাসা-কদমা
বাতাসা বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় মিষ্টিজাতীয় খাবার। এটি ময়দা, চিনি, এবং ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। বাতাসা তৈরির জন্য, প্রথমে ময়দা, চিনি এবং ঘি মিশিয়ে একটি নরম মণ্ড তৈরি করা হয়। এরপর, এই মণ্ড থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করে গরম তেলে ভেজে নেওয়া হয়। ভাজা হয়ে গেলে, বাতাসাগুলো ঠান্ডা করে পরিবেশন করা হয়। বাতাসা বিভিন্ন আকারে এবং আকৃতিতে তৈরি করা যেতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুরা বাতাসা পূজার প্রসাদ হিসাবে ব্যবহার করেন। অনেক হিন্দু মন্দিরে "হরির লুট" নামে বাতাসা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার রীতি আছে।একটি ছোট বাতাসায় ক্যালরির পরিমাণ প্রায় ১০০ শতাংশ থাকে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের বাতাসা এড়িয়ে চলা উচিত। কদমা, বাতাসা, মুরলি কোথাও ‘সাজ খাবার’ আবার কোথাও ‘মিঠাই’ নামে পরিচিত। সারা বছরই এসবের চাহিদা থাকে। তবে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-পাঁচ মাস গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন মেলার সময় বাতাসার চাহিদা বাড়ে। বৈশাখ মাসে বাতাসার চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি।[সংগৃহীত ছবিবাতাসার ধরণচিনি বাতাসা: এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের বাতাসা। এটি শুধুমাত্র চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়।এলাচ বাতাসা: এতে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয়।পেস্তা বাতাসা: এতে পেস্তা গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয়।কাঁঠাল বাতাসা: এতে কাঁঠালের টুকরা মিশিয়ে তৈরি করা হয়।নারকেল বাতাসা: এতে নারকেলের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করা হয়।উপকরণচিনিদুধখাবার সোডাপ্রস্তুত প্রণালীকড়াইতে চিনি অথবা গুড়, জল একসঙ্গে ফোটাতে হবে। ফুটে উঠলে দুধ দিয়ে ফেনার মতো ময়লা পরিষ্কার করে খাবার সোডা দেওয়া হয়। ঘন ঘন হলে গোল চামচের এক চামচ করে বাঁশের ডালায় ফেলে ঠান্ডা করে জমিয়ে নিয়ে বাতাসা তৈরী করা হয়।[সংগৃহীত ছবিব্যবহারকলা পাতার উপরে পিতলের থালায় প্রসাদ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। একদম মাঝ খানে কদমা এবং তার উপরে সাজ। তার দিকে লাল, হলুদ ও সাদা রঙের মঠ সাজিয়ে রাখা হয়েছে।সাধারণত পৌষ সংক্রান্তিতে কদমা, বাতাসা, তিলের খাজা বেশি খাওয়া হয়। মেলা, রথ প্রভৃতিতে বাতাসা অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। লক্ষ্মীপূজাতেও এর ব্যবহার আছে।বাংলা সনের প্রবর্তক হিসাবে বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ এবং মোগল সম্রাট আকবর এর নাম শোনা যায়। আকবরের সিংহাসনের আরোহনের পর থেকে বঙ্গাব্দ (তারিখ-ইলাহী) প্রচলন করা হয়। সেই থেকে সারা বাংলায় উদযাপিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষের মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসব।বৈশাখ আসে সদম্ভ পায়ে বিস্ফোরিত চোখ, ত্বরিত তিলক আঁকা, উদ্দাম পেশী, বিস্তৃত বক্ষদেশ, যেন এক জটধারী যুবা সন্ন্যাসী, সঙ্গে শত সেবা দাসী, অন্তঃসত্বা মেঘ-গোপিনীরা। বৈশাখ কখনো বিদ্রোহী ‘ঘনশ্যাম’ বিক্ষুদ্ধ নকীব, তাই তার অন্য পরিচয় ‘কাল বৈশাখী’। ওই কালবৈশাখীর মরণ ছোবল যেনেও এই এলাকায় মানুষেরা শুভ নববর্ষকে বরণ করে নেয় আপন তাগিদে। তাইতো কবি গুরুর গান গীত হয় ‘এসো হে বৈশাখ এসো’।সংগৃহীত ছবিগ্রাম এলাকার মানুষেরা এই দিনটিকে বরণ করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। বৈশাখ এলে গ্রামীণ চিত্র যায় পাল্টে, খাঁ খাঁ মাঠে এক মাথা তাল, প্রান্তরে বট কিংবা মানুষের সাধ্যমত ঘর বাড়ি সচকিত হয়ে উঠে। বনে বনে আন্দোলন, কী জানি কখন ক্ষেপে যায় বৈশাখ।হাটের দিন সকালে পলিথিনের অথবা কাপড়ের ছাউনি দিয়ে ব্যবসায়ীরা সাজাতো দোকানপাট।এরপর গ্রামের কৃষকেরা হাটে নিয়ে যেতেন টাটকা শাকসবজি ও মৌসুমী শস্যদ্রব্য।দুপুরের পর কেনা-বেচা চলতো ধুমছে। ওইসব দোকানগুলোতে পাওয়া যেতো চাল, ডাল, শাকসবজি, ফল, মাছ-মাংসসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিস। সন্ধ্যা হলে শেষ হয়ে যেতো হাটের সব বেচা-কেনা। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে গ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা হাটবাজারগুলো।হাটবাজারের জমি দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে উঁচু ভবন। তৈরি করা হচ্ছে শপিংমলসহ বিভিন্ন মার্কেট।যার ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হাটবাজার। বর্তমান বাজারে গিয়ে এখন পাওয়া যায় না অমৃত সেই বাতাসা। পাওয়া যায় না টাটকা শাকসবজি এবং নদী-নালা ও খাল-বিল থেকে ধরে আনা ছোট বড় দেশীয় মাছ।গাজীপুরের হাট বাজারগুলোর মধ্যে কড্ডা হাট, কারখানা হাট, সাকাশ্বর হাট, বাঘিয়া হাট, কাশিমপুর হাট ও টঙ্গী হাটসহ অনেক হাট বাজার এখন বিলুপ্তির পথে।গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে সরকারি তালিকা অনুযায়ী একশ’ চারটি হাট রয়েছে। এদের মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলায় রয়েছে মির্জাপুর হাট, ভবানীপুর হাট, বাড়ীয়া হাট, বাঘের বাজার, পিরুজালী হাট, সিটি করপোরেশন এলাকার কড্ডা হাট, কাশিমপুর হাট, টঙ্গী হাট, কালিয়াকৈর উপজেলায় রয়েছে- চা বাগান বাজার, গাছবাড়ী বাজার, চন্দ্রা হাট, বেনুপুর হাট, বলিয়াদি হাট, বড় কাঞ্চনপুর হাট, সাকাশ্বর হাট ও সিঙ্গাপুর বাজার।সংগৃহীত ছবিএদিকে কাপাসিয়ায় রয়েছে বারাব বাজার, দরদরিয়া হাট, বলদা হাট, চাঁদপুর বাজার ও বেগুনির হাট। শ্রীপুরে রাজবাড়ী বাজার, ফাওগাইন বাজার, কাওরাইদ বাজার, বরমী বাজার, কেওয়া বাজার, ধনুয়া বাজার ও টেংরা বাজার।কালীগঞ্জে রয়েছে সাধুর হাট, সোমবাজার, জাঙ্গালিয়া হাট, নরুন বাজার ও কালীগঞ্জ বাজার। এছাড়াও অনেক হাট-বাজার রয়েছে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায়।কড্ডা হাট এলাকার বাসিন্দা শ্রী শ্যামল চন্দ্র শীল জানান, গত কয়েক বছর আগে কড্ডা হাট ছিলো বেশ জমজমাট। এখন আগের মতো নেই। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার বসে কড্ডার হাট। এখন হাটে তেমন লোকজন আসে না। বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট হয়ে যাওয়ায় হাটের দিকে মানুষের আসা কমে যাচ্ছে। দিন পাল্টে গেছে। সব কিছু আধুনিক হয়ে যাচ্ছে ফলে প্রায় বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী হাট-বাজার।ভোরের আকাশ/তা.কা