সংগৃহীত ছবি
অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় সমর্থন জানাতে মালয়েশিয়ার প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (২৭ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মালয়েশিয়ার পিপলস জাস্টিস পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের কন্যা নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এই সমর্থন চান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আসিয়ানের অংশ হতে চাই এবং আপনাদের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আসিয়ানের বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে থাকা মালয়েশিয়া বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে, যাতে বাংলাদেশ প্রথমে খাতভিত্তিক সংলাপের অংশীদার এবং পরবর্তীতে এই আঞ্চলিক সংস্থার পূর্ণ সদস্যপদ পেতে পারে। সাক্ষাৎকালে নুরুল ইজ্জাহ ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সম্প্রতি সংঘটিত বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এটি আমাদের দেশের জন্য একটি দুঃখজনক এবং দুঃখজনক ঘটনা। আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি।
তিনি নুরুল ইজ্জাহকে তার নতুন ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানান এবং বলেন, আপনার রাজনৈতিক দলের সহ-সভাপতি হওয়ার জন্য অভিনন্দন।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত সংস্কারের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমরা একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের ছাত্ররা তাদের বুকে গুলি খেয়ে ফ্যাসিবাদী হাসিনার শাসনকে উৎখাত করেছে। এটি একটি যুব-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু সব শ্রেণির মানুষ এতে যোগ দিয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে বলেন, এশিয়া দ্রুত বৃদ্ধ হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে প্রচুর তরুণ রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক ২৭ বছরের কম বয়সী। এখানে আপনার শিল্প স্থাপন করুন এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করুন। এটি আমাদের উভয় অর্থনীতিকে সাহায্য করবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং সিনিয়র সচিব এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, অব্যাহত আলোচনার মাধ্যমে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই ঐতিহাসিক জুলাই সনদের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় পৌঁছাতে যাচ্ছে কমিশন।সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০তম দিনের বৈঠকের শুরুতে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন।অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আপনাদের সহযোগিতায় আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আমাদের একটি সনদের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে পারবে বলে আমরা আশা রাখি।তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বারবার আমরা পরিবর্তন ও সংস্কার করি এই কারণে যে, এতে করে যেন সকলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে একমত হতে পারে। এ পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। যদিও দুটি বিষয়ে নোট অফ ডিসেন্ট রয়েছে। তবুও আমি বলব, যেহেতু সবাই ছাড় দিচ্ছেন, সে কারণে এই ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলো কোনো না কোনোভাবে আমাদের নিষ্পত্তি করতেই হবে। যেমন ধরুন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সবার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম রয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি কাঠামো আমাদের জাতির সামনে উপস্থাপন করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে আমরা এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আরেকবার না যাই। এ কারণেই বারবার আলোচনা করার মাধ্যমে আপনাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটিয়ে, তা পরিবর্তন পরিমার্জন ও প্রয়োজনে সংশোধন করা হচ্ছে।এ সময় আলোচনা একইভাবে অব্যাহত রেখে আগামী দুই-একদিনের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোর জন্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।ভোরের আকাশ/এসএইচ
গণঅভ্যুত্থানের সময় আহতদের সেবায় যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আপনারা কেবল চিকিৎসক নন, এই জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক। আপনারা যেভাবে এই দুঃসময়ে সেবা দিয়েছেন, জাতি তা কোনোদিন ভুলবে না।সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আহত আন্দোলনকারীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানে আয়োজিত ‘জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠানে’ এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন ড. ইউনূস।বার্তার শুরুতেই প্রফেসর ইউনূস মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেদিনের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাতির জন্য এটি এক মর্মান্তিক ক্ষতি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, আমি তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এই দুর্ঘটনা আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়, চিকিৎসা পেশার বিশাল দায়িত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ। যখন চারদিকে কান্না আর আতঙ্ক, তখন আপনাদের সেবা আমাদের একমাত্র আশার আলো।তিনি আরও বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন আহতদের চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না, তেমনি চলমান আন্দোলনের সময়ও সেই নীতির ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা সেই ব্যতিক্রমই দেখেছি’ বলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ফ্যাসিবাদী সরকার শুধু গুলি চালিয়েই থেমে থাকেনি, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে যেন কেউ চিকিৎসা না পায়।চিকিৎসকদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের সেই সময়কার ভূমিকা কোনও যুদ্ধক্ষেত্রের চিকিৎসকদের সাহসকেও হার মানায়। যখন রাস্তায় রক্তাক্ত ছাত্রদের হাসপাতালে এনে ফের হামলা চালানো হয়েছে, ডাক্তার-নার্সদের হুমকি দেওয়া হয়েছে—তখনও আপনারা পিছু হটেননি।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহতদের জন্য রক্তের সংকট ছিল, প্রশাসনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে আপনারা রক্তের ব্যবস্থা করেছেন। আহতদের পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবস্থাপত্রে অন্য নাম, অন্য রোগ লিখে তাদের পুলিশের কাছ থেকে আড়াল করেছেন। প্রাইভেট ডাক্তাররা প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে হাসপাতালে গিয়ে গোপনে চিকিৎসা দিয়েছেন। রক্ত দেওয়ার সরঞ্জামের সরবরাহ ছিল না, আপনারা নিজেরাই এগুলো ব্যবস্থা করেছেন। এন্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ আপনারা নিজেরাই সরবরাহ করেছেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সাহিল ফারাবি আয়ান (১৪) নামে আরও এক শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করেছে।রোববার (২৭ জুলাই) দিবাগত রাত ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আয়ান। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান। তিনি বলেন, আয়ানের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। ক্রিটিক্যাল অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে ছিল সে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে ঘটনাটিতে ইনস্টিটিউটে ১৮ জনের মৃত্যু হলো। এখন ভর্তি আছেন ৩৩জন। যাদের মধ্যে তিনজন এখনও আইসিইউতে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন।গত সোমবার (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতদের বেশির ভাগই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-ছাত্রী।ভোরের আকাশ/এসএইচ
অবশেষে আজ জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে তুলে দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে কমিশনের চলমান আলোচনা। ১৭টি বিষয়ের মধ্যে সাতটির ঐকমত্য অসমাপ্ত আছে। আর তিনটি বিষয়ে আলোচনা এখনো হয়নি। জাতীয় সনদ সইয়ের জন্য চলমান আলোচনায় একটি দিন বরাদ্দ রাখা হবে। এমন তথ্য দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের আলোকেই ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত কয়েক মাস ধরে এমন ঘোষণা দিয়ে আসছে। কমিশনের হাতে সময় মাত্র চারদিন। আবার আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র আদায় করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। খসড়া সনদের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর ‘মতামত’ প্রদানের বিষয়টাও সময়সাপেক্ষ। ফলে জুলাই সনদ ঘোষণার ক্ষেত্রে এখনও সময় ও অনৈক্যের চাপ রয়েই যাচ্ছে।গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে নানা আপত্তির পাশাপাশি কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি হিসেবে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’ যুক্ত করা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বামপন্থি ৪টি রাজনৈতিক দল। দলগুলো হচ্ছে- সিপিবি, বাসদ, বাসদ মার্কবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ। তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অন্য দলগুলো কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।এ বিষয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সংবিধানের মূলনীতির প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়া সম্ভব না। কারণ এখানে বিভিন্ন আদর্শের মানুষ আছে। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে যাবে, তারা সিদ্ধান্ত দেবে।’তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের এই সংবিধানে অনেক অসম্পূর্ণতা আছে। সেজন্য আমরা আলোচনা করছি, যাতে সম্পূর্ণ করা যায়। কিন্তু মূলনীতির প্রশ্নে ছাড় দেওয়া সম্ভব না।’বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরে প্রিন্স বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি প্রসঙ্গে এভাবে লেখা যেতে পারে। সংবিধানে রাষ্ট্রীয় পরিচালনার চার মূলনীতির সঙ্গে (৭২ সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা) সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা যেতে পারে।’প্রিন্সের দাবি, নীতিগত বিষয় যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোর করে শব্দের মারপ্যাঁচে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার মূলনীতি আছে, সেটা পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত জাতির সামনে প্রকাশিত করা হয়, সেটার সঙ্গে আমরা একেবারেই নেই। এরকম অবস্থা যদি চলতে থাকে আমাদের পক্ষে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা নিয়মিত করা সম্ভব হবে না। একইসঙ্গে যে ঐকমত্য গঠনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে একমত হচ্ছি, সেটাও বাধাগ্রস্ত হবে। কমিশনের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেন এই নেতা।কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতির প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কমিশনের প্রস্তাবিত রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, বরং এটাই আমাদের প্রস্তাব।’গণসংহতির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিগুলো, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে।’তিনি বলেন, ‘সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের মতো বিতর্কিত ধারণার পরিবর্তে কমিশন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে, যা বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্ন পূরণ করবে।’বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে আমরা গত ৪ দিন ধরে আলোচনা করছি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মনে করে, ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। কারণ সমাজতন্ত্র আন্তর্জাতিকভাবে একটা পরিত্যক্ত বিষয় হয়ে গেছে।’তিনি বলেন, ‘বিগত ৪ দিনের আলোচনার পর কমিশন আজকে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তার প্রতি আমরা সমর্থন দিয়েছি। যদিও আমাদের অনেকের মনের মধ্যে ভিন্নমত আছে, সেটা হলো আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস এই শব্দটা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারপর কমিশনের প্রস্তাবে যেহেতু ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি কথা আছে, তাই আমরা ভিন্নমত থেকে সরে এসেছি। তবে, ভবিষ্যৎতে কোনো রাজনৈতিক দল যদি সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে এবং সেটা পাস হয়, হয়তো তখন আমরা তার বিরোধিতা করব না।’এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দলীয় অবস্থান হচ্ছে পূর্বের (মূলনীতি) সবকিছু বাতিল করা। কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা আছি। আমরা পূর্বেকার তর্কে যেতে চাই না।’ এক ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, একমত সব দলএক ব্যক্তি জীবনে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন না-এতে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এছাড়া তারা স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেও একমত হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে চলমান দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ এমন তথ্য জানান। তিনি বলেন, জুলাই সনদে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর উল্লেখ করব।পরে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা একবার বলেছি, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন না। আমি বলেছিলাম, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কমিটি থাকলে বিষয়টি মানব না। আমরা এ হাউজের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ-সংক্রান্ত বিধান সংবিধানে যুক্ত করব। এর বাইরে বিষয়ে আলোচনা হলে আমাদের শর্ত বহাল থাকবে। আশা করি, সেটা বিবেচনা করবেন। এখন ১০ বছরের বিষয়ে আপনারা ঘোষণা দিতে পারেন। বরং এটা আমাদের প্রস্তাব।এর আগে আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরে দলগুলো আলোচনা করে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনে একমত হয়। তবে আইনি কাঠামো নিয়ে আলোচনা করবে।এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত। গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনায় একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়েছে, যা পুলিশের জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা ও জনবান্ধবতা নিশ্চিত করবে।দলগুলো জুলাই সনদের খসড়া সোমবারের মধ্যে পাবেন: আলী রীয়াজজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জুলাই সনদের খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। সেটা আগামীকাল সোমবারের মধ্যে সব কটি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হবে। দলগুলো দ্রুত মতামত দিলে সেটা সন্নিবেশিত করা হবে। গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার ১৯তম দিনে সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।সনদের খসড়া নিয়ে সংলাপে আলোচনা করা হবে না জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘যদি বড় রকমের মৌলিক আপত্তি ওঠে, তাহলে আলোচনায় আনব, না হলে আনব না। আপনাদের পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হলে সেটা সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক সনদে ভূমিকা-পটভূমি থাকবে এবং কমিটমেন্টের জায়গা থাকবে।’আলী রীয়াজ জানান,জাতীয় সনদ সইয়ের জন্য চলমান আলোচনায় একটি দিন বরাদ্দ রাখা হবে। তিনি বলেন, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের চলমান আলোচনা শেষ করা হবে। ১০টি বিষয়ে আমরা ঐকমত্য হয়েছি। সাতটি বিষয়ে ঐকমত্য অসমাপ্ত আছে। আর তিনটি বিষয়ে আলোচনা এখনো হয়নি।’জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রোববারের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।এ আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ