বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্বে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ বশিরউদ্দীনের দায়িত্ব আরও বেড়েছে। এখন থেকে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করবেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা সচিব জাহেদা পারভীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিম্নরূপভাবে উপদেষ্টাদের মধ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন/পুনর্বণ্টন করেছেন। সে অনুযায়ী বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন শেখ বশিরউদ্দীন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
বাংলাদেশে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেছেন সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার একের পর এক বৈঠক করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এর আগে দিনের বেলা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন আমনা বালুচ।এদিকে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ সাক্ষাৎ করেন। এ সময় এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এসব কাটিয়ে ওঠার উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে।ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সার্কের কাঠামোয় পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তিনি সবসময়ই পছন্দ করেন।তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে বন্ধন বাড়াতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উচিত দুই দেশের মধ্যে আরও বেশি যুব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিনিময় করা। আমাদের সম্পর্ক হিমশীতল হয়ে যাওয়ায় আমরা দীর্ঘদিন একে অপরকে মিস করছিলাম। আমাদের প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রম করতে হবে।প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে কায়রোতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সার্ক, ওআইসি ও ডি-৮ এর মতো বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ফোরামে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে।এ সময় অতীতের বিষয়গুলো স্বীকার করে আমনা বালুচ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের আয়ত্তে বিশাল আন্ত-বাজার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের এটি ব্যবহার করা উচিত। আমরা প্রতিবার ‘বাস মিস’ করতে পারি না। দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে নিয়মিত পারস্পারিক যোগাযোগ এবং সব পর্যায়ে দুদেশের মধ্যে সফর আয়োজনের প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন পাকিস্তানি এই আমলা।পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আশা প্রকাশ করেন, এপ্রিলের শেষ দিকে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের আসন্ন সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফপিসিসিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে : পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিববাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা জানান। বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ তার দেশের নেতৃত্ব দেন। এর আগে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।বৈঠক শেষে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন বলেন, বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ অমীমাংসিত বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হিস্যা ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১৯৭০ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে বিদেশ থেকে আসা ২০০ মিলিয়ন সমপরিমাণ ডলারের হস্তান্তরের আহ্বান জানানো হয়েছে।অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ আটকেপড়া পাকিস্তানি পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। এখনো বাংলাদেশে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন আটকে পড়া পাকিস্তানি বাংলাদেশে রয়েছেন।তিনি বলেন, আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও সামনের দিকে অগ্রসর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এ লক্ষে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করি।পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা সার্ক’য়ের আওতায় সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে এর পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছি, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যায়। আমরা ওআইসি ওআইসি সনদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি ।মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় দুই দেশই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে। আমি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করি।তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি। পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং শুল্ক বাধা দূরীকরণ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর আমি গুরুত্বারোপ করি।কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও আলোচনা হয়েছে, যাতে প্রযুক্তি, উন্নত প্রজাতি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বন্যা প্রতিরোধে দু দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, সাম্প্রতি দুদেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালু হয়েছে এবং সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে।বৈঠকের বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ সন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক শিক্ষা বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পাশাপাশি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিক্ষাবিদদের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উভয় পক্ষ থেকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে ১৯৭১ পূর্ববর্তী সময়ের হিস্যা অনুসারে ৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার পাবে। এর একটি বড় অংশ ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পাঠানো হয়েছিল।জানা গেছে, ২০ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তা এসেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকা শাখা থেকে এই অর্থ লাহোর শাখায় সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া পাকিস্তান ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসা সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সঞ্চয়পত্রের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।পরিকল্পনা কমিশনের মতে, সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা ৯০ লাখ টাকা আটকে রেখেছিল পাকিস্তান সরকার। যুদ্ধকালে রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখায় রাখা ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকাও ফেরত আসেনি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থের অর্ধেক ৪৩৫ কোটি রুপির দাবিদার বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ব্যাংকিং বিভাগ থেকেই বাংলাদেশ পাবে প্রায় ৬০ কোটি রুপি।কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে সবশেষ বৈঠক হয়েছিলো শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১০ সালে। এরপর ধীরে ধীরে দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে বাংলাদেশের। ২০১৩ সালে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর উদ্বেগ জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব পাস করেছিলো পাকিস্তান। এ ঘটনায় ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে ডেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো বাংলাদেশ।২০১৪ সালেও এই বিচার নিয়ে পাকিস্তানে সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বক্তব্য নিয়েও ঢাকায় তখনকার পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ হুসাইন দায়োকে তলব করে প্রতিবাদ করেছিলো সরকার। পরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতির পরও ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার সুজা আলমকে তলব করেছিলো বাংলাদেশ সরকার। তবে ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যা নিয়ে সরগরম হয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গন। কিন্তু সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে তখন আর অগ্রগতি হয়নি।এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বড় ইস্যু ছিল একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া এবং আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়ার মতো বিষয়গুলো। তবে এখন এসব বিষয়ের চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে।পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল প্রায় ৭৯ শতাংশ। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মূল্য ছিল ৬ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। মূলত কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিলো বাংলাদেশ। সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে এগোতে পারলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরও কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব, যাতে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার ও তার স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশনসহ ছয়জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক তিনটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন- গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, স্ত্রী শিখা সরকার, তার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সুধীর কুমার সরকার ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন। দুদকের পরিচালক আবুল হাসনাত রাজউকের ছিদ্দিকুরসহ দুজনের ও সহকারি পরিচালক বিলকিস আক্তার উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল ও রিয়াজসহ চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত পৃথক তিনটি আবেদন মঞ্জুর করে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।ছিদ্দিকুর রহমানের আবেদনে বলা হয়, ছিদ্দিকুর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।বিমলের আবেদনে বলা হয়, বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নিজ নামে বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক হিসাব খুলে কর ফাঁকি ও অর্থের উৎস আড়াল করার জন্য লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আরপি কনস্ট্রাকশনের হিসাবে ২০১ কোটি এক লাখ টাকা জমা ও উত্তোলন, নিজ নামীয় ১৩ টি ব্যাংক হিসাবে ৩২ কোটি ১৪ লাখ টাকা জমা, ৩১ কোটি ৭২ লাখ টাকা উত্তোলন এবং বর্তমানে ৪২ লাখ ৮২ হাজার টাকা স্থিতি থাকাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধ করা অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে মানিলন্ডারিং করা অর্থ পুনরুদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়বে। তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা ও আলাপচারিতা বেড়েছে। ভূ-রাজনীতিতে বিশ্ব মোড়লদের কাছে বাংলাদেশের বিশেষ গুরুত্ব এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল। বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।তিনি বলেন, ‘সব রাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বের সম্পর্ক’ রেখে, পারস্পরিক ‘আস্থা ও সহযোগিতার’ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলবে বাংলাদেশ।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিশালী অবস্থান বিদেশিদের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ তৈরি করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত আট মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকার জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে আগমনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিদেশি কূটনীতিকরাও। ফলে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি বা কূটনীতিকদের ঘন ঘন ঢাকায় আগমন ঘটছে।গত বুধবার তিন দিনের সফরে আগামী ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই দিনে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। গত আটমাসে উচ্চপর্যায়ের ২০টিরও বেশি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলের আগমন ঘটেছে বাংলাদেশে। ঢাকায় এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫টির বেশি কূটনৈতিক বৈঠক হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহ জানিয়েছে।কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের মহামারি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ব। এই শুল্ক নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। শুল্কের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পাশাপাশি বিশ্ব ভূ-রাজনীতির হিসেব-নিকেষ কষতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালা-বদল ঘটেছে।ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ক্ষমতাসীন হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই সরকার সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব মোড়লদের বিবাদ ও মতবিরোধে বিপাকে অন্তর্বর্তী সরকার।প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন রয়েই গেছে। এর বিপরিতে গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ইতিবাচক উন্নতি ঘটেছে। পাকিস্তান প্রতিনিধি বা কূটনীতিকদের বাংলাদেশে ঘন ঘন আগমন ঘটছে। এমন সংবাদে নড়েচড়ে বসছে ভারত। নানা ইস্যূ তৈরি করে কূটনীতিক পাঠিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারাও।এদিকে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতবিরোধ প্রায় ৭৬ বছরের পুরনো। ভূ-রাজনীতি ও অর্থনীতিকেন্দ্রিক বিশ্বে বড় দু’টি ব্লক তৈরি করে রেখেছে পরাক্রমশালী এই দু’টি দেশ। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়নের বন্ধু চীন। বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রকেও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই দেশটির।গত বছর ৮ আগস্টের পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জোরালো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে চীন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের চীন সফর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারই অংশ হিসেবে গত বুধবার তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র- এই দু’টি রাষ্ট্রের অঘোষিত ব্লকের অন্তর্ভূক্ত এক দেশের প্রতিনিধিদের আগমন ঘটলে অন্য ব্লকের দেশের প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তাছাড়া সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকদের ঘন ঘন আগমন ঘটছে। গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ের ২০টিরও বেশি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। গত ৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকা সফর করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। তিনি দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তার পাশাপাশি দেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপরও গুরুত্ব দেন। একই মাসে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্গের নেতৃত্বে আসা একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে গুরুত্ব দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য রূপা হক এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে কথা বলে গেছেন। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল অ্যান চুলিক ও তার সফরসঙ্গীরা। তাদের সফরের মূল এজেন্ডা নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করা। প্রতিনিধি দলটি এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচের নেতৃত্বে আসা একটি প্রতিনিধি দলও অবস্থান করছে ঢাকায়।কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা যত এগোবে, বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতাও তত বাড়বে। নির্বাচন কীভাবে হবে, কারা অংশ নেবে কিংবা নির্বাচনের পরে কী হবে- এসব নিয়ে ধারণা নিতে বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়ঝাপ চলছে। তাই সব পক্ষের সঙ্গেই বসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। এর বাইরে বিদেশি মিশনের রাষ্ট্রদূত ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলররা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বসছেন, যেখানে নির্বাচনের রোডম্যাপ, সংস্কার এবং ক্ষমতায় এলে তাদের দেশ পরিচালনার রূপরেখা কেমন হবে-তা নিয়ে কথা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে নানা ইস্যুতে আলোচনা করছেন বিদেশি মিশনের কূটনীতিকরা।জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘যারা আসছে তারা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন চাইবে। অনেকেই দেশে আসছেন, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন; কিন্তু বিনিয়োগ করছেন না। কারণ, নির্বাচন না হলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। ব্যবসায়ীরা তাদের মূলধন নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না।’তিনি বলেন, ‘এই সরকারের সময়ে এর আগে যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সফরে এসেছেন, তারা ছিলেন ডেমোক্র্যাট। এই প্রথম দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা এসেছেন তারা ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান। ডেমোক্র্যাটরা থাকলে একটু ফ্লেক্সিবল সিচুয়েশন হতেও পারত, কারণ ডেমোক্র্যাটদের অনেকের সঙ্গেই প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তবে রিপাবলিকানদের বেলায় একটু ভিন্ন। রিপাবলিকানরা এখন নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এখন সংখ্যালঘু ইস্যুতেও কথা বলবে। আমেরিকা জানতে চাইবে সংখ্যালঘু ইস্যুতে কী করা হচ্ছে। যতক্ষণ দেশে নির্বাচনের রোডম্যাপ না আসবে, ততদিন বিদেশিরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেই।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
দেশের আট জেলার ওপর দিয়ে আজ দুপুর ১টার মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোরে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেয়া সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।এতে বলা হয়, ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়ার ওপর দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন সকাল ৮ টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং খুলনা বিভাগের উত্তর দিকের জেলাগুলো (কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর) ওপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাতসহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টিপাত অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। এই জেলাগুলোর কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের দুপুর ১২টার মধ্যে খোলা মাঠে কাজ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান এই গবেষক।এছাড়া নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদেরও দুপুর ১২টার মধ্যে খোলা মাঠে কাজ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্বে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ বশিরউদ্দীনের দায়িত্ব আরও বেড়েছে। এখন থেকে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করবেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা সচিব জাহেদা পারভীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিম্নরূপভাবে উপদেষ্টাদের মধ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন/পুনর্বণ্টন করেছেন। সে অনুযায়ী বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন শেখ বশিরউদ্দীন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
বাংলাদেশে দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেছেন সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার একের পর এক বৈঠক করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এর আগে দিনের বেলা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন আমনা বালুচ।এদিকে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ সাক্ষাৎ করেন। এ সময় এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এসব কাটিয়ে ওঠার উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে।ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সার্কের কাঠামোয় পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তিনি সবসময়ই পছন্দ করেন।তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে বন্ধন বাড়াতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উচিত দুই দেশের মধ্যে আরও বেশি যুব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিনিময় করা। আমাদের সম্পর্ক হিমশীতল হয়ে যাওয়ায় আমরা দীর্ঘদিন একে অপরকে মিস করছিলাম। আমাদের প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রম করতে হবে।প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে কায়রোতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সার্ক, ওআইসি ও ডি-৮ এর মতো বহুপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ফোরামে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে।এ সময় অতীতের বিষয়গুলো স্বীকার করে আমনা বালুচ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে।তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজেদের আয়ত্তে বিশাল আন্ত-বাজার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের এটি ব্যবহার করা উচিত। আমরা প্রতিবার ‘বাস মিস’ করতে পারি না। দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে নিয়মিত পারস্পারিক যোগাযোগ এবং সব পর্যায়ে দুদেশের মধ্যে সফর আয়োজনের প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন পাকিস্তানি এই আমলা।পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আশা প্রকাশ করেন, এপ্রিলের শেষ দিকে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের আসন্ন সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফপিসিসিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে : পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিববাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা জানান। বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ তার দেশের নেতৃত্ব দেন। এর আগে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।বৈঠক শেষে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন বলেন, বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ অমীমাংসিত বিষয় উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর এবং ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হিস্যা ৪.৩২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ১৯৭০ সালের নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে বিদেশ থেকে আসা ২০০ মিলিয়ন সমপরিমাণ ডলারের হস্তান্তরের আহ্বান জানানো হয়েছে।অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ আটকেপড়া পাকিস্তানি পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। এখনো বাংলাদেশে ৩ লাখ ২৪ হাজার ১৪৭ জন আটকে পড়া পাকিস্তানি বাংলাদেশে রয়েছেন।তিনি বলেন, আমরা বলেছি, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির মাধ্যমে একটি মজবুত, কল্যাণমুখী ও সামনের দিকে অগ্রসর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করি এবং এ লক্ষে আমরা একযোগে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করি।পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা সার্ক’য়ের আওতায় সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে এর পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছি, যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া যায়। আমরা ওআইসি ওআইসি সনদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি ।মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় দুই দেশই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে। আমি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের সমর্থন কামনা করি।তিনি আরও বলেন, বৈঠকে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছি। পাকিস্তানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং শুল্ক বাধা দূরীকরণ ও বাংলাদেশে পাকিস্তানের বিনিয়োগ বৃদ্ধিকরণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর আমি গুরুত্বারোপ করি।কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্যও আলোচনা হয়েছে, যাতে প্রযুক্তি, উন্নত প্রজাতি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বন্যা প্রতিরোধে দু দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, সাম্প্রতি দুদেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং রুট চালু হয়েছে এবং সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করার মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিও আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরই দুদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু সম্ভব হবে।বৈঠকের বিষয়ে সচিব বলেন, আমরা উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সুযোগ সন্ধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি এবং এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক শিক্ষা বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। পাশাপাশি, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার কথাও আলোচনায় এসেছে। দুই দেশের শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিক্ষাবিদদের সফরের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উভয় পক্ষ থেকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে ১৯৭১ পূর্ববর্তী সময়ের হিস্যা অনুসারে ৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার পাবে। এর একটি বড় অংশ ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পাঠানো হয়েছিল।জানা গেছে, ২০ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তা এসেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকা শাখা থেকে এই অর্থ লাহোর শাখায় সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া পাকিস্তান ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসা সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সঞ্চয়পত্রের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।পরিকল্পনা কমিশনের মতে, সরকারি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা ৯০ লাখ টাকা আটকে রেখেছিল পাকিস্তান সরকার। যুদ্ধকালে রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখায় রাখা ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকাও ফেরত আসেনি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থের অর্ধেক ৪৩৫ কোটি রুপির দাবিদার বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ব্যাংকিং বিভাগ থেকেই বাংলাদেশ পাবে প্রায় ৬০ কোটি রুপি।কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে সবশেষ বৈঠক হয়েছিলো শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০১০ সালে। এরপর ধীরে ধীরে দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যুকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে বাংলাদেশের। ২০১৩ সালে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর উদ্বেগ জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব পাস করেছিলো পাকিস্তান। এ ঘটনায় ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে ডেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো বাংলাদেশ।২০১৪ সালেও এই বিচার নিয়ে পাকিস্তানে সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বক্তব্য নিয়েও ঢাকায় তখনকার পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ হুসাইন দায়োকে তলব করে প্রতিবাদ করেছিলো সরকার। পরে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতির পরও ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার সুজা আলমকে তলব করেছিলো বাংলাদেশ সরকার। তবে ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যা নিয়ে সরগরম হয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গন। কিন্তু সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে তখন আর অগ্রগতি হয়নি।এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে বড় ইস্যু ছিল একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া এবং আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়ার মতো বিষয়গুলো। তবে এখন এসব বিষয়ের চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে।পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল সুতা-কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল প্রায় ৭৯ শতাংশ। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার মূল্য ছিল ৬ কোটি ডলারের সামান্য বেশি। মূলত কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছিলো বাংলাদেশ। সম্পর্ক স্বাভাবিক গতিতে এগোতে পারলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য আরও কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব, যাতে উভয় দেশই লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার ও তার স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশনসহ ছয়জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক তিনটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন- গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, স্ত্রী শিখা সরকার, তার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সুধীর কুমার সরকার ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন। দুদকের পরিচালক আবুল হাসনাত রাজউকের ছিদ্দিকুরসহ দুজনের ও সহকারি পরিচালক বিলকিস আক্তার উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল ও রিয়াজসহ চারজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত পৃথক তিনটি আবেদন মঞ্জুর করে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।ছিদ্দিকুর রহমানের আবেদনে বলা হয়, ছিদ্দিকুর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশ গমন রহিত করা প্রয়োজন।বিমলের আবেদনে বলা হয়, বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নিজ নামে বিভিন্ন ব্যাংকে একাধিক হিসাব খুলে কর ফাঁকি ও অর্থের উৎস আড়াল করার জন্য লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আরপি কনস্ট্রাকশনের হিসাবে ২০১ কোটি এক লাখ টাকা জমা ও উত্তোলন, নিজ নামীয় ১৩ টি ব্যাংক হিসাবে ৩২ কোটি ১৪ লাখ টাকা জমা, ৩১ কোটি ৭২ লাখ টাকা উত্তোলন এবং বর্তমানে ৪২ লাখ ৮২ হাজার টাকা স্থিতি থাকাসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধ করা অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে মানিলন্ডারিং করা অর্থ পুনরুদ্ধার করা দুরূহ হয়ে পড়বে। তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা ও আলাপচারিতা বেড়েছে। ভূ-রাজনীতিতে বিশ্ব মোড়লদের কাছে বাংলাদেশের বিশেষ গুরুত্ব এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল। বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।তিনি বলেন, ‘সব রাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বের সম্পর্ক’ রেখে, পারস্পরিক ‘আস্থা ও সহযোগিতার’ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলবে বাংলাদেশ।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিশালী অবস্থান বিদেশিদের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ তৈরি করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত আট মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকার জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে আগমনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিদেশি কূটনীতিকরাও। ফলে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি বা কূটনীতিকদের ঘন ঘন ঢাকায় আগমন ঘটছে।গত বুধবার তিন দিনের সফরে আগামী ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই দিনে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। গত আটমাসে উচ্চপর্যায়ের ২০টিরও বেশি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলের আগমন ঘটেছে বাংলাদেশে। ঢাকায় এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫টির বেশি কূটনৈতিক বৈঠক হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহ জানিয়েছে।কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের মহামারি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ব। এই শুল্ক নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। শুল্কের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পাশাপাশি বিশ্ব ভূ-রাজনীতির হিসেব-নিকেষ কষতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালা-বদল ঘটেছে।ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ক্ষমতাসীন হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই সরকার সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব মোড়লদের বিবাদ ও মতবিরোধে বিপাকে অন্তর্বর্তী সরকার।প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন রয়েই গেছে। এর বিপরিতে গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ইতিবাচক উন্নতি ঘটেছে। পাকিস্তান প্রতিনিধি বা কূটনীতিকদের বাংলাদেশে ঘন ঘন আগমন ঘটছে। এমন সংবাদে নড়েচড়ে বসছে ভারত। নানা ইস্যূ তৈরি করে কূটনীতিক পাঠিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারাও।এদিকে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতবিরোধ প্রায় ৭৬ বছরের পুরনো। ভূ-রাজনীতি ও অর্থনীতিকেন্দ্রিক বিশ্বে বড় দু’টি ব্লক তৈরি করে রেখেছে পরাক্রমশালী এই দু’টি দেশ। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়নের বন্ধু চীন। বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রকেও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই দেশটির।গত বছর ৮ আগস্টের পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জোরালো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে চীন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের চীন সফর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারই অংশ হিসেবে গত বুধবার তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র- এই দু’টি রাষ্ট্রের অঘোষিত ব্লকের অন্তর্ভূক্ত এক দেশের প্রতিনিধিদের আগমন ঘটলে অন্য ব্লকের দেশের প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তাছাড়া সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকদের ঘন ঘন আগমন ঘটছে। গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ের ২০টিরও বেশি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। গত ৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকা সফর করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। তিনি দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তার পাশাপাশি দেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপরও গুরুত্ব দেন। একই মাসে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্গের নেতৃত্বে আসা একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে গুরুত্ব দেয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য রূপা হক এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে কথা বলে গেছেন। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল অ্যান চুলিক ও তার সফরসঙ্গীরা। তাদের সফরের মূল এজেন্ডা নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করা। প্রতিনিধি দলটি এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচের নেতৃত্বে আসা একটি প্রতিনিধি দলও অবস্থান করছে ঢাকায়।কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা যত এগোবে, বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতাও তত বাড়বে। নির্বাচন কীভাবে হবে, কারা অংশ নেবে কিংবা নির্বাচনের পরে কী হবে- এসব নিয়ে ধারণা নিতে বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়ঝাপ চলছে। তাই সব পক্ষের সঙ্গেই বসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। এর বাইরে বিদেশি মিশনের রাষ্ট্রদূত ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলররা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বসছেন, যেখানে নির্বাচনের রোডম্যাপ, সংস্কার এবং ক্ষমতায় এলে তাদের দেশ পরিচালনার রূপরেখা কেমন হবে-তা নিয়ে কথা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে নানা ইস্যুতে আলোচনা করছেন বিদেশি মিশনের কূটনীতিকরা।জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘যারা আসছে তারা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন চাইবে। অনেকেই দেশে আসছেন, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন; কিন্তু বিনিয়োগ করছেন না। কারণ, নির্বাচন না হলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। ব্যবসায়ীরা তাদের মূলধন নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না।’তিনি বলেন, ‘এই সরকারের সময়ে এর আগে যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সফরে এসেছেন, তারা ছিলেন ডেমোক্র্যাট। এই প্রথম দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা এসেছেন তারা ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান। ডেমোক্র্যাটরা থাকলে একটু ফ্লেক্সিবল সিচুয়েশন হতেও পারত, কারণ ডেমোক্র্যাটদের অনেকের সঙ্গেই প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তবে রিপাবলিকানদের বেলায় একটু ভিন্ন। রিপাবলিকানরা এখন নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এখন সংখ্যালঘু ইস্যুতেও কথা বলবে। আমেরিকা জানতে চাইবে সংখ্যালঘু ইস্যুতে কী করা হচ্ছে। যতক্ষণ দেশে নির্বাচনের রোডম্যাপ না আসবে, ততদিন বিদেশিরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেই।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
দেশের আট জেলার ওপর দিয়ে আজ দুপুর ১টার মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ভোরে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেয়া সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।এতে বলা হয়, ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়ার ওপর দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন সকাল ৮ টার পর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং খুলনা বিভাগের উত্তর দিকের জেলাগুলো (কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর) ওপর দিয়ে তীব্র বজ্রপাতসহ মাঝারি থেকে ভারি মানের বৃষ্টিপাত অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। এই জেলাগুলোর কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের দুপুর ১২টার মধ্যে খোলা মাঠে কাজ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান এই গবেষক।এছাড়া নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদেরও দুপুর ১২টার মধ্যে খোলা মাঠে কাজ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।ভোরের আকাশ/এসএইচ
মন্তব্য করুন