ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫ ১২:৫৫ এএম
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন এমপিরা : সালাহউদ্দিন
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে উভয়পক্ষের এমপিরা স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন—এমন প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমরা যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, তাতে সব দল একমত হয়েছে। আমরা আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছি—রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে উভয়পক্ষের এমপিরা স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। এটা হবে একটি বিপ্লব। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছি, এটাও বড় ধরনের অর্জন। আমরা যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে আইনগত ও সাংবিধানিকভাবে সীমাবদ্ধ করি, তাহলে নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে। এজন্য আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি। স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এই ব্যবস্থায় একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করলে স্বৈরাচারের উৎপত্তি রোধ করা সম্ভব।”
তিনি বলেন, “নির্বাহী বিভাগকে খর্ব করার মাধ্যমে নয়, বরং একে তার নিজস্ব দায়িত্ব পালনে সক্ষম করতে হবে। বিচার বিভাগ ও আইনসভাকেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে।”
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে, যাতে তারা নিজ নিজ এখতিয়ার অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তখন আর এই দেশে স্বৈরাচারের পুনঃউত্থান ঘটবে না।”
সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা কেউ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, কেউ অকল্যাণমূলক রাষ্ট্র চান—এমন যেন না হয়। আমাদের সবাইকে একটি সাধারণ আদর্শে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তা হলো জনগণের মুক্তি, বৈষম্যহীন, সাম্যভিত্তিক ও মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন সমাজব্যবস্থা গঠন। শুধু ভাষণে নয়, বাস্তব কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সংস্কার নিয়ে অনেক কথা বলছি, কিন্তু কেউ হতাশা প্রকাশ করছেন না। কারণ, আমরা আশাবাদী মানুষ। আলোচনা চলছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এক জায়গায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। আমরা বলেছি—বাংলাদেশে কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রিত্ব করতে পারবে না। এভাবেই স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়া সম্ভব।”
আলোচনায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য এখনই দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনকে দাপটমুক্ত করতে হলে ধর্মের অপব্যবহার, প্রশাসনের দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে।”
তিনি জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির উদ্দেশে বলেন, “তাদের উদ্দেশ্য কী, সেটা স্পষ্ট নয়। গত ১৬ বছর দেশের জনগণ ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন করেছে। কেউ স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়নি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে গেলে এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে। এসব খেলা বন্ধ করতে হবে। দড়ি নিয়ে বেশি টানাটানি করবেন না, কারণ দড়ি ছিঁড়ে যেতে পারে।”
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
উপস্থিত ছিলেন ১২ দলীয় জোটপ্রধান ও জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/হ.র