ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি
এম. সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১২:২৭ পিএম
সরব বিএনপি নীরব অন্যরা
আগামী জাতীয় সংসদ (ত্রয়োদশ) নির্বাচন আদায়ের দাবিতে এবার রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন আদায় ও রোডম্যাপের দাবিতে একগুচ্ছ কর্মসূচির কথাও ভাবছে দলটি। কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা থেকেই দলটি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদের মতামত নেওয়ার কাজটিও করছে। তবে দ্রুত নির্বাচনের দাবির ব্যাপারে জামায়াত ইসলামী, এনসিপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এখনো নীরবতা পালন করছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন- দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র তথা মানুষের ভোটাধিকারে বিশ^াসী একটি দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচন চাইছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বললেও সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করছে না। তাই বিএনপি নির্বাচন ও রোডম্যাপ ঘোষণায় যা কিছুর করার দরকার তা করবে। অবশ্য জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনের ব্যাপারে কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছেন।
জানা গেছে, গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। হাসিনা সরকারের পতনকে নিজেদের দীর্ঘ আন্দোলনের একটি পরিণতি বা সমাপ্তির অধ্যায় বলে মনে করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন তাদের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের শেষটা নামিয়েছে ছাত্র-জনতা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও গণতান্ত্রিক লড়াই শেষ হয়নি বলে মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুততম সময়ে মৌলিক সংস্কারের পর একটি নির্বাচনে দেবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে সেটিই হবে গণতান্ত্রিক সরকার। যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সুফল পাবেন দেশের মানুষ।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন- বিএনপি সংস্কার চায়। পাশাপাশি নির্বাচনও চায়। কারণ, প্রকৃত অর্থে একটি সংস্কার করতে হলে অবশ্যই নির্বাচিত সংসদের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচিত সংসদ না হলে অনেক কিছুই সংস্কার করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের লক্ষ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য এতদিন ধরে আমরা সরকারের কাছে যে আহ্বান জানিয়ে আসছেন, ঈদের পর তা আরেকবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো। তিনি কী পদক্ষেপ নেন এবং কী ঘোষণা দেন তার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করব আমরা। এর পরও প্রত্যাশিত ঘোষণা না এলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরব। তারপরও কাজ না হলে আমরা কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে কাছে যাবো।
এদিকে, জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেছেন, জামায়াত নির্বাচনের ব্যাপারে নীরব-একথা সত্য নয়। জামায়াত অবশ্যই ভোট চায়। তবে, যে আকাক্সক্ষায় হাজারো জীবনদানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে সেটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থ্যাৎ নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জন আকাক্সক্ষার সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচারও গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম-সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিবির বলেন, আমরা আসলে নির্বাচন নিয়ে নীরব না। আমরা সংবিধান পরিবর্তনে গণপরিষদ নির্বাচন চেয়ে শীর্ঘ্রই কর্মসূচিতে যাবো। গণপরিষদ নির্বাচন আগে অথবা সংসদ নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন একসঙ্গে চায় এনসিপি।
বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন- গণতন্ত্রের জন্যেই বিএনপিসহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক প্রায় দেড় দশক ধরে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর এখন একটি নির্বাচিত সরকার সবার চাওয়া। কারণ, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের কাছে প্রকৃত দায়বদ্ধতা থাকে না। দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন বিএনপি নেতারা। এছাড়াও একটি পক্ষ নির্বাচন পেছানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত বলেও দলটির অভিযোগ।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন- শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ৭ মাস পূর্ণ হতে চললেও সরকার সংস্কার কাজ নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। সরকার বারবার বলার চেষ্টা করছে, ন্যূনতম সংস্কার ছাড়া এখনই ভোট দিলে ফের আরেক স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিতে পারে। এমন বক্তব্যের পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্র নেতাদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনও ভালোভাবে নেয়নি বিএনপি। কারণ, শুরুতেই এসব ছাত্র নেতারা নির্বাচনকে অগ্রাহ্য করে সংস্কারকে জোর দিয়েছেন।
এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনি ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াত প্রকাশ্যে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। দলটি নির্বাচনের কথা বললেও সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারকে কাজকে বেশি প্রধান্য দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলনে মাঝে মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হলেও তা বড় ধরণের কোন প্রভাব পড়েনি দল দুটির সম্পর্ক বা জাতীয় কোন ইস্যুতে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে। তবে, এবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কয়েকটি বিষয় নিয়ে দল দুটিতে টানাপোড়নের সৃষ্টি হয়। নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দল দুটির মধ্যে অনৈক্য দেখা দিতে থাকে।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে- এবারের রমজানে বিএনপির বেশিরভাগ ইফতার পার্টিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা ন্যূনতম সংস্কার শেষে একটি জাতীয় নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নির্বাচনি রোডম্যাপ আদায়ে প্রয়োজনে কর্মসূচির ঘোষণার কথাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন তারা। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে ঐকমত্য গঠনে কাজ শুরু করেছেন। ঈদের আগে থেকেই মিত্রদের সঙ্গে দলটি কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন। শনিবার রাতে দলটির চেযারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তারা নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এছাড়া গত ৩০ মার্চ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রয়োজনে নির্বাচন আদায়ে একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি যেকোনো কর্মসূচি পালন করবে।
জানা গেছে-গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পাশে থাকা সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কথা বলবে বিএনপি। এসব দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার পর দলটির নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি দেখা করে কথা বলবে। তারপর মনোভাব বুঝে পরবর্তীতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে যেতে চায় বিএনপি।
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, কিছুদিনের মধ্যে সরকার সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে অতীতের মতো সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামব। নির্বাচন ছাড়া এভাবে দেশ চলতে পারে না। নির্বাচন না হলে দেশে আরো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন- নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশ সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব নয়। সংস্কার যেমন দরকার তেমনি নির্বাচনও দরকার। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি সঠিক পথেই আছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি
এম. সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ২ দিন আগে
আপডেট : ২ দিন আগে
সরব বিএনপি নীরব অন্যরা
আগামী জাতীয় সংসদ (ত্রয়োদশ) নির্বাচন আদায়ের দাবিতে এবার রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। নির্বাচন আদায় ও রোডম্যাপের দাবিতে একগুচ্ছ কর্মসূচির কথাও ভাবছে দলটি। কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা থেকেই দলটি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদের মতামত নেওয়ার কাজটিও করছে। তবে দ্রুত নির্বাচনের দাবির ব্যাপারে জামায়াত ইসলামী, এনসিপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এখনো নীরবতা পালন করছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন- দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র তথা মানুষের ভোটাধিকারে বিশ^াসী একটি দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচন চাইছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বললেও সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করছে না। তাই বিএনপি নির্বাচন ও রোডম্যাপ ঘোষণায় যা কিছুর করার দরকার তা করবে। অবশ্য জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচনের ব্যাপারে কৌশলী বক্তব্য দিচ্ছেন।
জানা গেছে, গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। হাসিনা সরকারের পতনকে নিজেদের দীর্ঘ আন্দোলনের একটি পরিণতি বা সমাপ্তির অধ্যায় বলে মনে করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন তাদের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের শেষটা নামিয়েছে ছাত্র-জনতা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও গণতান্ত্রিক লড়াই শেষ হয়নি বলে মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুততম সময়ে মৌলিক সংস্কারের পর একটি নির্বাচনে দেবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে সেটিই হবে গণতান্ত্রিক সরকার। যার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সুফল পাবেন দেশের মানুষ।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন- বিএনপি সংস্কার চায়। পাশাপাশি নির্বাচনও চায়। কারণ, প্রকৃত অর্থে একটি সংস্কার করতে হলে অবশ্যই নির্বাচিত সংসদের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচিত সংসদ না হলে অনেক কিছুই সংস্কার করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের লক্ষ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য এতদিন ধরে আমরা সরকারের কাছে যে আহ্বান জানিয়ে আসছেন, ঈদের পর তা আরেকবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো। তিনি কী পদক্ষেপ নেন এবং কী ঘোষণা দেন তার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করব আমরা। এর পরও প্রত্যাশিত ঘোষণা না এলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরব। তারপরও কাজ না হলে আমরা কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে কাছে যাবো।
এদিকে, জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেছেন, জামায়াত নির্বাচনের ব্যাপারে নীরব-একথা সত্য নয়। জামায়াত অবশ্যই ভোট চায়। তবে, যে আকাক্সক্ষায় হাজারো জীবনদানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে সেটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থ্যাৎ নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জন আকাক্সক্ষার সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচারও গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুগ্ম-সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিবির বলেন, আমরা আসলে নির্বাচন নিয়ে নীরব না। আমরা সংবিধান পরিবর্তনে গণপরিষদ নির্বাচন চেয়ে শীর্ঘ্রই কর্মসূচিতে যাবো। গণপরিষদ নির্বাচন আগে অথবা সংসদ নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন একসঙ্গে চায় এনসিপি।
বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন- গণতন্ত্রের জন্যেই বিএনপিসহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক প্রায় দেড় দশক ধরে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর এখন একটি নির্বাচিত সরকার সবার চাওয়া। কারণ, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের কাছে প্রকৃত দায়বদ্ধতা থাকে না। দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করছেন বিএনপি নেতারা। এছাড়াও একটি পক্ষ নির্বাচন পেছানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত বলেও দলটির অভিযোগ।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন- শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ৭ মাস পূর্ণ হতে চললেও সরকার সংস্কার কাজ নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। সরকার বারবার বলার চেষ্টা করছে, ন্যূনতম সংস্কার ছাড়া এখনই ভোট দিলে ফের আরেক স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিতে পারে। এমন বক্তব্যের পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্র নেতাদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনও ভালোভাবে নেয়নি বিএনপি। কারণ, শুরুতেই এসব ছাত্র নেতারা নির্বাচনকে অগ্রাহ্য করে সংস্কারকে জোর দিয়েছেন।
এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনি ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াত প্রকাশ্যে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। দলটি নির্বাচনের কথা বললেও সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারকে কাজকে বেশি প্রধান্য দিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে আন্দোলনে মাঝে মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হলেও তা বড় ধরণের কোন প্রভাব পড়েনি দল দুটির সম্পর্ক বা জাতীয় কোন ইস্যুতে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে। তবে, এবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কয়েকটি বিষয় নিয়ে দল দুটিতে টানাপোড়নের সৃষ্টি হয়। নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দল দুটির মধ্যে অনৈক্য দেখা দিতে থাকে।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে- এবারের রমজানে বিএনপির বেশিরভাগ ইফতার পার্টিতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির শীর্ষ নেতারা ন্যূনতম সংস্কার শেষে একটি জাতীয় নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নির্বাচনি রোডম্যাপ আদায়ে প্রয়োজনে কর্মসূচির ঘোষণার কথাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন তারা। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে ঐকমত্য গঠনে কাজ শুরু করেছেন। ঈদের আগে থেকেই মিত্রদের সঙ্গে দলটি কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন। শনিবার রাতে দলটির চেযারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তারা নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এছাড়া গত ৩০ মার্চ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রয়োজনে নির্বাচন আদায়ে একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি যেকোনো কর্মসূচি পালন করবে।
জানা গেছে-গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পাশে থাকা সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কথা বলবে বিএনপি। এসব দলের নেতাদের মতামত নেওয়ার পর দলটির নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি দেখা করে কথা বলবে। তারপর মনোভাব বুঝে পরবর্তীতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে যেতে চায় বিএনপি।
বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, কিছুদিনের মধ্যে সরকার সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে অতীতের মতো সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামব। নির্বাচন ছাড়া এভাবে দেশ চলতে পারে না। নির্বাচন না হলে দেশে আরো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন- নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশ সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব নয়। সংস্কার যেমন দরকার তেমনি নির্বাচনও দরকার। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি সঠিক পথেই আছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ