× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আওয়ামী লীগ ইস্যুতে রাজনীতিতে বিভক্তি

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৫ ০১:৩৬ পিএম

আওয়ামী লীগ ইস্যুতে রাজনীতিতে বিভক্তি

আওয়ামী লীগ ইস্যুতে রাজনীতিতে বিভক্তি

ছাই চাপা আগুনের মতো রাজনীতিতে হঠাৎ উত্তাপ সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি। গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট দলটির ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিরোধী যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, তাতেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার পর আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছিল। তবে মাঝে সেই দাবি অনেকটা হারিয়ে যায়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেইÑ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যের পর রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গতকাল শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন দলটি নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। দলটিকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন নবগঠিত ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আওয়ামী লীগকে লাশের উপর দিয়ে আসতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’র আমির মাওলানা মামুনুল হক। আরও কয়েকটি সংগঠন একই ধরনের কথা বলছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ মঞ্চও গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি দলটিকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, লুটপাটে জড়িত নয় এমন সৎ ব্যক্তির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে বাধা নেই। এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তখন তিনি বলেছেন, ‘কাল বিএনপিকে নিষিদ্ধ করলে তখন কী করবেন?’ এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, তার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। 
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে দলটির যেসব নেতার বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রেসিডেন্ট ও সিইও কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বে আসা একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে ২০২৪ সালের গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন দিন পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস প্রতিনিধি দলকে বলেন, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং কোনো দাবির মুখে ভোট স্থগিত করা হবে না। তিনি বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো সীমিত সংস্কারের দাবি জানায়; তবে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে। যদি বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
ওই আন্দোলনের মধ্যে কয়েকশ মানুষের প্রাণ যায়, সেসব ঘটনায় হামলার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করে তার সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হচ্ছে। জুলাইয়ের সেসব নিহতের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করারও উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অপরদিকে আন্দোলন দমনে ভূমিকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনেকে এখন ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতারাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে গত ১৯ আগস্ট হাই কোর্টে রিট আবেদনও হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে ফেরাতে চাইলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনোও পরিকল্পনা নেইÑ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চাইলে এ দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। পরে মিছিলটি হল পাড়া-প্রশাসনিক ভবন-ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় তারা- আওয়ামী লীগের বিচার চাই, আওয়ামী লীগের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে, একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর; ইউনূস সাহেবের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, গণহত্যার বিচার চাই, অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে, নিষিদ্ধ করতে হবে; আওয়ামী লীগের বিষদাঁত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও; শহীদেরা দিচ্ছে ডাক, আওয়ামী লীগ নিপাত যাকসহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ইনকিলাব মঞ্চের মিছিলে, খুনি লীগের পুনর্বাসন, রুখে দাও জনগণ; জুলাইয়ের বাংলায়, গণহত্যাকারীদের ঠাঁই নাই, লেখা সম্বলিত প্লেকার্ডও দেখা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে বাংলাদেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। দুই হাজারের অধিক শহীদ এবং হাজার হাজার আহতের রক্তের শপথ, আমাদের দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেব না। তিনি বলেন, এবার লীগকে সুযোগ দেওয়া হলে তারা অল্প কয়টা আসন নিয়ে বিরোধী দলে থেকে যাবে। আর তারা বিরোধী দলে থেকে কূটচাল চালবে। তাদের কারণে বিএনপি ৩ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ-ভারত আর ইসরায়েলকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে লাথি দিয়ে ক্ষমতা থেকে বের করে দেবে। তারপর দেশে আবার নারকীয় তাণ্ডব চালাবে। আহতদের কচুকাটা করবে। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে আমরা রাস্তা ছাড়বো না।
মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার রাত পোনে ২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ঢাবির হল পাড়া থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। 
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়ি না’, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করো, করতে হবে’, সারা বাংলায় খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘আওয়ামী লীগের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাইয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যারা গণহত্যার করেছিল এবং মদদ দিয়েছিল সেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে দেখিনি। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
ঢাবি শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, যে বাংলায় আবু সাইদ প্রাণ দিয়েছে, ওয়াসিম প্রাণ দিয়েছে সে বাংলায় আওয়ামী লীগ থাকতে পারবে না। আন্দোলনে ২ হাজারের অধিক মানুষ প্রাণ দিয়েছে, হাজার হাজার আহতরা এখনো অনেকে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যদি এই সরকার বলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারবে না এর থেকে বড় লজ্জা হতে পারে না। যে বাংলায় আওয়ামী লীগ গণহত্যা করেছে সেখানে তারা থাকতে পারবে না। আমরা তাদের মেনে নেব না।
ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, এখন ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণ দিয়ে দিয়েছে। এদেশে আওয়ামী লীগ থাকবে, নাহলে ছাত্রসমাজ থাকবে। শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত এদেশে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ পুনর্বাসনে সেনানিবাস থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে সেনা প্রশাসন ‘চাপ দিচ্ছে’ বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় তিনিসহ তিনজনের কাছে সেনানিবাস থেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে’ রাজনীতিতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে ৪০ বছরের বেশি সেনাবাহিনীতে কর্মরত এমন একজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের মতবিরোধ ও বচসা হওয়ার কথা তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ না করেই তাদের চলে আসতে হয়েছে।
হাসনাত তার পোস্টে লিখেছেন, আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়Ñ ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছেÑ তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।
হাসনাত লিখেছেন, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। আমাদেরকে আরো বলা হয়, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবেÑ এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। ফেসবুক পোস্টে হাসনাত বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের ‘ভারতীয় পরিকল্পনা’ প্রতিরোধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সেনা কর্মকর্তাদের এমন প্রস্তাবের বিরোধিতার কারণে বৈঠকে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের বচসা হয় বলে ফেসবুকে পোস্টে দাবি করেছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি লিখেছেন, আমাদেরকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন। এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’। আলোচনার এক পর্যায় বলি- যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর অ্যাটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না’। উত্তরে বলি, আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। পরে মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়। সমর্থকদের উদ্দেশে পোস্টের শেষ দিকে হাসনাত লেখেন, আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের উপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোন ধরনের আপস করার সুযোগ নাই। আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দিব না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনো সুযোগ নাই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটিকে নিষিদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়। 
নিষিদ্ধ চায় না বিএনপি: হত্যা-লুটপাটে জড়িত নয়, এমন কারও নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বাধা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু বিচার নিয়ে কথা হচ্ছে না। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচারের পর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর জনগণ ক্ষমা করলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। গতকাল রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে ফায়দাবাদ মধ্যপাড়া হাজী শুকুর আলী মাদরাসা সংলগ্ন মাঠে দুস্থদের মধ্যে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। জুলাই আন্দোলনে যারা গণহত্যায় জড়িত তাদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা অপরাধী তাদের বিচার নিশ্চিত হওয়ার পর যারা হত্যা-লুটপাটে জড়িত নয়, তাদের যদি জনগণ রাজনীতি করার সুযোগ দেয় আমাদের কিছু বলার নেই।’  যারা ছাত্র হত্যা করেনি, যারা অর্থ লোপাট করেনি, এমন সৎ ব্যক্তি নেতৃত্বে এলে আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে নাÑ প্রশ্ন করেন রিজভী। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হতেই হবে। আর কোনও ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান রিজভী।
রুখে দেওয়ার ঘোষণা: আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে ছাত্র-জনতা তাদের রুখে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর আহমেদ আলী কাসেমী। গতকাল বায়তুল মোকাররমের সামনে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গাজাবাসী যখন সেহেরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা করা হয়। আমরা জানতে পেরেছি সে হামলায় ৪০০ নারী পুরুষ নিহত হয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগকে দেশের রাজনীতিতে আসতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে আসতে হবে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে আমরা জাতিসংঘের কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানাচ্ছি। মুসলিম রাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠনগুলোকে বলতে চাই, ফিলিস্তিন রক্ষায় আপনারা উদাত্তভাবে এগিয়ে আসুন। তাদের সাহায্য করতে আমাদের দেশ থেকে মুজাহিদের দল গঠন করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না। জনগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গণহত্যার বিচার দেখতে চায়। গতকাল সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির লিখেছেন, বাংলাদেশ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক অতিক্রম করছে। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের পর ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই একটি নতুন বাংলাদেশ মহান আল্লাহর মেহেরবানিতে উপহার হিসেবে পেয়েছে জাতি। এ জন্য মহান রবের দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।
এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য পতিত ফ্যাসিবাদীরা দেশের ভেতরে-বাইরে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান।
আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার ‘প্রকল্প’ রুখে দেওয়া হবে: আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার যে কোনও প্রকল্প রক্তের বিনিময়ে রুখে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)। গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে এনডিএম এর অবস্থান নিয়ে এসব কথা জানায় দলটি। এতে বলা হয়, ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর নতুনভাবে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করে এনডিএম। একইসঙ্গে আমরা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বিচারও চেয়েছি। দুঃখজনক হলেও সত্য, নতুন খসড়া আইনে এই ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সংগঠনের বিচার করার এখতিয়ার দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ:  আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত এই প্লাটফর্মের কর্মসূচি চলবে। গতকাল বিকেল সোয়া ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই প্লাটফর্মের ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জোবায়ের। 
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ দেরি হলে জুলাইয়ের পুনরাবৃত্তি: আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানো হলে ‘লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণায় যদি বিলম্ব করা হয়, তাহলে আবারও জুলাইয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে বাংলাদেশে। ৫ আগস্টে লাখো ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না। প্রিয় সহযোদ্ধা, আবারও দেখা হবে রাজপথে। আমাদের এ যাত্রা কঠিন হবে। আমরা লড়ে যাব আমৃত্যু। গতকাল দুপুরে বন্দর নগরীর নিউ মার্কেট চত্বরে সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন।
আ.লীগ নিষিদ্ধ চায় না জাপা: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোকÑ এমন দাবির সঙ্গে জাতীয় পার্টি একমত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। গতকাল বিকেলে রংপুর নগরীর সেনপাড়ার দ্য স্কাই ভিউ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল। সেই দলের মধ্যে যারা বাস করছে, তারা খারাপ হতে পারে। অন্যভাবে বলা যায়, আওয়ামী লীগ একটি গাড়ি, তার ড্রাইভার খারাপ হতে পারে, কিন্তু গাড়িটা তো খারাপ না। তাই আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে নই। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ব্ল্যাকমেইলের কারণে সেই সময় মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। এখন আবারো মুখ বন্ধ রাখতে নব্য ফাসিবাদরা জাতীয় পার্টিকে ঘিরে দুর্নীতির ভুয়া তথ্য আবিষ্কার করছে। যেভাবে ২০১৪ সালে আমার দুর্নীতি বের করতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল। দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার পরও কেউ কোনো দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেনি। 
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, হাসিনার ফ্যাসিবাদ আমরা দেখেছি। শেখ হাসিনা বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করেছে। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও আমাদের বাদ দিয়ে জোর করে নির্বাচন করতে চাচ্ছে। এমনটা হলে বিগত সময়ের মতো নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।

 

  • শেয়ার করুন-
 সেই দুই তরুণীর একজন গ্রেফতার

সেই দুই তরুণীর একজন গ্রেফতার

 আলুর বীজের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি

আলুর বীজের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি

 কারিগরি শিক্ষার্থীদের শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল

কারিগরি শিক্ষার্থীদের শাটডাউন কর্মসূচি শিথিল

সংশ্লিষ্ট

তারেক রহমানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর বিএনপি নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ

তারেক রহমানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর বিএনপি নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ

মামলা বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান সারজিসের

মামলা বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান সারজিসের

বাদ জুমা বড় সমাবেশের ডাক

বাদ জুমা বড় সমাবেশের ডাক

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের