× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজনীতির মাঠ টালমাটাল

এম. সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৫ ০১:০৭ পিএম

রাজনীতির মাঠ টালমাটাল

রাজনীতির মাঠ টালমাটাল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একটি ভিডিও এবং আরেক সমন্বয়ক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট রীতিমত ভাইরাল। ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে আপত্তি ও ‘পতিত ফ্যাসিস্ট’ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন নিয়ে একটি বাহিনীর তৎপরতা নিয়েই মূলত তাদের ওই পোস্ট। ওই বিশেষ বাহিনী আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করার জন্য চাপ দিচ্ছে বলেও তাদের অভিযোগ। আর এই পোস্ট ও ভিডিও নিয়ে হঠাৎ রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থা। রাজনীতির মাঠ থেকে শুরু করে চায়ের দোকানেও প্রশ্ন উঠেছে কী হচ্ছে কী হবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস না পেরোতেই বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ ঘোলাটে অবস্থা বিরাজ করছে। এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ বা সিভিল সোসাইটির সদস্যরাপার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথায় প্রভাবিত হয়ে আওয়ামী লীগকে ভিন্নভাবে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছেন। এদেশে শক্ত গণতান্ত্রিক ভিত্তি তৈরি হোক সেটি চায়না ওই গোষ্ঠী। এমন অবস্থায় বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের মুখোমুখী হওয়ার বিষয়ে তারা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় রক্তপাতের শঙ্কাও রয়েছে বিশ্লেষকদের মাঝে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে বিশেষ বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার অভিযোগ এনে গত শুক্রবার ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে পৃথক একটি পোস্ট দেন। তাদের ওই ফেসবুক পোস্টের পর সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি বিএনপি ও জামায়াত নেতা থেকে শুরু করে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও আলোচনা এনেছেন। এনিয়ে যে যার মতো করে মতামত দিচ্ছেন। এছাড়া ওই পোস্টের জেরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। খোদ এনসিপি গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। শুক্রবার রাতে ঢাকা বি  বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছে। জুলাই আন্দোলনে আহতরাও গতকাল পৃথকভাবে বিক্ষোভ করেছেন।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতির বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ভিডিও ও এনসিপি নেতা হাসনাতের পোস্ট আমি দেখেছি। যা ঘটছে সেটি উদ্বেগজনক। এটা কারো জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি আসলেই ঘোলাটে। তিনি বলেন, এখনো সাত মাস পার হয়নি। এখনই যারা আওয়ামী লেিগর জন্যে মায়া কান্না করছেন তাদের কোনোদিন আর শিক্ষা হবে না। এমনকি বিএনপির যেসব নেতারা ইনিয়ে বিনিয়ে আওয়ামী লগি পুনর্বাসন কথা বলছেন সেটি দুঃখজনক। পার্শ্ববর্তী ভারত চায় যে এখানে একটি শক্ত গণতন্ত্রের ভিত্তি সৃষ্টি হোক। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে দেশটির অপতৎপরতা রয়েছে।’
ড. দিলারা চৌধুরী আরো বলেন, তবে হতাশার পাশাপাশি এখানে আশার দিকও রয়েছে। যারা জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছে তারা কিন্তু অনেকটাই বিশেষ বাহিনীসহ নানান পক্ষের তৎপরতায় মুখোমুখী হয়ে প্রতিবাদ করছে। এ ধরনের পরিস্থতিতে হয় রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টি বা রক্তপাতের মাধ্যমেই সমাধান বেরিয়ে আসে।

এদিকে, গতকাল শনিবারও রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও দলটির গণহত্যার বিচারের সভা সমাবেশ হয়েছে। শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে এনসিপি। সমাবেশে নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত হতে দেওয়া হবে না। যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের শপথ আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো সাত মাস পেরিয়ে গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কোনো বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবে না। অল্প সময়ের মধ্যে নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী দল আখ্যায়িত করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাই না। আওয়ামী লীগ যে গুম-খুন করেছে তার বিচারের মাধ্যমে নিষিদ্ধ চাই। সরকারকে বলতে চাই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের বিচার এবং নিষিদ্ধের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা। এ সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ না হলে সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ‘ওয়ারিঅরস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন তারা।  

এর আগে শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া বার্তায় তিনি এ কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের জনগণকে সংযত, সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থেকে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাই।

আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া ও হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টের পর জামায়াতে ইসমলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক অতিক্রম করছে। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের পর ২৪-এর ৩৬ জুলাই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ উপহার হিসেবে পেয়েছি। ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ৩৬ জুলাই ক্লোজড হয়ে গিয়েছে। নতুন করে ওপেন করার কোনোই অবকাশ নেই। জনগণ যদি আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ দেন, তাহলে তা নিয়ে কিছু বলার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে হাজি শুকুর আলী মাদরাসাসংলগ্ন মাঠে শুক্রবার সকালে দুস্থদের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে লোক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসবেন, তিনি যদি অপরাধ না করেন, তিনি যদি ছাত্রহত্যা না করেন, তিনি যদি কোনো অর্থ লোপাট না করেন, টাকা পাচার না করেন তাহলে সেই আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না। এটি আমার বক্তব্য। তিনি আরো বলেন, কথা উঠছে যে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না? কিন্তু এই কথা উঠছে না, এই যে যারা গণহত্যা চালাল, তাদের বিচার হবে কি না? তিনি বলেন, কারা (গণহত্যা) চালিয়েছে? এটা কি মানুষ দেখেনি? কোন পুলিশ, কোন ওসি, কোন ডিসি, কোন এসি এখানে ভূমিকা রেখেছে? এই গণ-আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য দমন করা হয়েছিল কার নির্দেশে, আওয়ামী লীগের কোন নেতাদের নির্দেশে?

এদিকে, শুক্রবার রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বিদেশ থেকে আসা ‘প্রতিস্থাপিত শক্তি’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের ঘুড়ি আর বাংলাদেশে উড়তে দেওয়া হবে না। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ সুযোগ পাবে, তখন অবশ্যই তা দেশের সাধারণ মানুষের আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে যাবে। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা যে জয় অর্জন করেছি, তা রাজনৈতিক ও ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। যদি আমরা ঐক্য বজায় না রাখি এবং রাজনৈতিকভাবে লড়াই চালিয়ে না যাই, তাহলে আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসবে।

এর আগে শুক্রবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটর কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের ৭ মাস অতিবাহিত হলেও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল। তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ ফ্যাসিবাদী রেজিমির সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম, ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাক্সিক্ষত।

এদিকে, শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও শেয়ার করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। ভিডিওটি ১৫ মার্চ ধারণ করা হয়েছে বলে ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে জানান তিনি। ‘ক্যান্টনমেন্টের ইন্টারভেনশনের ট্রেইলর-১’ শীর্ষক ২৮ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তায় আসিফ মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের নিয়োগ নিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ‘ভেটো’ (আপত্তি) ছিল। ভিডিওতে আসিফ বলেন, ‘সেনাপ্রধানের দিক থেকে মূল ভেটোটা (আপত্তি) ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন? হোয়াই নট অ্যানি আদার পারসন (অন্য কেউ কেন নয়)? ড. ইউনূসের নামে মামলা আছে। তিনি একজন কনভিকটেড পারসন (দণ্ডিত ব্যক্তি)। কনভিকটেড পারসন কীভাবে আসলে একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারে?’ আওয়ামী লীগকে একটা লোক একেবারেই দেখতে পারছে না এবং বাংলাদেশে তো আলটিমেটলি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। এই ৩০-৪০ শতাংশের মানুষের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে কি একটা লোককে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত? সেনাপ্রধান এমন মন্তব্য করেন বলে ভিডিওতে বলেন উপদেষ্টা আসিফ। ভিডিওতে আসিফ আরও বলেন, ‘সেনাপ্রধান শেষে আমাদের বলেছিলেন, তিনি বুকে পাথর চাপা দিয়ে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন।’

এর আগে গতকাল একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ তুলে অবিলম্বে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (২০ মার্চ) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দিব না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনো সুযোগ নাই, বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।’ তিনি লেখেন, ১১ই মার্চ, সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। আমিসহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ই মার্চ দুপুর ২টা ৩০মিনিটে। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়, ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তারা শর্ত সাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা নাকি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন, গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে। হাসনাত আবদুল্লাহ আরও লেখেন, আমাদেরকে আরো বলা হয় ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।’ হাসনাত বলেন, তারা তৎক্ষণাৎ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করতে বলেন। এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’। হাসনাত আরও লেখেন, আলোচনার একপর্যায়ে বলি যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কীভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না।’ উত্তরে বলি, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।’ মিটিং অসমাপ্ত রেখেই তাঁদের চলে আসতে হয় বলে উল্লেখ করেন হাসনাত। হাসনাত আবদুল্লাহ আরও অভিযোগ করেন, জুলাই আন্দোলনের সময়ও তাঁদের ওপর নানা ধরনের চাপ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ওসব চাপে নতি স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের উপরেই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সঙ্গে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি।’ এনসিপি নেতা লেখেন, ‘এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে, হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপস করার সুযোগ নাই।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আজ আবারও যদি আপনাদের সমর্থন পাই, রাজপথে আপনাদের পাশে পাই, তবে আবারও এই আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ভারতীয় ষড়যন্ত্রও আমরা উড়িয়ে দিতে পারব।’ সবশেষে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দিবো না। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোন সুযোগ নাই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।’

  • শেয়ার করুন-
 ঈদুল আযহায় মুক্তির অপেক্ষায় বড় বাজেটের ৩ সিনেমা

ঈদুল আযহায় মুক্তির অপেক্ষায় বড় বাজেটের ৩ সিনেমা

 সেই দুই তরুণীর একজন গ্রেফতার

সেই দুই তরুণীর একজন গ্রেফতার

 আলুর বীজের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি

আলুর বীজের দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি

সংশ্লিষ্ট

তারেক রহমানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর বিএনপি নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ

তারেক রহমানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর বিএনপি নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ

মামলা বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান সারজিসের

মামলা বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান সারজিসের

বাদ জুমা বড় সমাবেশের ডাক

বাদ জুমা বড় সমাবেশের ডাক

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের