এম বদি-উজ-জামান
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১০:২৭ এএম
খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন না এ মাসে
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ মাসে দেশে ফিরছেন না। তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যানুযায়ী আগামী ১৯ এপ্রিল তার দেশে ফেরার কথা ছিল। দেশে ফেরার দিনক্ষণ ঠিক থাকলেও চিকিৎসার সুবিধার্থে তিনি এ মাসে ফিরছেন না। পিছিয়ে গেছে তার দেশে ফেরা। চিকিৎসার জন্য তিন মাসেরও বেশি দিন লন্ডনে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। পারিবারিক আবহে নিবিড় চিকিৎসায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।বিএনপি চেয়ারপার্সনের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, এ মাসে তিনি দেশে ফিরছেন না।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এ মাসে আসছেন না। ধীরে-সুস্থে তিনি দেশে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফর নিয়ে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী মাসের যেকোনো সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরতে পারেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেখতে গিয়েছিলাম। দেশে যেহেতু তার সঙ্গে দেখা হয়নি, এটি একেবারেই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। নির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। খালেদা জিয়া এখন মানসিকভাবে কিছুটা সুস্থ আছেন। তিনি দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি রাতে লন্ডনে যান। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। জটিল রোগীদের দীর্ঘ দূরত্বে স্থানান্তরের জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে সজ্জিত এই এয়ারবাস। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা জানার পর এই বিশেষ উড়োজাহাজটি পাঠান কাতারের আমির।
লন্ডনে পৌছার পর গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর লন্ডনে অবস্থানরত তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তিনি। তারেক রহমানের বাসায় ফেরার পর গত দুই মাসে খালেদা জিয়াকে আর হাসপাতালে নিতে হয়নি। কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হলে দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বাসায় গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি। তখন তিনি এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাকে লণ্ডনে নিতে হয় বিশেষ এয়ারবাসে করে। যে এয়ারবাসটি পাঠিয়েছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এয়ারবাসটি ফ্লাইং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) হিসেবে বিবেচিত। এটা জরুরি অবস্থায় সর্বাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তিতে সজ্জিত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা হবার পর কারাগারে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। এর পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানালেও তাতে মন গলেনি তথাকথিত ‘মানবতার জননী’ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার। কারাগারে থাকাবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়ে।
২০২০ সালের পর তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি তখনকার ফ্যাসিস্ট সরকার। যদিও করোনার সময় সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে কারামুক্তি দেওয়া হয়। এই মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস পরপর বাড়ানো হয় কয়েকদফা। কিন্তু তখনকার সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
এর মধ্যে বেশ কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হন ‘আপসহীন’ খেতাবপ্রাপ্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। পরে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। ‘কথিত’ দুর্নীতির মামলায় সাজা দিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছিল। ওই মামলায় সাজা দিয়ে দুই বছরের বেশি সময় নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়া হলেও তিনি রাষ্ট্রপতির ওই আদেশের দিকে না তাকিয়ে আইনিভাবে মামলা মোকাবিলা করেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি ‘কথিত’ দুর্নীতির দুই মামলা থেকেই খালাস পান। যেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেসব মামলার সাজা বাতিল করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
এম বদি-উজ-জামান
প্রকাশ : ১ দিন আগে
আপডেট : ৪৪ মিনিট আগে
খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন না এ মাসে
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এ মাসে দেশে ফিরছেন না। তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যানুযায়ী আগামী ১৯ এপ্রিল তার দেশে ফেরার কথা ছিল। দেশে ফেরার দিনক্ষণ ঠিক থাকলেও চিকিৎসার সুবিধার্থে তিনি এ মাসে ফিরছেন না। পিছিয়ে গেছে তার দেশে ফেরা। চিকিৎসার জন্য তিন মাসেরও বেশি দিন লন্ডনে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। পারিবারিক আবহে নিবিড় চিকিৎসায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।বিএনপি চেয়ারপার্সনের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছেন, এ মাসে তিনি দেশে ফিরছেন না।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এ মাসে আসছেন না। ধীরে-সুস্থে তিনি দেশে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফর নিয়ে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী মাসের যেকোনো সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরতে পারেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দেখতে গিয়েছিলাম। দেশে যেহেতু তার সঙ্গে দেখা হয়নি, এটি একেবারেই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। নির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। খালেদা জিয়া এখন মানসিকভাবে কিছুটা সুস্থ আছেন। তিনি দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্রের প্রতীক’ ৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি রাতে লন্ডনে যান। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। জটিল রোগীদের দীর্ঘ দূরত্বে স্থানান্তরের জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামে সজ্জিত এই এয়ারবাস। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা জানার পর এই বিশেষ উড়োজাহাজটি পাঠান কাতারের আমির।
লন্ডনে পৌছার পর গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত লন্ডনের দ্য ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর লন্ডনে অবস্থানরত তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন তিনি। তারেক রহমানের বাসায় ফেরার পর গত দুই মাসে খালেদা জিয়াকে আর হাসপাতালে নিতে হয়নি। কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হলে দ্য ক্লিনিকের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বাসায় গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়ার মুক্তির আদেশ দেন রাষ্ট্রপতি। তখন তিনি এভারকেয়ারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাকে লণ্ডনে নিতে হয় বিশেষ এয়ারবাসে করে। যে এয়ারবাসটি পাঠিয়েছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এয়ারবাসটি ফ্লাইং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) হিসেবে বিবেচিত। এটা জরুরি অবস্থায় সর্বাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তিতে সজ্জিত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাজা হবার পর কারাগারে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। এর পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস পর পর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানালেও তাতে মন গলেনি তথাকথিত ‘মানবতার জননী’ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার। কারাগারে থাকাবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়ে।
২০২০ সালের পর তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি তখনকার ফ্যাসিস্ট সরকার। যদিও করোনার সময় সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে কারামুক্তি দেওয়া হয়। এই মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস পরপর বাড়ানো হয় কয়েকদফা। কিন্তু তখনকার সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
এর মধ্যে বেশ কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হন ‘আপসহীন’ খেতাবপ্রাপ্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। পরে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। ‘কথিত’ দুর্নীতির মামলায় সাজা দিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছিল। ওই মামলায় সাজা দিয়ে দুই বছরের বেশি সময় নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়া হলেও তিনি রাষ্ট্রপতির ওই আদেশের দিকে না তাকিয়ে আইনিভাবে মামলা মোকাবিলা করেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি ‘কথিত’ দুর্নীতির দুই মামলা থেকেই খালাস পান। যেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন, সেসব মামলার সাজা বাতিল করে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট।
ভোরের আকাশ/এসএইচ