নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫ ১১:৩৩ এএম
নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা
নিখিল মানখিন: জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। গণঅভ্যুত্থানের সাত মাস পার হলেও নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচনের কথা উঠলেই বাধা হয়ে আসছে সংস্কার ইস্যু। এমন পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ নিয়ে খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে বেড়েছে সংশয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপের তেমন তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিসি) ও জামায়াতের এখনও নিবন্ধন নেই। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক কমিটির গণপরিষদ, সেকেন্ড রিপাবলিক, বিভিন্ন কমিশনের সংস্কার কার্যক্রমের ব্যাপ্তি ও জটিলতায় দ্রুত নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ ও ধূম্রজাল বেড়েই চলেছে।
সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকাল শনিবার দুপুর ১টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার শেষ করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা তুলে ধরেছে বিএনপি। আর সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কাজে দেবে না বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছে জামায়াত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। সরকার গঠিত হওয়ার পর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবি ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দেশের জনগণও অধির অপেক্ষায় কখন অনুষ্ঠিত হবে প্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই রোডম্যাপের দাবি উত্থাপিত হয় বিএনপি নেতাদের মুখে। এই দাবি এক পর্যায়ে দেশবাসীর দাবিতে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগসহ প্রায় সব রাজানৈতিক দলই একই দাবিতে মুখ খুলতে শুরু করে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। বিভিন্ন সময়ে প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে নির্বাচনি রোডম্যাপের বিষয়ে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ ও ‘জনগণ সিদ্ধান্ত দেবে’ এমন মন্তব্য করেছেন। এক পর্যায়ে ‘সরকারের মেয়াদ কতদিন তা সরকারই জানাবে’ বলে ইতোমধ্যে মন্তব্য করে রেখেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সর্বশেষ আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে মানুষ আশা করতে পারেÑ এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে মাঝখানে জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাপানের সরকারি টেলিভিশন এনএইচকে-তে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যত দ্রুত সম্ভব, এ বছরের শেষ দিকে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
গত এক মাসের ব্যবধানেই নির্বাচনি মাস ডিসেম্বর থেকে মার্চে চলে গেছে। গত চলতি বছরের গত ৬ মার্চ বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একই সুরে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। কত দ্রুত সংস্কার হয় তার ওপর নির্বাচনের এই সময়সীমা নির্ভর করছে। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসব সংস্কার প্রয়োজন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
এর মধ্যে গত ১৪ মার্চ ড. ইউনূস জানালেন যে, সংক্ষিপ্ত সংস্কার হলে ডিসেম্বরে নির্বাচন, সংস্কার বৃহৎ হলে আগামী জুনে।
এনসিপির অস্পষ্ট অবস্থান : ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। দলে যুক্ত হওয়ার আগে এনসিপির নেতারা বরাবরই সংস্কার শেষে নির্বাচন অর্থাৎ একটু দেরিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে নতুন দলটির আহ্বায়ক গত কয়েকদিনের ব্যবধানে নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে দু’ধরনের মন্তব্য করেছেন।
গত ৬ মার্চ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনসিপির আহ্বায়ক ও সদ্য সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জননিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এই বছর সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।
আর গত সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জুলাইয়ে শহিদ ও আহতদের পরিবার নিয়ে ইফতার আয়োজনে নাহিদ ইসলাম রীতিমত নির্বাচনি রোডম্যাপ দাবি করে বসেছেন। কতদিনের মধ্যে জনগণ নির্বাচন ও সংস্কার দেখতে পাবে সরকারকে তার রোডম্যাপ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গতকাল শনিবার জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বৈঠকে সংস্কার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। সংস্কার ও গণহত্যার বিচারে জনগণের কাছে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্কারের মৌলিক ভিত্তি এই সরকারের আমলেই তৈরি করতে হবে। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন কাজে দেবে না। এছাড়া, সংবিধান ও গণপরিষদ নিয়েও আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি।
দেশে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র (সেকেন্ড রিপাবলিক) কায়েম করার ঘোষণা দিয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’। পাশাপাশি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ এবং ‘নতুন সংবিধান’ প্রণয়নেরও। নতুন দলের নেতাদের এমন ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গণপরিষদ নির্বাচন নাকি জাতীয় সংসদ, কোনটা অগ্রাধিকার পাবেÑ এমন প্রশ্ন দেশবাসীর। তবে এই ইস্যুতে সামনের দিনগুলোতে দেশের রাজনীতি কোন পথে যাবে, জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গত ২ মার্চ ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেওয়া এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তৃতায় বার বার উঠে এসেছে একটি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার বিষয়।
এদিকে, আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আগামী নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করে সমালোচনায় এসেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তার এমন বক্তব্যেও জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত মঙ্গলবার সার্জিস আলম বলেন, ‘যতদিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনার ফাঁসি দেখছি, ততদিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে। খুনি হাসিনা লাশ কই ফেলেছে, তা জানা যায়নি। মায়েরা লাশ খুঁজতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। খুনির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে এই বাংলাদেশে অন্যকিছু চিন্তা করব।’
বিএনপির সংশয় : গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে একমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে অটল রয়েছে বিএনপি। এপর্যায়ে এসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা চলছে বলে সন্দেহ করছে দলটি। গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, সেকেন্ড রিপাবলিক ও জুলাই ঘোষণাপত্র ঘিরে সময়ক্ষেপণের আয়োজন করা হচ্ছে বলেও মনে করে দলটি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান যে লক্ষ্য একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, এভাবে চলতে থাকলে সেটি ধীরে ধীরে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে তারা ‘নির্বাচন প্রলম্বিত করার’ আয়োজন হিসেবে দেখছেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকার যদি ‘অনির্দিষ্ট মেয়াদে’ ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মাঠের রাজনীতিতে থাকা বৃহৎ এই দলটি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। নির্বাচন অবশ্যই এ দেশে হবে। নির্বাচন হতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আমরা চাইব অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে এই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারে থেকে দল গঠন করলে বিএনপি তা মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ফার্মগেটে সদস্য নবায়ন ও আলোচনা সভায় একথা জানান তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দেয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদেরও সমালোচনা করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা যে কথা বলছে তা কেউ মানবে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে নানা প্রস্তাবজুড়ে দেওয়া ফ্যাসিবাদী চরিত্রের মতো। সরকার দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে দেশের মানুষ এটাই প্রত্যাশা করে।
খুব শিগগিরই নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে : গত সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। নির্বাচনের যে টাইম-টেবিল তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত টাইম-টেবিল দেখিনি। ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে (নির্বাচন) আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে। ফলে ঐকমত্য কমিশনের কাজের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার কারণ আমি দেখি না।’
ডিসেম্বরে ভোটের টার্গেট সিইসির : গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচনি ট্রেনের হুইসেল প্রধান উপদেষ্টা বাজিয়ে দিয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরে ভোটের টার্গেট। ডিসেম্বরে ভোট করতে হলে তো অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। আমরা যাতে ওই টাইমলাইনটা মিস না করি সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জামায়াতসহ অন্যান্য দলের অবস্থান : সরকার ও এনসিপির সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে যেনতেনভাবে নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তবে নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, পরে অবাধ সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হতে হবে।
গত রোববার কুয়ালালামপুরের একটি হোটেলে দলীয় আলোচনায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করছি নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমি এখন সন্দিহান, আদৌ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হয় কি না? কারণ তার কতগুলো লক্ষণ থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, রাজনৈতিক ঐকমত্য। কিন্তু এখন আমরা বিভাজন দেখতে পাচ্ছি। নুর মনে করেন এসব কারণেই নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এভাবে দেশ চললে নির্বাচন কবে হয় জানি না। ভোট নিয়ে কি হয় আমরা জানি না।
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, নির্বাচন দ্রুত করার পক্ষে যেমন বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুক্তি আছে, তেমনি জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্যদেরও সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরে নির্বাচনের যুক্তি আছে। রাজনীতি সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যতম। আর সামাজিক বিজ্ঞানে যুক্তির শেষ নেই। তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদ প্রধান নুরুল হক নুরের কথাই যদি আমরা বলি, আগে তার দল স্থানীয় নির্বাচনের পরে জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে। এখন আবার জাতীয় নির্বাচন আগে করার পক্ষে বলছে। তারা হয়তো বর্তমানে ভাবছে, আগে করলে সুবিধা পাবে। তাই সব দল যদি একসঙ্গে আলোচনা করে একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে, সেটা ভালো হবে। কেননা, বিএনপির দাবি মেনে আগে জাতীয় নির্বাচন হলে অন্যরা তা মানবে না। অরাজকতা সৃষ্টি হবে। আর বিএনপি বলছে, সংবিধান সংশোধন পার্লামেন্ট ছাড়া হবে না। এনসিপি আবার গণপরিষদ নির্বাচন আগে করার জন্য বলছে। কাজেই যুক্তির অভাব নেই। নির্বাচন নিয়ে নানামুখী গেম চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন না দিয়ে এই সময়টা যত দীর্ঘায়িত হবে, দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। বেশি দীর্ঘায়িত হলে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি থাকবে না।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য অবশ্যই সময় লাগবে। তবে খুব বেশি দেরিতে নির্বাচন হলে সংকট বাড়বে। এজন্যেই রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। অন্যথায় গণতন্ত্র হবে মরীচিকার মতো। এ থেকে উত্তরণের জন্য দলগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছানো ছাড়া উপায় নেই। তবে অবশ্যই গণপরিষদ করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পর নির্বাচনে যেতে হবে। তাহলেই কেবল প্রকৃত গণতন্ত্র আসবে।