ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১৭ এএম
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় আছেন দুই ভারতীয় তারকা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। তারা কেবল ওয়ানডে ফরম্যাটের দরজাটা খোলা রেখেছেন।
শনিবার (৪ অক্টোবর) আগপর্যন্ত রোহিতই ছিলেন ভারতের ওয়ানডে অধিনায়ক। যেখানে বিশ্ব ক্রিকেটে তার চেয়ে বেশি সফলতা আছে কেবল একজনের। সেই অধ্যায় শেষ হয়েছে গতকাল, আচমকাই ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে রোহিতকে সরিয়ে দেওয়া হলো।
নিজেদের ইতিহাসে সেরা ওয়ানডে অধিনায়কের এভাবে ছাটাই হওয়াটা অনেকেই মানতে পারছেন না। রোহিতকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে ভারতীয় প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার বলেছেন, ‘রোহিত এবং কোহলির ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ কী হবে তা তাদের সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি– তিনটি ভিন্ন ফরম্যাটে তিনজন অধিনায়ক নিয়ে চালিয়ে যাওয়া বাস্তবিক অর্থে অসম্ভব। তিন অধিনায়কের সঙ্গে কাজ করাটা নির্বাচক এবং কোচদের জন্যও কঠিন।’
আগারকারের ব্যাখ্যায় আরেকটি বিষয় স্পষ্ট যে, ভারত সহসাই হয়তো এক অধিনায়কের পথে হাঁটতে চলেছে। শুভমান গিলের কাঁধে এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে টেস্ট ও ওয়ানডে দলের নেতৃত্বভার। আর টি-টোয়েন্টিতে রোহিতের অবসরের পর থেকে অধিনায়কত্ব করছেন সূর্যকুমার যাদব। তার অধীনেই সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে জিতেছে ভারত। রোহিতকে ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে ছাটাইয়ের আগে কথা হয়েছে বলেও জানান আগারকার, ‘রোহিতের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এমন নয় যে না জানিয়েই নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।’
২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার ভাবনায় এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন রোহিত-কোহলি। তবে সেই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেই পরিকল্পনা সাজাচ্ছে ভারত। প্রধান নির্বাচক জানান, ‘আমরা পরের বিশ্বকাপের কথা ভেবেছি। রোহিতকে সরানোর এটাও একটা কারণ। এখন ওয়ানডে বেশি খেলা হয় না।
দুই বছর অনেক সময় মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে তা নয়। বেশি ম্যাচ পাওয়া যাবে না। শুভমানকে তাই এখনই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাতে সে দল তৈরি করে নিতে পারে। ওরা বিশ্বকাপ খেলবে কি না, সেটা এখনই আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। ফিটনেস সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নেই। দু’জনেই ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ করেছে।’
অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুই ফরম্যাটের সিরিজ খেলবে ভারত। এই সিরিজ দিয়ে মার্চের পর জাতীয় দলে ফিরলেন রোহিত-কোহলি। কারণ এরপর আর ভারতীয় দল ওয়ানডে খেলেনি। কিন্তু রোহিতকে ফেরানো হলো ওয়ানডের অধিনায়কত্ব কেড়ে দিয়ে। তার জায়গায় টেস্টের পর ওয়ানডে দলেরও নেতৃত্বভার তুলে দেওয়া হলো শুভমান গিলের কাঁধে। রোহিতের অধীনে ৫৬টি ওয়ানডে খেলে ভারত ৪২ ম্যাচে জিতেছে। অর্থাৎ, অধিনায়ক হিসেবে ফরম্যাটটিতে রোহিতের সাফল্য ৭৫ শতাংশ।
বিশ্ব ক্রিকেটে রোহিত শর্মার ওপরে আছেন কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি স্যার ক্লাইভ লয়েড। তিনি ৮৪ ম্যাচে ক্যারিবীয়দের নেতৃত্ব দিয়ে ৬৪ ম্যাচে জয় পান, যেখানে তার সাফল্যের হার ৭৬.২ শতাংশ। ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে ওয়ানডেতে রোহিতের পর আছেন বিরাট কোহলি। তার অধীনে ভারত ৬৮.৪ শতাংশ (৯৫ ম্যাচে ৬৫ জয়) এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ৫৫ শতাংশ ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছে।
তবে একদিক থেকে সবার ওপরে আছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। একাধিক দেশে আয়োজিত ইভেন্টে তার অধীনে ভারত জিতেছে ৮৮.৮ শতাংশ ম্যাচ। যা বিশ্ব ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। রোহিতের অধীনে ভারত ওয়ানডে ফরম্যাটের ২০১৮ ও ২০২৩ এশিয়া কাপ এবং ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এ ছাড়া ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে জেতানোর পর তিনি ফরম্যাটটি থেকে অবসর নেন। একাধিক দেশে আয়োজিত ইভেন্টে রোহিতের পর সর্বাধিক সাফল্য পান অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রিকি পন্টিং (৮৪.৪ শতাংশ)।
ভোরের আকাশ/মো.