সংগৃহীত ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় নেভাল এয়ার স্টেশন লেমুরের কাছে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। পাইলট নিরাপদে বিমান থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
বুধবার (৩০ জুলাই) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মার্কিন নৌবাহিনীর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা বিমানটি থেকে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশে উঠছে।
নৌবাহিনী জানিয়েছে, বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানটি স্ট্রাইক ফাইটার স্কোয়াড্রন ভিএফ-১২৫-এর অন্তর্গত ছিল। এটি একটি ফ্লিট রিপ্লেসমেন্ট স্কোয়াড্রন, যেখানে শিক্ষানবিশ পাইলটদের আধুনিক যুদ্ধবিমানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলটও একজন প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন।
উল্লেখ্য, এফ-৩৫ লাইটেনিং টু সিরিজের এ বিমানটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমানগুলোর একটি। এটি নির্মাণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন। এক আসন ও এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট স্টেলথ ফাইটার এই বিমানটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার (১০ কোটি ডলার)। বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ এখনো নিশ্চিত নয়, তবে বিষয়টি তদন্তে এরই মধ্যে একটি টিম গঠন করেছে মার্কিন নৌবাহিনী।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ২১টি পয়েন্ট সম্বলিত সেই পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গতকাল বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার আরব নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকে তিনিসহ ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েক জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে উইটকফ বলেন, “বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি আমরা। বৈঠকে আরব নেতাদের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত ২১ পয়েন্টের পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা মনে করি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হলে একদিকে গাজায় সহিংসতা বন্ধ হবে, অন্যদিকে ইসরায়েল এবং তার সমস্ত প্রতিবেশীর উদ্বেগের সমাধান হবে।”“আমরা আশা করছি, এমনকি আমি নিজে এ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমরা যে কোনো ধরনের অগ্রগতি ঘোষণা করতে পারব।”ট্রাম্পের ২১ পয়েন্টের পরিকল্পনার কয়েকটি পয়েন্ট সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন, গাজায় বন্দি সব জিম্মির অনতিবিলম্বে মুক্তি, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজার প্রশাসনকে হামাস এবং হামাসের প্রভাবমুক্ত করা এবং পর্যায়ক্রমে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার।ট্রাম্পের সঙ্গে আরব-মুসলিম নেতাদের বৈঠকে উপস্থিত কয়েক জন মার্কিন ও মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে সিএনএন। তারা বলেছেন, আরবের নেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছেন। পাশাপাশি তারা আরও কয়েকটি পয়েন্ট যোগ করার পরামর্শও দিয়েছেন। সেগুলো হলো— পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব বন্ধ করা, জেরুজালেমের বর্তমান স্থিতাবস্থা বজায় রাখা, গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং সেখানে বন্দি সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি, গাজায় ত্রাণের প্রবেশ অবাধ রাখা প্রভৃতি।“একটি অসাধারণ এবং খুবই কার্যকর বৈঠক করেছি আমরা”, সিএনএনকে বলেছেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক কূটনীতিক।প্রসঙ্গত, সোমবার জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বৈশ্বিক সম্মেলনে হয়েছে। সম্মেলনের মূল আয়োজক ছিল ফ্রান্স এবং সৌদি আরব। সেই সম্মেলনের আবহেই আরবের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সূত্র : সিএনএনভোরের আকাশ/মো.আ.
ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহত বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল মাটির ১৪ কিলোমিটার (৮.৭ মাইল) গভীরে, মেনে গ্রান্ডে শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে। মেনে গ্রান্ডে একটি তেলসমৃদ্ধ এলাকা হলেও এর জনবসতি তুলনামূলকভাবে কম।এছাড়া ভূমিকম্পটি রাজধানী কারাকাসেও অনুভূত হয়েছে, যা কেন্দ্রস্থল থেকে ৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত। ভবন কেঁপে ওঠায় আতঙ্কিত হয়ে অনেক বাসিন্দা তাদের ফ্ল্যাট ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসেন বলে জানিয়েছে এএফপি।ইউএসজিএস জানিয়েছে, এই ভূমিকম্প থেকে বড় কোনো সুনামির আশঙ্কা নেই, ফলে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।এর কয়েক ঘণ্টা আগে একই এলাকায় ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, যা পার্শ্ববর্তী কলম্বিয়া এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ আরুবা, কুরাসাও ও বোনায়ারেও অনুভূত হয়। তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।ভেনেজুয়েলায় শক্তিশালী ভূমিকম্প বিরল হলেও কারাকাস ও মারাকাইবোসহ বিভিন্ন শহরে ভবন কেঁপে ওঠায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়োসদাদো কাবেলো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ভূমিকম্পে ‘গুরুতর কাঠামোগত ক্ষতি হয়নি’।প্রসঙ্গত, প্রায় ৮০ শতাংশ ভেনেজুয়েলাবাসী ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে বসবাস করেন। তবে দেশটিতে ১৯৯৭ সালের পর থেকে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। ওই বছর পূর্বাঞ্চলীয় সুক্রে প্রদেশের কারিয়াকোতে ভূমিকম্পে ৭৩ জন নিহত হন।এর আগে ১৯৭৬ সালে কারাকাসে এক ভূমিকম্পে প্রায় ৩০০ জন নিহত এবং ২ হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান যে, তেহরান কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে না।বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।এ ঘোষণা এল এমন সময়ে, যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—এই ই-থ্রি দেশগুলোর উদ্যোগে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর করার ৩০ দিনের প্রক্রিয়া আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে। ই-থ্রির অভিযোগ, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ইরান।তবে তারা জানিয়েছে, ইরান যদি জাতিসংঘ পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার পুনঃস্থাপন করে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত সংক্রান্ত উদ্বেগ দূর করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে, তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখা হবে।জাতিসংঘে পেজেশকিয়ানের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক্স-এ লিখেছেন, “চুক্তি এখনও সম্ভব। মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। ইরানের উচিত আমাদের যৌক্তিক উদ্বেগগুলোর জবাব দেওয়া।”এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে সরে যাওয়া এবং এর পর বিমান হামলার ঘটনায় তেহরান জানিয়েছিল, এসব কারণেই তারা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন কমিয়ে দিয়েছে।পেজেশকিয়ান ইউরোপীয় দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, “তারা নিজেদের সৎ পক্ষ দেখালেও আসলে যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় কাজ করছে। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে ছোট করে দেখানো হয়েছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইউরোপীয়রা আইনি বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে গিয়ে ইরানের বৈধ পদক্ষেপগুলোকে ভ্রান্তভাবে ‘চুক্তি ভঙ্গ’ হিসেবে প্রচার করছে।ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি গত মঙ্গলবার বলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায় না। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করেন।বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে ইরানের বিদেশি সম্পদ জব্দ হতে পারে, অস্ত্র চুক্তি বন্ধ হয়ে যাবে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কঠোরভাবে সীমিত করা হবে।জাতিসংঘে ভাষণে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকস্মিক হামলার নিন্দা জানান। তিনি দাবি করেন, এসব হামলায় ইরানের বহু জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন এবং দেশটির প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়েছে।তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের বিমান হামলায় এক হাজারেরও বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে। পেজেশকিয়ান বলেন, “দেশপ্রেমিক ও সাহসী ইরানি জনগণ প্রমাণ করেছে, আগ্রাসনের সামনে তারা কখনোই মাথা নত করবে না।”তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইল এখনো প্রকাশ্যে “গ্রেটার ইসরাইল” পরিকল্পনার কথা বলছে, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাফার জোন তৈরি। তিনি আরও বলেন, প্রায় দুই বছরের গণহত্যা, অনাহার, দখলকৃত ভূখণ্ডে বর্ণবৈষম্য এবং আগ্রাসন চালিয়েও ইসরাইল এই অবাস্তব ও দুঃসাহসী পরিকল্পনা ধরে রেখেছে।সূত্র: আল জাজিরাভোরের আকাশ/মো.আ.
সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নিরাপত্তা বলয়ে প্রবেশ করেছে পাকিস্তান। বিশ্লেষকদের মতে, পুরো বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক সব সমীকরণই পাল্টে দিতে পারে এই চুক্তি। পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত এ চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশকেও বেশ আকৃষ্ট করছে, যার ফলে ন্যাটোর আদলে নতুন এক মুসলিম জোটের উদ্ভব হতে পারে অচিরেই। এরই মধ্যে এ বিষয়টি শঙ্কিত করে তুলেছে পাকিস্তানের প্রতিবেশী ভারতকে।কারণ, তাৎক্ষণিক সামরিক হুমকি না থাকলেও উপমহাদেশের শক্তির ভারসাম্যে ভারতের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে নতুন এ জোট। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত সপ্তাহে রিয়াদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের আলিঙ্গনের দৃশ্য ছিল বেশ অর্থবহ। আর এই উষ্ণতা আসে দুদেশের মধ্যে একটি কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের পর।এর মধ্য দিয়ে ইসলামী বিশ্বের একমাত্র পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে উপসাগরের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজতন্ত্র আরও ঘনিষ্ঠ হলো। রয়টার্সকে সৌদি সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছিলেন, এ চুক্তি মূলত বহুদিনের গভীর সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। কিন্তু, ভারতের কাছে এর তাৎপর্য অন্যরকম।গত কয়েক বছর ধরে নয়াদিল্লি রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ রাখলেও পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই পদক্ষেপ দেশটির থিংকট্যাংকে নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে চার দিনের সংঘর্ষসহ কাশ্মির ইস্যুতে পরমাণু অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুদেশ একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।ফলে, পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতায় সৌদি আরবের সমর্থন ভারতকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো— চুক্তির শর্তে বলা হয়েছে, যেকোনো এক দেশের ওপর হামলা মানেই উভয় দেশের ওপর হামলা। কূটনৈতিকভাবে নয়াদিল্লির জন্য এটি ভালো সংকেত নয়। ভারতের কৌশলবিদ ব্রহ্মা চেলানি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, রিয়াদ জানত, ভারত এই চুক্তিকে নিজেদের নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে নেবে। তারপরও তারা এগিয়েছে।তার মতে, এটি পাকিস্তানের শক্তি নয় বরং সৌদি আরবের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। তার ভাষায়, একজন দীর্ঘমেয়াদী নির্ভরশীল অংশীদারকে সঙ্গে রাখাটা রিয়াদকে জনশক্তি ও পরমাণু বিমা’র নিশ্চয়তা দেবে। একইসঙ্গে তারা ভারত, ওয়াশিংটনসহ অন্যদের জানিয়ে দিলো যে নিজেদের পথ তারা নিজেরাই বেছে নেবে।এদিকে পাকিস্তান ও সৌদির মধ্যে হওয়া চুক্তিটিকে ‘গুরুতর ভুল পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিবাল। তিনি বলেছেন, এটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিকভাবে অস্থির ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পাকিস্তানকে নিরাপত্তাদাতা বানানো বিপজ্জনক। পাকিস্তান–ভারত উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।তবে, নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার এখন পর্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য এ চুক্তির প্রভাব কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখবে নয়াদিল্লি।অবশ্য, সব বিশ্লেষকই পাকিস্তান ও সৌদির এ পদক্ষেপকে বিপজ্জনক মনে করছেন না। তাদের মতে, দিল্লি হয়তো ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। কারণ, সৌদি আরব ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ককেই প্রাধান্য দেয়। ভারত সৌদির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও জ্বালানি আমদানিকারক দেশ।পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেছেন, এ চুক্তি সরাসরি কোনোভাবে ভারতকে বাধাগ্রস্ত করছে না। ভারতের সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে সৌদি আরবের, তারা ভারতের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুভাবাপন্ন পদক্ষেপ নেবে না।কিন্তু, একইসঙ্গে তিনি এও বলেছেন, পাকিস্তানকে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোর ভেতরে টেনে এনে সৌদি আরব কার্যত ভারতকে ‘চেকমেট’ করেছে। এখন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে চীন, তুরস্ক এবং সৌদি আরব— যারা সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তানকে অস্ত্রও দিয়েছে।অনেক বিশেষজ্ঞ আবার মনে করছেন, পাকিস্তান ও সৌদির এই চুক্তির তাৎপর্য ভারতের জন্য তাৎক্ষণিক সামরিক হুমকির চেয়ে বরং আঞ্চলিক জোট–সমীকরণে পরিবর্তন আনবে।ওয়াশিংটনভিত্তিক হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক ও সাবেক পাকিস্তানি কূটনীতিক হুসেইন হক্কানি বিবিসিকে বলেছেন, ভারতের উদ্বেগ ‘বহুমাত্রিক’। তার মতে, এ চুক্তি পাকিস্তানকে সেইরকম একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে, যেরকম শীতল যুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছিল।তবে, তিনি সতর্ক করেছেন, আসলে বিষয়টা নির্ভর করবে ‘আগ্রাসন’ ও ‘আগ্রাসী’ শব্দের সংজ্ঞায় রিয়াদ ও ইসলামাবাদের অবস্থান এক হয় কি না। এছাড়া, এর ফলে ভারত–সৌদি অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কও চাপে পড়তে পারে।ভোরের আকাশ/মো.আ.