সর্বোচ্চ আদালতের রায় হাতে নিয়ে দীর্ঘ ৫৪ দিন ধরে রাস্তায় অপেক্ষা করছে ব্যাটালিয়ন আনসারদের একটি দল। একটি মানবিক দাবিপূরণে তাদের সুদীর্ঘ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। রাজধানীর খিলগাঁও আনসার সদর দপ্তরের বাইরে প্রধান সড়কের ফুটপাতে আমরণ অনশনের ব্যানার টানিয়েছে তারা।বুধবার কথা হয় আমরণ অনশনে থাকা যশোর থেকে আসা কামারুজ্জামানের সঙ্গে। দৈনিক ভোরের আকাশকে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ এক সংগ্রামের মধ্যে আছি। ১৯৯৪ সালে ৭ দফার এক দাবিতে অংশ নেওয়ায় সে সময় অন্যায়ভাবে আমাদের চাকরি থেকে অপসারণ করে। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা জেলে থাকা অবস্থায়তেই তৎকালীন সরকার উত্থাপিত ৭ দফা দাবি মেনে নেয়। কিন্তু আমাদেরকে আর ব্যাটালিয়নে ফিরতে দেওয়া হয়নি। সে সময় সিএমএম আদালত আমাদের বেকসুর খালাস দিলেও তৎকালীন আনসারের মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার শিকার হই আমরা। বাধ্য হয়ে আমারা আদালতের স্মরণাপন্ন হই। আদালত আমাদের পক্ষে রায় ঘোষণা করে, ৪ মাসের মধ্যে আমাদেরকে ব্যাটালিয়নে ফেরাতে নির্দেশ দেয়।কিন্তু দুর্ভাগ্য তাড়া করে ফেরে আমাদের। শত আশ^াসের ৩ মাস ২৯ দিন অপেক্ষার পর কর্তৃপক্ষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। শুরু হয় আমাদের আইনি লড়াইয়ের আরেক অধ্যায়। সারাদেশের ২৪ শ চাকরিচ্যুত অসহায় ব্যাটালিয়ন সদস্যদের সঙ্গে যোগযোগ করে মামলা চালিয়ে যাওয়া সে এক কঠিন কাজ। দিন গড়াতে থাকে। আমরা অপেক্ষার দিন গুনি। ৩ মাস ২৯ দিন আমাদের অপেক্ষায় রেখে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ আমাদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ঝুলে যায় আমাদের চাকরিতে যোগদানের ভাগ্য। সেই থেকে ঝুলছেই। কর্তৃপক্ষের আপিলের বিপক্ষে আমাদেরকে আবারো চাকরিতে ফেরাতে রায় দেয় আপিল বিভাগ। আমরা আশাবাদী হয়ে উঠি।কিন্তু এবারের রায়ে কতদিনের মধ্যে আমাদের চাকরিতে ফেরাতে হবে এমন কোনো নির্দেশনা দেয়নি আদালত। এ সুযোগে আবারো কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে অপেক্ষার এক দীর্ঘ সারিতে দাঁড় করে দেয়। পরে আমরা আবারো টাইম ফ্রেম চেয়ে আদালতের কাছে রিভিউ করি। সেই রিভিউয়ে ২০২৫ সালে বর্তমান প্রধান বিচারপতি রিভিউ খারিজ করে দিয়ে আপিলের রায় বহাল রাখেন। এতে টাইম ফ্রেমের সেই অবারিত সুযোগ আবারো চলে যায় কর্তৃপক্ষের হাতে। এখন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো অপশন থাকছে না। তাই সবকিছু ফেলে আমরা ৫৪ দিন ধরে এই অনশনে আছি।কিন্তু দীর্ঘ এই সময়ে আমরা কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার সাক্ষাৎ পর্যন্ত পায়নি। আমরা অপেক্ষা করবো আজীবন। হয় আদালতের রায় বাস্তবায়িত হবে, না হয় এখান থেকেই আমাদের লাশ যাবে। যা একটি ইতিহাস হবে। আমরা আশা করছি কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতি সদয় হবেন। আমরা জীবনের শেষ বেলায় হলেও সরকার এবং আমাদের প্রিয় বিভাগ থেকে সুবিচার পেয়েছি এমন সান্ত্বনা নিয়ে অন্তত মরতে পারব।এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম না প্রকাশের শর্তে আনসারের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে বলেন, খবরটি জানা আছে। অনেক আগের একটা বিষয়। কী করা যাবে। এর জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সাড়া লাগবে। তবে তিনি মেনে নেন বিষয়টি অবশ্যই মানবিক। ভোরের আকাশ/জাআ