মাজাহারুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ১২:৩৯ এএম
ছবি: সংগৃহীত
আর মাত্র সাড়ে তিন মাস পরই ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে জয়ের টার্গেটে ভোটের মাঠে রয়েছে দেশের অনত্যম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। ইতোমধ্যে প্রার্থীর তালিকাও চূড়ান্ত করেছে দলটি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়নি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় আরো কিছু দিন সময় নিচ্ছেন দলটি। তবে দুই-এক দিনের মধ্য আসন প্রতি চূড়ান্ত প্রার্থীকে দলটির হাইকমান্ড গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে দিচ্ছেন বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্প্রতি তিনশত আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। ওই মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। এ মতবিনিময় সভা থেকে নেতাকর্মীদেরকে কঠোর নিদের্শনাও দিয়েছেন দলটি।
নিদের্শনায় বলা হয়েছে, দল যাকেই মনোনয়ন দিবেন, সব ভেদাভেদ ভুল ঐক্যবদ্ধভাবে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনতে হবে। কোনো ধরনের অসন্তোষ অথবা কোন্দল বা মনঃক্ষুণ্ন হওয়া চলবে না। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করলে প্রতিপক্ষ সুযোগ পাবে, দলের ক্ষতি হবে। কাজেই দলের নিদের্শনা মেনে ঐক্যবদ্ধ থাকুন নতুবা বহিষ্কারের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে- এমনটাই জানা গেছে দলটির বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্রে।
মতবিনিময় সভার শেষ দিন গত সোমবার গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া এক মনোনয়ন প্রত্যাশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে কাউকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়নি বরং সব অবস্থায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে রেড সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। এই রেড সিগন্যাল হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকার রেড সিগন্যাল। দল যাকে মনোনীত করবে, তাকে জয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে কাজ করতে হবে। বিপক্ষে গেলেই বহিষ্কারসহ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার সতর্ক বার্তা রয়েছে দলটির।
সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এক আসনে একজন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। সবাই মনোনয়ন পাবেন না। যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদের দল বিভিন্নভাবে পুরষ্কৃত করবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এই পরিস্থিতিতে ভুল-ত্রুটি না করার জন্য নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। ঐক্যবদ্ধভাবে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের পক্ষে সব নেতাকে কাজ করার নির্দেশনাও দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, সভায় বলা হয়েছে- দল একজনকে মনোনয়ন দেবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খুব তাড়াতাড়ি প্রার্থী ঘোষণা করা হবে জানিয়ে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটারদের উজ্জীবিত করা ও ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য দলের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। এছাড়া দেশ, জাতি, গণতন্ত্র, দল এবং নেতাকর্মীদের জন্য গত ১৬ বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ত্যাগ-তিতীক্ষা, নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তারেক রহমান।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, তারেক রহমান দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্য ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
খুলনা-৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী পারভেজ মল্লিক বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর যে ষড়যন্ত্র চলছে, এজন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, সভায় দেশ, জাতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন যে নেতাকেই দেওয়া হোক না কেন, ধানের শীষকে জেতাতে হবে।
সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, সভায় বলা হয়েছে- দল একজনকে মনোনয়ন দেবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খুব তাড়াতাড়ি প্রার্থী ঘোষণা করা হবে জানিয়ে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উপজাতিবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান বলেন, আমাদের প্রতি দলের বার্তা, যাকেই নমিনেশন দেওয়া হোক তার পেছনেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ব। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের চ্যালেঞ্জে নিয়ে প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নানা কৌশল ও মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে দলটি। বিশেষ করে গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের ভূমিকা, ক্লিন ইমেজ, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং দলের বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে-এসব চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে দলের শীর্ষ নোতারা এবং হাইকমান্ড।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়ের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখেছে, আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা জেল জুলুমের শিকার হয়েছে, নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাই এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের সুপারিশ ও তদবিরে কাজ হয়নি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ