জমি বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিতে দুই ভাইকে হত্যা, তিনজনের মৃত্যুদণ্ড
ভোলার চরফ্যাশনে জমি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করতে দুই ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মরদেহ পুড়িয়ে গুমের ঘটনায় তিনজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় আরও দু’জনকে স্বল্প মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।বুধবার দুপুরে চরফ্যাশন অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের সহকারী জজ মো. শওকত হোসাইন এ রায় ঘোষণা করেন।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আসলামপুর ইউনিয়নের মো. বেল্লাল (৩৭), দক্ষিণ আইচা থানার দক্ষিণ চর মানিকার ইউনিয়নের মো. সালাউদ্দিন (৩০) ও একই ইউনিয়নের শরিফুল ইসলাম।এছাড়া আসামি মো. আবুল কাসেমকে ৫ মাসের এবং মো. আবু মাঝিকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।২০২১ সনের ৭ এপ্রিল জমি বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিতে দুলাল চন্দ্র শীল ও তপন চন্দ্র শীলকে গলা কেটে হত্যার পর পেট্রোল দিয়ে মরদেহ পুড়িয়ে গুমের চেষ্টা করেন অভিযুক্ত ৫ আসামি। ঘটনার একদিন পর পুলিশ সুন্দরী খাল এলাকার একটি বাগান থেকে পুড়ে যাওয়া দুটি মরদেহ উদ্ধার করে। তরে মরদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি মাথা খুঁজে পায়নি পুলিশ। পরে পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করে। এ ঘটনায় নিহতদের ছোট ভাই নিপেন চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ে চরফ্যাশন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং শরিফুলকে গ্রেপ্তারের পর খুনের রহস্য উদঘাটন হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে দুইটি মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়।চরফ্যাশনের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হযরত আলী হিরণ জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের মধ্যে একজন কারাগারে আছেন, অন্য দু’জন পলাতক।ভোরের আকাশ/জাআ
০৬ আগস্ট ২০২৫ ০৭:২০ পিএম
স্কুল ছাত্র সুমেল হত্যায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন
সিলেটের বিশ্বনাথে ২০২১ সালে স্কুলছাত্র সুমেল মিয়া (১৮) হত্যা মামলায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহীন এ রায় ঘোষণা করেন।এ ছাড়া এ মামলায় আরও ১৭ আসামির দুই বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলায় মোট ৩২ আসামির মধ্যে একজন পলাতক রয়েছেন।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নজরুল, সদরুল, সিরাজ, সাইফুল, জামাল, শাহিন, আব্দুল জলিল ও আনোয়ার।যাবজ্জীবন আদেশপ্রাপ্তরা হলেন- আব্দুন নুর, জয়নাল, ইলিয়াছ, আশিক, আছকির, ফরিদ ও আকবর। অতিরিক্ত এডিশনাল পিপি কামাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।জানা যায়, ২০২১ সালের ১ মে বিশ্বনাথের চৈতননগর গ্রামের নজির উদ্দিনের ক্ষেতের জমি থেকে জোর করে রাস্তায় মাটি তুলতে চান যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুল আলম। এসময় তাকে বাধা দেন নজির উদ্দিন, তার চাচাতো ভাই মানিক মিয়া ও ভাতিজা ১০ম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমেল মিয়া। এতে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে সাইফুল আলমের বন্দুকের গুলিতে সুমেল মিয়া নিহত হয়। এসময় সুমেলের বাবা ও চাচাসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর সুমেলের চাচা ইব্রাহিম আলী সিজিল বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। তৎকালীন বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত কর্মকর্তা রমা প্রসাদ চক্রবর্তী চাঞ্চল্যকর এ মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৩২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। মামলায় মোট ২৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। গত ১৩ জুলাই মামলাটি যুক্তিতর্ক শেষে বুধবার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। ওইদিন আদালত ৩০ জন আসামিকে কারাগারে পাঠান। মামলায় ৩২ জন আসামির মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি মামুনুর রশীদ পলাতক রয়েছেন। এছাড়া প্রধান আসামি সাইফুল আটকের পর থেকে প্রায় পৌনে ৪ বছর ধরে কারাগারে আছেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
৩০ জুলাই ২০২৫ ০১:৪০ পিএম
মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবার মৃত্যুদণ্ড
নিজ কন্যাশিশুকে ধর্ষণের দায়ে এক বাবাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) বেলা ১১ টার দিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ হামিদ এই রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু যশোর সদর উপজেলার নওদাগ্রাম ইউনিয়নের ডাকাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আব্দুর রহমান হাওলাদারের ছেলে।রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “পিতার পরিচয়ে যে নরপিশাচ আত্মগোপন করেছিল, তার অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন রয়েছে।”আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী কন্যাশিশুটি বাবা-মায়ের সঙ্গে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার একটি ভাড়া বাসায় থাকত। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বাবা আনোয়ার হোসেন তার নয় বছর বয়সী মেয়েকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন।পরদিন শিশুটি মাকে ঘটনাটি জানালে, তার মা বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়।২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(১) ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে আনোয়ার নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং ন্যায়বিচার চান।মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে। সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি তাকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়।রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হুমায়ুন কবির বলেন, “শিশু নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতে সমাজে সচেতনতা ও বিচারিক সাহস দুই-ই বাড়বে।”আইনজীবী ও শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, পারিবারিক পরিবেশে সংঘটিত এমন অপরাধ শিশুর জীবনে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক প্রভাব ফেলে। এই ধরনের মামলায় দ্রুত বিচার ও পুনর্বাসনের বিষয়টি সমান গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সুরক্ষায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে দায়িত্ব নিতে হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ