বৈষম্য নিরসন ও জাতীয়করণ দাবিতে ফেনীতে শিক্ষকদের সম্মেলন
অবসরে যাওয়া মাদ্রাসা শিক্ষকদের বকেয়া পাওনা আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে ঢাকার রাজপথে অনশন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ।শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে ফেনী শহরের ডিএম কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত পরিষদের জেলা সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্মেলনে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি বৈষম্য নিরসন এবং শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণসহ ১৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের ফেনী জেলা শাখা আয়োজিত এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রফেসর ড. শাহজাহান মাদানী। তিনি তার বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পাওনা পরিশোধে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, "অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পাওনা তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দিতে হবে। অবসরের টাকা দিতে গড়িমসি কেনো?" তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় দেড় মাস আগে ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার আবেদন জমা পড়ে। এই ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। দাবি আদায় না হলে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের নিয়ে ঢাকায় বৃহৎ সম্মেলন ও অনশনের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।সম্মেলনে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ড. শাহজাহান মাদানী আরও বলেন, "শিক্ষকতা শুধু একটি চাকরি নয়, বরং এটি একটি জিম্মাদারি ও জাতি গঠনের পবিত্র দায়িত্ব।" তিনি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আমানত হিসেবে উল্লেখ করে তাদের ঐশী জ্ঞানের আলোয় আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। শিক্ষকদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, "আপনাদেরকে শুধু শিক্ষকতা আর মসজিদে ইমামতি করলে চলবে না, আগামী দিনে দেশ চালনার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।"পরিষদের সেক্রেটারি জেনারেল, অধ্যক্ষ মুফতি ফারুক আহমাদ তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন যে, মাদ্রাসা শিক্ষা যুগ যুগ ধরে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। তিনি বলেন, "সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজ থাকলেও কোনো সরকারি ইবতেদায়ি, দাখিল, আলিম বা ফাজিল মাদ্রাসা নেই।" তিনি সরকারের কাছে প্রতিটি উপজেলায় একটি ফাজিল মাদ্রাসা এবং প্রতিটি জেলায় একটি কামিল মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি জানান।কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন মোল্লা স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষকদের মধ্যে বেতন, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার বৈষম্যের কথা তুলে ধরে এর সুন্দর সমাধানের দাবি জানান। তিনি বলেন, এই বৈষম্য দূর করতে মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ সোচ্চার থাকবে।পরিষদের ফেনী জেলা সভাপতি মাওলানা নুর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে এবং আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে তেরো শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক ড. সাইফুল ইসলাম রফিক, ফেনী জেলা শাখার উপদেষ্টা অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া ও অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন এবং জামায়াতের জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান।এছাড়া উদ্বোধনী বক্তব্য দেন পরিষদের জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইসমাইল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহীম, আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সদর উপজেলা সভাপতি হাবিব উল্যাহ বাহার এবং পরিষদের বিভিন্ন উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা বজলুল করিম, মাওলানা আবদুল্লাহ আল ফারুক, মাওলানা সামছুল করিম, মাওলানা ইব্রাহীম খলিল, মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা সাইফুল ইসলাম ও মাওলানা ইয়াকুব মজুমদার।ভোরের আকাশ/মো.আ.