নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫ ০৪:০৯ এএম
ভূমিদস্যু ইলিয়াস মোল্লাহর সম্পদের খোঁজে দুদক, হাজিরা তলব
ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শত শত বিঘা সরকারি জমি দখল এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অসংখ্য সম্পদের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ইলিয়াস মোল্লাহ এবং তার পরিবারের নামে রাজধানীর শ্যামপুর, বিরুলিয়া, সাভার এবং আইয়াজ প্যালেস এলাকায় কয়েকশ বিঘা জমি ও স্থাবর সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। বিরুলিয়ায় রয়েছে প্রায় ৬০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত একটি বাগানবাড়ি এবং ছেলের নামে পৃথক একটি বাংলো। এছাড়া তার নামে তিনটি ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকানার তথ্যও মিলেছে।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৪৭৩টি প্লট, মিরপুর-১ নম্বরে জাতীয় চিড়িয়াখানার জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ২ একর জমি এবং তুরাগ নদের অংশ ভরাট করে মিরপুর-২ নম্বরে নির্মিত ২০০টির বেশি বস্তিঘরের দখলেরও প্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া, মিরপুর-১২ এলাকায় ‘ইলিয়াস মোল্লাহর বস্তি’ নামে পরিচিত জায়গায় নদীভরাট করে শত শত ঘর তৈরি করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ দিয়ে ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।
এ সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের উপপরিচালক মো. মোজাম্মিল হোসেনের সই করা তলবি নোটিশে আগামী ৯ জুলাই সকাল ১১টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ইলিয়াস মোল্লাহকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে জমি, বাড়ি, ব্যাংক হিসাব, পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন, যানবাহনের কাগজপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সংশ্লিষ্ট সব নথিপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে দুদক ও বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইলিয়াস মোল্লাহ বর্তমানে পলাতক বা বিদেশে রয়েছেন। অনুসন্ধান টিম ইতোমধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থায়— যেমন ব্যাংক, বিআরটিএ, ভূমি অফিস, রাজউক, বিদ্যুৎ বিভাগ, তিতাস গ্যাস, সিটি কর্পোরেশন ও এনবিআর— তার এবং তার পরিবারের সম্পদ ও বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। কিছু নথি ইতিমধ্যেই দুদকের হাতে এসেছে বলেও জানা গেছে।
ইলিয়াস মোল্লাহর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী, তার নগদ ও ব্যাংক জমাসহ মোট সম্পদ ছিল ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা। নির্বাচনী হলফনামায় তিনি ২০১৮ সালে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ১১ লাখ টাকায়। সম্পদের মধ্যে রয়েছে মাছের খামার, অ্যাগ্রো ফার্ম, বিপণিবিতান, দুটি বাড়ি, একটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং স্ত্রীর নামে ৩২ ভরি ও নিজের নামে ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার। তবে স্থানীয়দের মতে, এ হিসাব বাস্তব সম্পদের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
দুদকের অনুসন্ধান বলছে, ইলিয়াস মোল্লাহর অবৈধ সম্পদের অন্যতম উৎস মিরপুরের দুয়ারীপাড়া। ১৯৮১ সালে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ ৪৭৩টি প্লটের মালিকানা নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিরোধের সুযোগ নিয়ে ওই জমি দখলে নেন ইলিয়াস। প্লট দখল করে সেখানে বসবাসরতদের বারবার উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, প্লট ভেঙে সংখ্যা বাড়িয়ে পুনরায় বিক্রি এবং অস্থায়ী দোকান ও মার্কেট থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, “অনুসন্ধান কর্মকর্তার এখতিয়ার রয়েছে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তলব করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও বক্তব্য গ্রহণ করার। যদি তিনি সহযোগিতা না করেন, তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারাবেন।”
ইলিয়াস মোল্লাহর রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয় ২০০৫ সালে পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ভোরের আকাশ//হ.র