সাত কলেজের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর অনুমতি পেল ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’
সরকারি সাত কলেজের জন্য নতুন একাডেমিক কাঠামোর অধীনে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রাজধানীর এই সাতটি কলেজের জন্য প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের একটি স্বতন্ত্র কাঠামোর অধীনে এবার থেকে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এই অনুমোদন গত ৯ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় সিনিয়র সহকারী সচিব এ. এস. এম. কাশেমের সই করা এক স্মারকের মাধ্যমে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৭ জুলাইয়ের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই সাতটি সরকারি কলেজ হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শেরেবাংলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। নতুন এ কাঠামোর আওতায় কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে শুরু হবে একটি আলাদা প্রশাসনিক ও একাডেমিক অধ্যায়।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ঢাকার সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এবার থেকে একটি নির্দিষ্ট ও স্বতন্ত্র কাঠামোর অধীনে ভর্তি এবং শিক্ষাজীবন পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছেন, যা তাদের শিক্ষাগত অভিজ্ঞতাকে আরও সংগঠিত ও দক্ষভাবে পরিচালিত করতে সহায়ক হবে।
ভোরের আকাশ/হ.র
সংশ্লিষ্ট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণা করা হয়েছে।এতে রাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৮৭টি ভোট।একই পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের শেখ নূর উদ্দীন (আবীর) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট।এদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাউদ্দিন আম্মার বড় ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মোট ১১ হাজার ৪৯৭টি ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, শিবির সমর্থিত প্যানেলের ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৭ ভোট।আম্মার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক, আর ফাহিম রেজাও একই সংগঠনের সাবেক সমন্বয়ক।সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে শিবির সমর্থিত প্যানেলের এস এম সালমান সাব্বির নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭৫টি ভোট, যেখানে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জাহিন বিশ্বাস (এষা) পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৫১ ভোট।শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সেতাউর রহমান বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন। তবে চূড়ান্ত ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি।রাকসু নির্বাচনে ২৩ পদে মোট ২৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১০টি প্যানেল থেকে। এ ছাড়া ১৭টি হলে হল সংসদের ১৫ পদে ৫৯৭ জন এবং সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫ পদে ৫৮ জন প্রার্থী লড়েন।রাকসুর ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন এবং এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৯০১, যার মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং ছাত্র ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ছয়টি নারী হলে ভোট পড়ার হার ৬৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।ভোরের আকাশ/মো.আ.
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ছাত্রদল সমর্থিত এজিএস (সহ-সম্পাদক) প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা।শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘সকলের এত বেশি ভালোবাসা পেয়েছি যা অকল্পনীয়। আপনাদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। আপনাদের ভালোবাসার প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমি ছিলাম, আছি এবং থাকবো। দোয়া রাখবেন আমার জন্য! অভিনন্দন নবনির্বাচিত সকল রাকসু প্রতিনিধিদের।’পোস্টের শুরুতে তিনি লেখেন, ‘শিক্ষার্থীদের রায়ই চূড়ান্ত!’৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত রাকসু নির্বাচনে এষা ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ৫ হাজার ৯৫১ ভোট পেয়েছেন। এ পদে ৬ হাজার ৯৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী এস এম সালমান সাব্বির।ভোরের আকাশ/মো.আ.
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ১৩টি কেন্দ্রের ফলাফলে সহ সভাপতি (ভিপি) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তবে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার।বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রোকেয়া, মুন্নুজান, তাপসী রাবেয়া, খালেদা জিয়া, রহমতুন্নেসা, জুলাই ৩৬, শের-ই বাংলা ফজলুল হক, শাহ মখদুম, নবাব আবদুল লতিফ, সৈয়দ আমীর আলী, শহীদ শামসুজ্জোহা, শহীদ হবিবুর রহমান এবং মতিহার হলের ফলাফলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।ঘোষিত ফলাফলে শিবির সমর্থিত মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ভোট পেয়েছেন ৯২৬৩টি । তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবির পান ২৪৭১টি ভোট।জিএস পদে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। তিনি পেয়েছেন ৮২৭২টি ভোট। অন্যদিকে একই পদে শিবির সমর্থিত ফজলে রাব্বি ফাহিম রেজা পান ৪৩৩৬ ভোট।এজিএস পদে ৫০৭২ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন শিবির সমর্থিত সালমান সাব্বির। ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা এই পদে পেয়েছেন ৪১৭১ ভোট।এর আগে সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়। বিকেল ৫টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৭টি কেন্দ্রের ফলাফল গণনা শুরু হয়।এবারের রাকসু নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি ভোটকেন্দ্রে। কেন্দ্রীয় রাকসুর ২৩টি পদে মোট ৩০৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ। সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।অন্যদিকে ১৭টি হল সংসদের ২৫৫টি পদে মোট ৫৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটারের ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ নারী, ৬০ দশমিক ৯০ পুরুষ।ভোরের আকাশ/এসএইচ
পাসের হার বিবেচনায় দুই দশকের মধ্যে বড় বিপর্যয়ে পড়েছে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল। কমেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা। রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী ইংরেজীতে ফেল করেছে। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ফল বিপর্যয়ের পেছনে বেশ কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে। করোনাকালে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পাঁচ বছর পর পূর্ণ সিলেবাস, পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা মানিয়ে নিতে পারেনি। ছিল না গ্রেস মার্কস সুবিধা। বছরজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি চরমভাবে ব্যাহত হয়। বিভিন্ন আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন অসংখ্য শিক্ষার্থী।২০২০ সালে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সে বছর ফরম পূরণ করা সব শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়া হয়, যেটিকে অটোপাস বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, ২০২০ সালে পাসের হার হয় ১০০ শতাংশ। করোনার কারণে এরপর কয়েক বছর কখনো সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, কখনো চার বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষা হয়। সে বছর পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।সবশেষ ২০২৪ সালে পূর্ণ নম্বর, পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণ সময়ে ফেরে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। তবে কয়েকটি পরীক্ষা হওয়ার পর শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। এতে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সরকার পরিবর্তনের পর আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি করে পরীক্ষা আর না নেওয়ার জন্য শুরু হয় আন্দোলন। তাতে বাধ্য হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করে। ওই বিষয়গুলোর পরীক্ষা না নিয়ে এসএসসির ফলাফল বিবেচনা করে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল প্রকাশ করা হয়। বছরজুড়ে, এমনকি পরীক্ষার সময়েও দেশের অস্থির আন্দোলন, মারামারি, খুনাখুনিসহ অরাজক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেন ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা, যাদের ফলাফল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে।২০ বছরের তুলনামূলক পাসের হারগত ২০ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার পদ্ধতি ও ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০০২ সাল পর্যন্ত ডিভিশন পদ্ধতি অর্থাৎ, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ছিল। ২০০৩ সাল থেকে জিপিএ পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে পাঁচটি স্কেলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। নতুন এ পদ্ধতি চালুর পর শিক্ষার্থীদের বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। জিপিএ পদ্ধতি চালুর প্রভাব পড়ে ২০০৩ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে। সে বছর পাসের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০০৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশে। এরপর থেকে পাসের হার ক্রমেই বাড়তে থাকে।২০০৫ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাস করেছিলেন ৫৯ দশমিক ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া ২০০৬ সালে পাসের হার ছিল ৬৫ দশমিক ৬৫, ২০০৭ সালে ৬৫ দশমিক ৬০, ২০০৮ সালে ৭৬ দশমিক ১৯, ২০০৯ সালে ৭২ দশমিক ৭৮, ২০১০ সালে ৭৪ দশমিক ২৮, ২০১১ সালে ৭৫ দশমিক ০৮, ২০১২ সালে ৭৮ দশমিক ৬৭, ২০১৩ সালে ৭৪ দশমিক ৩০, ২০১৫ সালে ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এরপর ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০১৯ সালে ছিল ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।বিপর্যয়ের ক্যাটাগরি এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ধস দেখা দিয়েছে। বিগত ২০ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সর্বনিম্ন। ফেল করেছেন পাঁচ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। আবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ব্যাপক হারে কমেছে। ভয়াবহ এ ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ ছিল ইংরেজিতে ফেল হওয়ার রেকর্ড। এবার অধিকাংশ শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৬০ শতাংশের মধ্যে। শুধু ঢাকা ও বরিশাল বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে পাসের হার ৭০ শতাংশের ঘরে।প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এবছর গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অর্থাৎ ফেল করেছেন ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী। দেশের ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পাসের হার শূন্য। গত বছর শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৫টি।সরকারের প্রতিনিধিদের ভাষ্য: চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল কেন খারাপ হলো তা পর্যালোচনা করে খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটা জানান তিনি।ড. আবরার জানান, এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল অনেককেই বিস্মিত করেছে। পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কম। এর উত্তর জটিল নয় অস্বস্তিকর।তিনি বলেন, দেশের শিক্ষার মূল সংকট প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু হয়। সেই ঘাটতি বছরের পর বছর জমা হয়। দীর্ঘদিন আমরা সেই বাস্তবতার মুখোমুখি হইনি। আমরা এমন এক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছি যেখানে সংখ্যাই সত্য হয়ে উঠেছে। পাশের হার সেখানে সাফল্যের প্রতীক আর জিপিএ-৫ এর সংখ্যা তৃপ্তির মানদণ্ড।তিনি আরও বলেন, ‘ভালো’ ফলাফল দেখাতে গিয়ে আমরা অজান্তেই শেখার প্রকৃত সংকট আড়াল করেছি। সেই সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। আমি চাই, শিক্ষা ব্যবস্থা আবারও বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করুক।বৃহস্পতিবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার ব্যাপারে অনেকটাই বিমুখ। তারা অনেকটাই পড়ার টেবিল থেকে দূরে ছিলো বলে আমাদের ধারণা।’অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা খারাপ করেছে। বিশেষ করে যশোর বোর্ডে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি ফেল করেছে। সেখানে ইংরেজিতে ফেলের হার ৪৫ শতাংশের বেশি। ঢাকা ও বরিশাল ইংরেজিতে কিছুটা ভালো করলেও অন্য বোর্ডগুলোতে খারাপ করায় গড় ফলাফলে পিছিয়ে গিয়েছি আমরা।’তিনি বলেন, ‘এবার আমরা স্বাভাবিক পরীক্ষার ধারায় ফিরেছি। পূর্ণ সিলেবাস, পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে হয়তো শিক্ষার্থীরা মানিয়ে নিতে পারেনি।’তিনি আরও বলেন, ‘দেখুন, আমরা কিন্তু চাই না একজন পরীক্ষার্থীও ফেল করুক। তবে শিক্ষার মান যে তলানিতে নেমেছে; অতিরঞ্জিত যে ফলাফল বিগত বছরগুলোতে দেখানো হয়েছিল, তাতে ক্ষতি হয়ে গেছে। সেখান থেকে ফিরে আসতে তো হবে। এটা করতে গেলে কোথাও না কোথাও আপনাকে থামতেই হবে।’যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর আব্দুল মতিন বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের কিছুটা ঘাটতি ছিল। পাশাপাশি এবার শিক্ষার্থীদের খাতার যথার্থ মূল্যায়ন হয়েছে। আমরা অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বেড়িয়ে আসার কারণে পাসের হার কমেছে।বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণপরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধূরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাভাবিক ধারায় পরীক্ষা ফিরলেও স্বাভাবিক প্রস্তুতি কেন শিক্ষার্থীদের নেওয়া সম্ভব হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজতে হবে। আমি পরীক্ষার সিলেবাস, প্রশ্নপত্র, নম্বর দেওয়ার ধরন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিচ্ছি, তাহলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠদানের ধরনেও তো সেই স্বাভাবিক ধারা আনতে হবে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, সেটা করা হয়নি। সেখানে গলদ রয়েছে।’সাবেক রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারি আজিজুল হক কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস বলেন, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটেছে। তবে এর কারণ সাম্প্রতিক এক-দুই বছরের সিদ্ধান্ত বা পরিস্থিতি নয়। দীর্ঘমেয়াদে দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়। তারা সঠিক পলিসি বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এ কারণে এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় ঘটছে। সামনে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করেন।তিনি বলেন, গত দুই বছর আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা কিছুর প্রভাব পড়েছে শিক্ষায়। যেটার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলে। বর্তমানে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ক্লাস ঠিকমতো নেন না। সরকারি কলেজেও চলছে স্বেচ্ছাচারিতা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আগের সময়ে সম্ভবত খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয় নির্দেশনা ছিল, যার ফলে ভালো ফলাফল দেখা গিয়েছিল। তেমন নির্দেশনা থাকলে তা জাতির জন্য ক্ষতিকর ছিল। আগে অনেকেই ৩০ বা ৩১ নম্বর পেলে বিশেষ বিবেচনায় পাশ করিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল, ফলে পাশের হার বেশি হতো। এখন যে ফলাফল এসেছে, সেটাই বাস্তব ফল। তবে পাশের হারে এত বড় পার্থক্যের কারণ নিয়ে গবেষণা করা জরুরি।রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপক দাস বলেন, গত দুই বছরের আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা ঘটনার প্রভাব পড়েছে শিক্ষায়। তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে এইচএসসির ফলাফলে। এছাড়া বর্তমানে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা ঠিকভাবে ক্লাস নেন না, আর সরকারি কলেজে স্বেচ্ছাচারিতার কারণে পড়াশোনার মান কমে গেছে। এসবের সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে এইচএসসির ফলাফলে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার কমলেও প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম। বৃহস্পতিবার এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকার এ বছর চেয়েছে, যেন মেধার মূল্যায়ন হয়। তাই প্রশ্ন ও খাতা দেখার ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। যার ফলে সামগ্রিক ফলাফল খারাপ হলেও প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হয়েছে। প্রশ্নের ধরন বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে, আগে থেকে জানালে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে আরও সহজ হতো। এ সময় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান তিনি।ফলাফল নিয়ে খুশি বলে জানিয়েছেন নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও। তিনি বলেন, ‘আমাদের রেজাল্ট অন্যান্য বছরের মতো এবারও বেশ ভালো হয়েছে। এবার পাসের হার কম, এর প্রভাব কমবেশি সব কলেজেই পড়বে। আমাদের কলেজে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। আমাদের কলেজের আট জন শিক্ষার্থী অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।’ভোরের আকাশ/এসএইচ