দুই ঘণ্টার ফোনালাপে পুতিন-ট্রাম্প, যুদ্ধবিরতির আশায় তাকিয়ে বিশ্ব
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে এবার সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি দুই দেশের নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছেন যুদ্ধ বন্ধে।
এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার (১৯ মে) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ করেন ট্রাম্প। আলোচিত এই ফোনালাপ ঘিরে এখন প্রশ্ন— যুদ্ধ কি তবে থামবে?
ফোনালাপের বিষয়টি আগেই জানিয়েছিলেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। পরে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করে জানায়, ট্রাম্প ওয়াশিংটন থেকে এবং পুতিন রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্থিত সোচি থেকে আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ ও সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর শান্তি আলোচনায় প্রস্তুতির কথা জানান পুতিন। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তির দিকে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। এর জন্য সবচেয়ে কার্যকর পথ নির্ধারণ করতে হবে।’
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের ঠিক একদিন আগেই তুরস্কের ইস্তানবুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল সরাসরি বৈঠকে বসে। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর এটি ছিল তাদের মধ্যে প্রথম সম্মুখ আলোচনা। যদিও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সেদিন কোনো অগ্রগতি হয়নি, তবে দুই পক্ষই প্রায় ১ হাজার বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়।
ফোনালাপের আগে ট্রাম্প কাতারে সফরের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “আমি ও পুতিন একসঙ্গে না বসলে কিছুই সম্ভব নয়।” এরপর থেকেই এই ফোনালাপ ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আশার সঞ্চার হয়।
তবে যুদ্ধবিরতির পথে এখনো জটিলতা রয়ে গেছে। ইউক্রেন ৩০ দিনের শর্তহীন যুদ্ধবিরতি চাইলেও, রাশিয়ার উদ্বেগ— ইউক্রেন এই সময়টিকে সামরিক প্রস্তুতি ও অস্ত্র মজুতে কাজে লাগাতে পারে।
অন্যদিকে, রাশিয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানায়, যা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি নন।
ওয়াশিংটন থেকে জানানো হয়েছে, যদি আলোচনায় অগ্রগতি না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এমনকি যুদ্ধ থামানোর কূটনৈতিক চেষ্টা ব্যর্থ হলে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে এই সংঘাত থেকে সরিয়ে নিতেও বাধ্য হতে পারে, বলছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ভোরের আকাশ//হ.র
সংশ্লিষ্ট
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে বিপর্যস্ত সুদানে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান ও কার্যত শাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। সোমবার (১৯ মে) অন্তর্বর্তীকালীন সেনাশাসিত সার্বভৌম পরিষদের এক ঘোষণায় বিষয়টি জানানো হয়।ঘোষণায় বলা হয়, জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা কামিল আল-তায়েব ইদরিসকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে তিনি জাতিসংঘের বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার (WIPO) মহাপরিচালক এবং সুদানের জাতিসংঘ মিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি তৎকালীন শাসক ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন।২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সেনাপ্রধান বুরহানের বাহিনীর সঙ্গে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতে এখন পর্যন্ত লাখো মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। জাতিসংঘ এই সংকটকে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।নতুন প্রধানমন্ত্রী ইদরিস দায়িত্ব নিচ্ছেন দাফাল্লাহ আল-হাজ আলির স্থলাভিষিক্ত হিসেবে, যিনি মাত্র তিন সপ্তাহ ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।বুরহান এর আগে জানিয়েছিলেন, তিনি একটি যুদ্ধকালীন টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করতে চান, যা ‘বিদ্রোহীদের কবল থেকে সুদানকে মুক্ত করতে’ সহায়ক হবে। অপরদিকে, আরএসএফ ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী একটি সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে এবং কেনিয়ায় সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।সর্বশেষ এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে সুদান স্থায়ীভাবে বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী উত্তর, পূর্ব ও কেন্দ্রীয় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে; অন্যদিকে দারফুর ও দক্ষিণের অংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আরএসএফ ও তাদের মিত্রদের হাতে।ভোরের আকাশ//হ.র
ভারতীয় একাধিক ভ্রমণ সংস্থার মালিক, প্রধান নির্বাহী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অভিযোগ, এসব সংস্থা সচেতনভাবে অবৈধ অভিবাসনে সহায়তা করেছে।সোমবার (১৯ মে) এক বিবৃতিতে এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো প্রতিদিনই অবৈধ অভিবাসন, মানবপাচার এবং সংশ্লিষ্টদের শনাক্তে কাজ করছে। এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশে সহায়তাকারীদেরও চিহ্নিত করা হচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, “যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের কার্যক্রমে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এমন মানবপাচার চক্র ভাঙতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।”বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির মূল উদ্দেশ্য শুধু অবৈধ প্রবেশকারীদের সতর্ক করাই নয়, বরং যারা এই প্রবেশে সহায়তা করছে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা। আইনের শাসন এবং নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য এ নীতির বাস্তবায়ন জরুরি।”উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য নয়, বরং যারা সাধারণত ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় পড়েন, তারাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে হাজারো অবৈধ অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। কিছুদিন আগে একাধিক ভারতীয়কে হাতে ও কোমরে রশি বেঁধে বিমানে করে ভারতে ফেরত পাঠানোর ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়াভোরের আকাশ//হ.র
পারমাণবিক আলোচনার অগ্রগতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই অভিযোগ করেছেন, প্রতিবারের আলোচনায় ওয়াশিংটনের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে আলোচনা দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং পারস্পরিক আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।সোমবার (১৯ মে) আল মায়াদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাঘাই বলেন, “যতদিন পারস্পরিক বিরোধিতা এবং অবস্থান পরিবর্তন চলতে থাকবে, ততদিন আলোচনা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে আস্থার পরিবেশ তৈরি করাও অসম্ভব।”তিনি আরও বলেন, “ইরান দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও চাপ মোকাবিলা করেই আলোচনায় অংশ নিয়েছে। তবে ওয়াশিংটন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করতে চায় কেন—তা বোঝার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই।”বাঘাই অভিযোগ করেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা ক্রমেই কূটনীতিবিরোধী দলের চাপে নতি স্বীকার করছেন, যাদের অবস্থানের মূল ভিত্তি ইসরায়েলি দখলদারিত্ব। এই শক্তি শান্তি ও সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে এবং অঞ্চলে টানাপড়েন ধরে রাখার জন্য সচেষ্ট।”তেহরানের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিকারের সমঝোতা চায়, তবে তাকে অবশ্যই আন্তরিকতা ও স্থিতিশীল অবস্থান দেখাতে হবে।সূত্র: আল মায়াদিনভোরের আকাশ//হ.র
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে প্রাণ হারানোদের পরিবারের সদস্যসহ এক হাজার ফিলিস্তিনিকে বিনামূল্যে হজ পালনের সুযোগ দিচ্ছে সৌদি আরব। দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের নির্দেশনায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।সোমবার (১৯ মে) খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে নির্বাচিত হজযাত্রীরা এই সুবিধা পাবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলি হামলায় আহতদের পরিবার, নিহতদের স্বজন, এবং ইসরায়েলের কারাগারে আটক ব্যক্তিদের নিকটজনরাও।এই হজ কার্যক্রমের আওতায় ফিলিস্তিনি হজযাত্রীরা পাবেন বিশেষ ভিসা, পাশাপাশি ফ্লাইট, আবাসন, খাবারসহ সব ধরনের ব্যয়ভার বহন করবে সৌদি সরকার। হজযাত্রা শুরুর প্রথম মুহূর্ত থেকে সৌদি আরব হাজিদের জন্য বিশেষ তদারকি নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।এক ফিলিস্তিনি নাগরিক জানান, “এই হজ আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহা দয়া। যুদ্ধে স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। এই সুযোগ আমাদের কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিয়েছে।”সৌদি আরবের এই উদ্যোগকে হামাস ও ফাতাহ উভয়েই স্বাগত জানালেও, ইসরায়েলি মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির মন্তব্য করেছেন, “সৌদি আরব সন্ত্রাসীদের পুরস্কৃত করছে।”বিশ্লেষকদের মতে, এটি একদিকে যেমন মানবিক সংহতির নিদর্শন, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি প্রভাব বিস্তারের কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে।তবে, হজে অংশগ্রহণে বেশ কিছু বাস্তব সংকটও সামনে এসেছে। গাজার অবরোধ এবং ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে রাফাহ সীমান্ত পাড়ি দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে অনেক ফিলিস্তিনির জন্য। এ ছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত বহু পরিবার তাদের বাসস্থান, পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হারিয়েছে, যা হজ যাত্রার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে— আসলে এই ফিলিস্তিনিরা আদৌ হজে যেতে পারবেন কিনা।এই উদ্যোগ সৌদি আরবের “গড’স গেস্টস” প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালে দেশটি ২,০০০ ইউক্রেনীয় শরণার্থী এবং গত বছর কাশ্মিরি কিছু পরিবারকে বিনামূল্যে হজের সুযোগ দিয়েছিল।ভোরের আকাশ//হ.র