মাজাহারুল ইসলাম
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:০৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত
আর মাত্র ৪৩ দিন পরই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য গতকালই ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমার দেওয়ার শেষ দিন। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ সব রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, মনোনয়ন দাখিলের মধ্যদিয়ে দেশজুড়ে এখন নির্বাচনের আমেজ ও উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনী জোয়ারে মুখরিত গোটাদেশ-এমনটাই বলছেন রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের মানুষ যে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, সেই অধিকার ফিরে পেতে ১৮ কোটি মানুষ নির্বাচনের দিনটির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনটি হবে দেশে গণতন্ত্রণ উত্তোরণের দিন। একটি ফ্যাসিবাদী সরকার বাংলাদেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসেছিল। যার মাধ্যমে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নিয়েছিল। জনগণের ইচ্ছায়, সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে যখন একটি জবাবদিহি সরকার গঠন হবে তখন দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে- এমনটাই মনে করছেন তারা। সারা দেশে নির্বাচনের জোয়ারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতিহাসের একটি সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কাজেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টাসহ সবাই দিনরাত কাজ করছেন বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ ভোট প্রত্যাশা করছেন রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সকল ধর্মের মানুষদের নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই।
তিনি বলেন, অনেকেই বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা অতীতেও কোন বিভেদ করিনি, সামনেও করবো না।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যবশত গত ১৫ বছরে বিভাজনের রাজনীতি করা হয়েছে। বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা সেই জায়গা থেকে উঠে আসতে চাই। ন্যায়ের সাথে সামনে আমাদের কাজ করতে হবে।
মহাসচিব বলেন, আমরা ২৪ এর আন্দোলনে অনেক তাজা প্রাণ হারিয়েছি। এই যে এত যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি সুন্দর সমাজের জন্য। দুর্নীতিকে বাদ দিয়ে আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, নিজের ধর্মের প্রতি যেমন আমরা আনুগত্য প্রকাশ করি। ঠিক একইভাবে অন্যের ধর্মের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এবারের নির্বাচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে সত্যিকার অর্থে উদারপন্থী একটি গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠা করার। যেখানে নারী-পুরুষ সকলের সমমর্যাদা থাকবে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে মিলে যেন আমরা সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের মানুষ যে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল সেই অধিকার ফিরে পেতে ১৮ কোটি মানুষ নির্বাচনের দিনটির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি নির্বাচনটি হবে দেশে গণতন্ত্রণ উত্তোরণের দিন।
মঈন খান বলেন, একটি ফ্যাসিবাদী সরকার বাংলাদেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসেছিল। যার মাধ্যমে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নিয়েছিল।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি উদার রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি সবসময় মানুষের অধিকারে বিশ্বাসি। জনগণের ইচ্ছায়, সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে যখন একটি জবাবদিহি সরকার গঠন হবে তখন দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র রক্ষা এবং ভোটের অধিকার স্থায়ী করতে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য শুধু দোয়া নয়, আপনারা দয়া করে আমার জন্য এবং আপনাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও এদেশে ভোটের অধিকার পারমানেন্টলি প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন, আপনারাও জয়যুক্ত হবেন।
নেতাকর্মী ও জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আজকে আপনাদের অনুমতি নিয়েই আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করবো। যেহেতু কুমিল্লার মধ্যে আমার আসনটির নাম্বার এক, আমার বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে আপনাদের সকলের প্রচেষ্টায় ভোটের মাধ্যমে কুমিল্লা-১ এ যদি আমাকে এক নাম্বার করতে পারেন, আমার বিশ্বাস আমাকে হয়তো আপনাদের কাছে আল্লাহতালা এবং আমার দল দেশের একনাম্বার করে পাঠাবেন ইনশাআল্লাহ। এবারের নির্বাচন কিন্তু শুধু ভোটের ভোট দিচ্ছি না, দেশের পরিবর্তনের জন্য বিশাল ভূমিকা এই নির্বাচনে আমাদেরকে রাখতে হবে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছি। গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে পাওয়ার দিকে যাচ্ছি। এটার জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করা হয়েছে, এটা বৃথা যেতে দিতে পারি না। এখান থেকে যদি কোনো ব্যতয় ঘটে, তাহলে তাদের প্রতি অন্যায়-অবিচার করা হবে। সুতরাং সবাইকে জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে। তাদের ওপর আস্থা রেখে তাদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীর বাংলাদেশ চলতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তার নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার করবে, যে সরকার ও সংসদ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর গুরুত্বারোপ করে বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য আমীর খসরু বলেন, অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে, দ্বিমত পোষণ করলেও তার মতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে হবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জোট গঠন প্রসঙ্গে বিএনপির এ নেতা বলেন, সবার একটা অধিকার আছে, একটা কৌশল আছে-তারা কীভাবে নির্বাচনে যাবে। সুতরাং, এটা সকলের অধিকার এটাকে আমরা স্বাগত জানায়। বাংলাদেশের মানুষ দিনের শেষে সিদ্ধান্ত নেবে-কাদের মাধ্যমে বিগত দিনে এ দেশে গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এবার সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় জনগণ। দীর্ঘদিন পর ভোট দেওয়ার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে আছে। আমরা সারা দেশের আসন নিয়ে খুব আশাবাদী। জনগণ যদি ঠিকমতো ভোট দিতে পারে তাহলে হবিগঞ্জ-১ আসনেও আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, এবার দীর্ঘদিন পর মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে। ইনশাআল্লাহ বিএনপি এবার সরকার গঠন করবে। প্রশাসন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এবারের নির্বাচন সম্পন্ন করবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন তিনি।
ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি বলেন, শেষ দিনে আমরা আমিরের পক্ষ থেকে উনার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন যাতে উপহার পারি, সেই প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে যাতে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে পারি তার প্রত্যাশা করছি। এটা নিয়ে আরও কাজ করার আছে। আমরা আশা করছি, নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে কাজ করবে। ঢাকা-১৩ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তরের জয়েন্ট সেক্রেটারি মুরাদ হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, যথাসময় নির্বাচন হবে। কিন্তু সারা বাংলাদেশের জনগণই নিরাপত্তার হুমকিতে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রার্থী রয়েছি, তারাও এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আশা করব, সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অতি দ্রুত আমাদের সামনে দৃশ্যমান করবেন এবং মানুষের নিরাপত্তাও তারা নিশ্চিত করবেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১১ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এ সময় নেতাকর্মী ও বিশেষ করে নারী কর্মীদের অবর্ণনীয় ত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
এ সময় তিনি বলেন, একটি ইনসাফের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই। ফ্যাসিবাদের কারণে দীর্ঘ ১৭ বছরে আমাদের মানবিক অধিকার বঞ্চিত হয়েছে, গণতন্ত্র লুণ্ঠিত হয়েছে সে জায়গা থেকে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি, একই সঙ্গে ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে সেটি যেন সর্বজনীনতা পায়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ